Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পরিচালকের ভাবনার শরিক হবেন দর্শক

আমাদের জগৎটা বড় ফেসবুকময়। দূরের মানুষকে অনেকখানি চিনে ফেলার আর কাছের মানুষকে অপরিচিত বানিয়ে ফেলার একটা রহস্যময় খেলার মাঠ এই ফেসবুক।

ছবির দৃশ্য

ছবির দৃশ্য

অন্তরা মজুমদার
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০৪
Share: Save:

তারি‌খ
পরিচালনা: চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়
অভিনয়: শাশ্বত, ঋত্বিক, রাইমা
৭/১০

কয়েকটা অনুভূতি বা উপলব্ধিকে পরপর সাজিয়ে সিনেমা বানিয়ে ফেলা সহজ কথা নয়। দর্শককে সেই অনুভূতি বা উপলব্ধিগুলোর শরিক বানিয়ে ফেলাটাই কঠিন। আর এই কঠিন কাজটার অনায়াস রিপ্রেজ়েন্টেশনের নাম ‘তারিখ’। চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচালনা।

আমাদের জগৎটা বড় ফেসবুকময়। দূরের মানুষকে অনেকখানি চিনে ফেলার আর কাছের মানুষকে অপরিচিত বানিয়ে ফেলার একটা রহস্যময় খেলার মাঠ এই ফেসবুক। কিন্তু এই ফেসবুকের ডায়েরিতেই তো টুকরো টুকরো করে রোজকার যাপনের চিত্র আঁকি আমরা। ঘটনা, রিয়্যালাইজ়েশন, প্রতিবাদ, স্বগতোক্তি, হতাশা, কান্না, সেলফি, সেলিব্রেশন— একটা মানুষের গোটা বেঁচে থাকাটাই ফেসবুকের টাইমলাইনে টাঙিয়ে রাখা যায়!

কিন্তু মানুষটা চলে গেলে কি হড়কে যায় তার সেই সাজানো জীবনের মানচিত্রে রাখা পা দু’খানা? তখন কি স্ক্রোল ব্যাক করে, হাতড়ে, ঘেঁটে বার করে আনতে পারি মৃত মানুষটার ভিতরের তোলপাড়ানির গান? মানুষটাকে বুঝতে পারি? নাকি ভার্চুয়ালি সেই অস্তিত্বের বোঝা টেনেই চলতে থাকে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া? এ রকম কিছু ‘ভেবে দেখা’কে মনের ভিতর নাড়িয়ে-চাড়িয়ে দিলেন চূর্ণী।

এ ছবিতে গল্পটাই কিন্তু সব নয়। গল্প বলতে তেমন কিছু নেইও। অনির্বাণ (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) কলেজের অধ্যাপক। সাহিত্য-দর্শন-কমিউনিজ়ম নিয়ে ডুবে থাকা একটা মানুষ। ছাত্রছাত্রীদের মধ্য দিয়ে পৃথিবীটাকে বদলানোর স্বপ্ন দেখেছিল সে। নিজে পারেনি। কিচ্ছু পাল্টাতে পারেনি। শপিং, সংসার, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে মেতে থাকা সুন্দরী স্ত্রী ইরাকেও (রাইমা সেন) না। পুঁজিবাদী চাওয়া-পাওয়ায় জড়িয়ে পড়ে অবসাদ হয় তার। ইরা আবার সাধারণ, স্বতঃস্ফূর্ত এক মেয়ে। দুনিয়া নিয়ে তার বিশেষ মাথাব্যথা নেই। নিজের সাজানো সংসারটুকু, ভালবাসাটুকু, মায়া জড়ানো ঘরের কোণটুকু নিয়েই তার থেকে যাওয়ার ইচ্ছে। রুদ্র (ঋত্বিক) এই দু’জনেরই বন্ধু। ট্র্যাভেল কোম্পানির মালিক সে। ইরার প্রতি তীব্র ভালবাসা রয়েছে তার। অনির্বাণ আর ইরার সাজানো সং‌সার দেখে ‘হিংসে’ হয় তার, তবে সেই হিংসেতে কোনও ‘ঈর্ষা’ নেই। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, ছবিতে ঘটনার তুলনায় সংলাপে বেশ মুনশিয়ানার সঙ্গে চরিত্রদের মনের ভিতরের গতি, দোলাচল, ওঠাপড়া ধরা পড়েছে। এবং যাঁদের ঠোঁটে সেই স‌ংলাপ বসানো হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই তুখড় পারফর্মার। ফলে সাধারণ একটা গল্পও উড়ানের পথ খুঁজে পেয়েছে। কিছু সংলাপে অতিনাটকীয়তা রয়েছে অবশ্য। ছাত্রদের গিটার সঙ্গতে গানের দৃশ্যের পুনরাবৃত্তিও ঝাঁকুনি দেয়।

তবে অনেক দিন পরে বাংলা ছবিতে ক্যামেরার কাজ চোখ টেনে রাখল পর্দায়। চরিত্র, পারিপার্শ্বিক, পরিপ্রেক্ষিত সব কিছুকে গোপী ভগতের ক্যামেরা ধাওয়া করে মগজে পুরে দেয়। ঝিম ধরে যায় শেষটায়! রাজা নারায়ণ দেবের সঙ্গীতও যথাযথ। বিশেষ করে ‘সাগরকুলের নাইয়া’ এবং ‘মনে ভাবনা শুধু’র মতো গানগুলোর ব্যবহার মনে রাখার মতো। এই ভাবনাটাই তো সম্বল মানুষের, বাকি সবটুকু এই ডিসটোপিয়ান সমাজে নিথর হয়ে গেলেও...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tarikh Movie Tollywood Bangla Movie
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE