Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মডেলিং থেকে বড় পরদায় পাড়ি দিচ্ছেন বাঙালি মডেলরা

মডেলিং জগতের পরিচিত মুখ সৌরসেনী, রোজা, রিয়া ও দর্শনা। কাজ করছেন ছবিতেও। তাঁদের সঙ্গে আড্ডায় আনন্দ প্লাস মডেলিং জগতের পরিচিত মুখ সৌরসেনী, রোজা, রিয়া ও দর্শনা। কাজ করছেন ছবিতেও। তাঁদের সঙ্গে আড্ডায় আনন্দ প্লাস

সৌরসেনী মৈত্র, রিয়া বণিক এবং দর্শনা বণিক।

সৌরসেনী মৈত্র, রিয়া বণিক এবং দর্শনা বণিক।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ ও পারমিতা সাহা
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৭ ০২:০৫
Share: Save:

সৌরসেনী মৈত্র

স্কুল ছুটির পর কিংবা ভেকেশনের সময় মাঝেমধ্যেই শ্যুটের জন্য সৌরসেনীর ডাক পড়ত খুদে মডেল হিসেবে। ‘‘আমি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পছন্দ করতাম। মা-বাবার সাপোর্ট ছিল পুরোপুরি। তাই কেরিয়ার হিসেবে মডেলিং বেছে নিতে অসুবিধে হয়নি!’’ ফোনের ও প্রান্ত থেকে বললেন সৌরসেনী। তবে মডেলিং করেছেন বলে পড়াশোনা বাদ যায়নি। শিবনাথ শাস্ত্রী কলেজ থেকে ইংলিশে অনার্স নিয়ে পাশ করেছেন। ‘‘তা না হলে বাড়ি থেকে বের করে দিত,’’ হাসতে-হাসতে বললেন তিনি। মডেলিংয়ের সুবাদেই ক্লাস এইটে পড়তে পড়তে, হিন্দি ছবি ‘চিটাগং’-এ অভিনয়ের সুযোগ। তার পর ‘অমরিকা’ বলে আর একটি হিন্দি ছবি। এ ভাবেই টুকটাক কাজ করতে করতে সুযোগ মেলে ন্যাশনাল লেভেলের এক বিজ্ঞাপনে দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে কাজ করার। ‘‘ওকে প্রথমবার দেখে শুধু বলতে পেরেছিলাম, ম্যাম আই লভ ইউ! উনি এবং ইউনিটের সকলে এত ভাল ছিল যে, মনেই হয়নি আমি নিউকামার।’’ সেই মুগ্ধতা থেকে বেরিয়ে এসে সৌরসেনী এখন ব্যস্ত দুটো বড় প্রজেক্ট ‘মেঘনাদবধ রহস্য’ ও ‘মাছের ঝোল’-এর মুক্তি নিয়ে। দর্শকের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা নিয়ে বেশ চিন্তায় তিনি। তবে জানেন, তিনি পরিশ্রমী। ভাগ্য যদি সঙ্গে থাকে এগিয়ে যাবেনই।

রোজা

একটা সুযোগের জন্য কাউকে অপেক্ষা করতে হয় বহুদিন, আবার কারও কাছে সে সুযোগ আসে বিনা আয়াসে। রোজা এই দ্বিতীয় দলেই পড়েন। ছোট ছোট আনন্দে খুশি থাকা, দিদির সঙ্গে সিক্রেট ভাগ করে নেওয়া উত্তর কলকাতার এই মেয়েটির কাছে হঠাৎই খুলে গিয়েছিল ঝাঁ চকচকে গ্ল্যামার দুনিয়ার দরজা! আদিত্য বিড়লা অ্যাকাডেমির ছাত্রী রোজা নাচ-গানে পারদর্শিতার জন্য স্কুলে বরাবরই জনপ্রিয় ছিলেন। তার পর হঠাৎ করেই ‘১৯ ২০ ফ্রেশ ফেস’-এ নাম দেওয়া এবং বিজয়ীর শিরোপা! তার পরও সাইকোলজি অনার্সের পড়া, কলেজে প্রোগ্রাম করা চলছিল। সঙ্গে ১৯ ২০, সানন্দায় টুকটাক মডেলিং। ‘‘আমার পরিবারের কাছে ছবি বেরোনোটাই বিরাট ব্যাপার ছিল। তখন এক পরিচিত ১৯ ২০ গ্ল্যাম হান্টে আমার ছবি পাঠিয়ে দেয়। আসলে সেভাবে কোনও দিন মডেল হতে চাইনি। তখন তো সাইকলজিস্ট হওয়ার ইচ্ছে ছিল...’’ কিন্তু তাঁর ডেস্টিনি ছিল অন্য। গ্ল্যাম হান্টেও উইনার হন রোজা। তার পর থেকে নানা ম্যাগাজিনে শ্যুট, বিজ্ঞাপন... মডেলিং দুনিয়ায় রীতিমতো পরিচিত মুখ। হঠাৎই সুযোগ মেলে ‘কাটমুন্ডু’তে অভিনয়ের। পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর কাছেও তাঁর ছবি পাঠান এক বন্ধু। তার পর রাজের ফোনে মুম্বইয়ের কাজ বাতিল করে বড় পরদায় ডেবিউ। এখন শ্যুটিং করছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘ককপিট’-এর। রোজার কথায়, ‘‘আমার জীবনে সবকিছুই হয়েছে হুট করে। এখনও অপেক্ষায় আছি, আবার দুম করে কবে একটা বিরাট সুযোগ আসবে।’’

রোজা।—ফাইল চিত্র।

রিয়া বণিক

মডেলিং থেকে অভিনয়ে আসাটা খুব স্বাভাবিক। অনেকের কাছে মডেলিং অভিনয়ের প্রথম ধাপ। সানন্দা তিলোত্তমা থেকে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন রিয়া বণিক। এখন বেশ কয়েকটি সংস্থার প্রচারের মুখ তিনি। তবে বেশি আগ্রহ অভিনয়ের প্রতিই। বললেন, ‘‘এখন সিনেমাতেই মন দিতে চাই। ‘ঈগলের চোখ’ করতে গিয়ে বুঝলাম, আমার আসল আগ্রহ ছবিই।’’

বাংলা ধারাবাহিক ‘মায়ার বাঁধন’-এও কাজ করছেন তিনি। এই সফর কেমন লাগছে? ‘‘মেগার চাপটা বেশি। তাই প্রথম দিকে মানিয়ে নিতে অসুবিধে হচ্ছিল। এখন অনেকটা ধাতস্থ,’’ বলছিলেন রিয়া।

আরও পড়ুন: বোম্বেটে বাচ্চারা

নব নালন্দা আর লেক পয়েন্ট স্কুলে পড়াশোনা রিয়ার। এখন ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি কলেজের ছাত্রী। এই মুহূর্তে অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত। আর প্রেম? ‘‘প্রেম ছিল, কিন্তু টেকেনি। এখন সিঙ্গল,’’ জবাব রিয়ার।

মেয়ের এই জার্নিতে মা পাশে আছেন। তবে বাবা একেবারেই বিপরীত মেরুতে। ‘‘বাবার সঙ্গে এই নিয়ে আমার ঝামেলা। তাই এখন গোলপার্কের বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় মা’কে নিয়ে থাকছি,’’ বললেন রিয়া। বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করেননি? তাঁর কথায়, ‘‘করেছিলাম কিন্তু বাবা বেশ অবুঝ। আমি যেটা করতে ভালবাসি সেটাই করব, তাই না!’’

দর্শনা বণিক

রাস্তায় আকছার তাঁর হোর্ডিং দেখা যায়। একাধিক নামী সংস্থার বিজ্ঞাপনের মুখ তিনি। এই মুহূর্তে কলকাতার প্রথম সারির মডেলদের মধ্যে দর্শনা বণিক অন্যতম। তবে তাঁর এ সবে হেলদোল নেই। বন্ধু-আত্মীয়স্বজনেরা তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত হলেও দর্শনার প্রতিক্রিয়া, ‘‘কী এমন করলাম!’’

আপনি নিস্পৃহ নাকি বিনয়ী? হেসে বললেন, ‘‘কোনওটাই নই। আমি আসলে বড্ড ইন্ট্রোভার্ট।’’ মডেলিংয়ের মতো পেশায় ইন্ট্রোভার্ট হলে তো মুশকিল! ‘‘এখানে আমাকে সকলেই চেনেন। তাই সমস্যা হয় না। কিন্তু টিভিতে বা হোর্ডিংয়ে দেখা যাচ্ছে মানেই দারুণ কিছু করে ফেললাম এমন নয়। বরং প্রথম দিকে একটু লজ্জাই পেতাম,’’ স্বীকারোক্তি দর্শনার। সল্টলেকের বাড়িতে বাবা-দাদা-বউদির সঙ্গে থাকেন। মা মারা গিয়েছেন। বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্কুল তার পর ইস্ট ক্যালকাটা গার্লস কলেজে পড়াশোনা। কলেজের তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় বন্ধুদের জোরাজুরিতে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছিলেন দর্শনা। সেই থেকেই শুরু। প্রথমে মডেলিং নিয়ে সিরিয়াস ছিলেন না। উৎসাহ জুগিয়েছিলেন দর্শনার বাবা। ‘‘আমি তো পিয়ন হতে চাইতাম, কখনও কনডাক্টর কখনও টিচার। মডেল হব ভাবিনি,’’ হাসতে হাসতে বললেন দর্শনা। এই পেশায় এসে নিজেকে ক্রমশ গ্রুম করেছেন। ‘‘আগে চট করে রেগে যেতাম। এখন অনেক ঠান্ডা হয়েছি,’’ বলছিলেন তিনি। রাগারাগিটা কি বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গেই বেশি হতো? বাঁধাগতের জবাব এল, ‘‘বিশ্বাস করুন, আমি সিঙ্গল।’’

প্রথম দিকে পকেট মানির জন্যই কাজ করতেন। এখন কাজটা ভালবেসে ফেলেছেন। ম়়ডেলিং থেকে অভিনয়ের দিকে ঝুঁকেছেন দর্শনা। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘ক্ষত’, ‘মুখোমুখি’তে কাজ করেছেন। ‘জোজো’ নামের একটি থ্রিলার ছবিও করছেন। তা হলে কি এ বার মডেলিং থেকে সিনেমাতেই মনঃসং‌যোগ করতে চান? দর্শনার কথায়, ‘‘ফিল্মে আগ্রহী। তবে মডেলিংও ছাড়ছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE