Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাঙ্গীতিক স্মৃতিকথা

বরেন্দ্রনাথ বসু, নীরদ মজুমদার, কমল(কুমার) মজুমদার ও নরেন্দ্রনাথ মল্লিক— চার অভিন্নহৃদয় বন্ধু নিজেদের নামের আদ্যক্ষর মিলিয়ে তৈরি করলেন ‘বনীকন’ নামে শিল্পসংস্কৃতির চর্চাকেন্দ্র (১৯৩৭)।

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০০:৪৯
Share: Save:

সুরের সন্ধানে

অমিয়নাথ সান্যাল
৬৫০.০০, ধ্রুবপদ প্রকাশনী

‘‘পরম আদর্শবাদী, কঠোর নিয়মনিষ্ঠ, সংগীতে নিবেদিত প্রাণ, অধ্যবসায়ী গবেষক, বিষয়ে অনাসক্ত, আশয়ে অনুরক্ত, ক্রোধে অন্ধ, বিতর্কে পারদর্শী, পরিচিত ও বন্ধুজনের কাছে মেজাজী কিন্তু বন্ধুবৎসল, অল্প পরিচিতদের কাছে ছিটগ্রস্ত— সব মিলিয়ে এক জটিল অথচ বিশাল ব্যক্তিত্ব— এই ছিলেন অমিয়নাথ সান্যাল, আমার বাবা।’’ লিখছেন অমিয়নাথ-পুত্র সচ্চিদানন্দ সান্যাল। স্মৃতির অতলে নামক সাঙ্গীতিক স্মৃতিকথার লেখক হিসেবেই অমিয়নাথ (১৮৯৫-১৯৭৮) সুপরিচিত, কিন্তু তিনি নিজেও ছিলেন খুবই বড় মাপের গুণী শিল্পী— খলিফা বদল খান, বিশ্বনাথ রাও, শ্যামলাল ক্ষেত্রীর কাছে তাঁর শিক্ষা। পরে তিনি ভারতীয় সঙ্গীতের মর্মকথা অনুসন্ধানে মগ্ন হন, কিন্তু দুঃখের বিষয়, তাঁর মহাগ্রন্থ রাগাজ় অ্যান্ড রাগিণীজ় পূর্ণাঙ্গ আকারে প্রকাশ পায়নি, আর মিউজ়িক অব আলাপ প্রকাশের কাজ মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর স্মৃতির অতলে সম্প্রতি আনন্দ পাবলিশার্স থেকে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে, এ বার ‘গুরুজির বৈঠকে’র মতো অসামান্য স্মৃতিকথা, সঙ্গীত বিষয়ক বেশ ক’টি বাংলা ও ইংরেজি প্রবন্ধ পত্রপত্রিকার পাতা থেকে সংগ্রহ করে এই সঙ্কলনে গ্রন্থিত করলেন অনির্বাণ রায়। আছে খেয়াল ঠুম্‌রির কথা, তানসেন কি ভীষ্মদেবের প্রসঙ্গ। পরিশিষ্টে যুক্ত হয়েছে অমিয়নাথকে নিয়ে সচ্চিদানন্দ ও নারায়ণ সান্যাল, সুরেশ চক্রবর্তী, গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য, দিলীপকুমার বিশ্বাস ও সুধীর চক্রবর্তীর আলোচনা। খুবই জরুরি উদ্যোগ।

কমল(কুমার) মজুমদার ও বিলুপ্ত ‘উষ্ণীষ’ পত্রিকা

জ্যোতিপ্রসাদ রায়
৩০০.০০, দরগা রোড

৮এ রামময় রোড, ভবানীপুর। মজুমদারদের ভাড়াবাড়ি। বরেন্দ্রনাথ বসু, নীরদ মজুমদার, কমল(কুমার) মজুমদার ও নরেন্দ্রনাথ মল্লিক— চার অভিন্নহৃদয় বন্ধু নিজেদের নামের আদ্যক্ষর মিলিয়ে তৈরি করলেন ‘বনীকন’ নামে শিল্পসংস্কৃতির চর্চাকেন্দ্র (১৯৩৭)। নিয়মিত আসতেন সুভো ঠাকুর, গোপাল ঘোষের মতো রসিকজন। ১৩৪৪ বঙ্গাব্দের ভাদ্রে প্রকাশ পেল ওঁদের মুখপত্র ‘উষ্ণীষ’ পত্রিকা। প্রচ্ছদ-অলঙ্করণে নীরদ মজুমদার ও নরেন্দ্রনাথ মল্লিক, সম্পাদনায় কমল মজুমদার ও বরেন বসু। চৈত্র মাসে প্রকাশিত হয় পঞ্চম তথা শেষ সংখ্যা। পাঁচটি সংখ্যায় কমল মজুমদার নামে কমলকুমার লেখেন ‘লাল জুতো’, ‘প্রিনসেস্‌’, ‘মধু’, ‘মহামানবের জন্ম’ ও ‘সমাহিত’ গল্পক’টি। ছদ্মনামে লেখেন আরও তিনটি। ‘কনুদেব’ ছদ্মনামে বৈষ্ণব পদাবলির আঙ্গিকে তিনটি কবিতাও লেখেন। এ ছাড়া প্রথম সংখ্যাতেই ছিল তাঁর অনুলিখিত শরৎচন্দ্রের শেষ সাক্ষাৎকার। কমলকুমারের সাহিত্যজীবনের সূচনাপর্বের এই নমুনাগুলি তাঁকে বোঝার জন্য নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ‘উষ্ণীষ’ পত্রিকার পাঁচটি সংখ্যা সুদুর্লভ হওয়ায় এ নিয়ে গবেষকমহলে নানা ভুল তথ্য প্রচলিত ছিল। সংখ্যাগুলি স্বচক্ষে দেখে জ্যোতিপ্রসাদ রায় বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, পত্রিকার সামগ্রিক সূচি সঙ্কলন করেছেন, পরিশিষ্টে যোগ করেছেন শরৎচন্দ্রের সাক্ষাৎকার, কমলকুমারের অগ্রন্থিত পাঁচটি গল্প, তাঁর বৈষ্ণব কবিতাত্রয়, এবং ‘উষ্ণীষ’-এ প্রকাশিত অন্যান্য লেখকের প্রবন্ধ গল্প রম্যরচনা ভ্রমণ ও কবিতা
থেকে নির্বাচিত বেশ কিছু রচনা। সব মিলিয়ে এ এক উজ্জ্বল উদ্ধার।

গঙ্গারাম বিরচিত মহারাষ্টাপুরাণ

সম্পাদক: শম্পা রাউৎ
১০০.০০, ভারবি

আজ থেকে প্রায় ১২০ বছর আগে ময়মনসিংহের প্রাচীন কবিদের জীবনী সংগ্রহ করতে গিয়ে কেদারনাথ মজুমদার গঙ্গারাম রচিত ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দের একটি পুঁথির সন্ধান পান। পুঁথির নাম ‘মহারাষ্টাপুরাণ, প্রথম কাণ্ড— ভাস্করপরাভব’। ১১ পৃষ্ঠায় সম্পূর্ণ এই ‘ঐতিহাসিক কাব্য’টিতে বাংলায় বর্গি হাঙ্গামার যে বিবরণ পাওয়া যায়, তার অনেকটাই অন্য সূত্রে অপ্রাপ্য। ব্যোমকেশ মুস্তফী ১৩১৩ বঙ্গাব্দে ‘সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা’য় পঁুথিটি প্রথম সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন। তিনি অবশ্য নাম দেন ‘মহারাষ্ট্রপুরাণ’। ১৯৬৫-তে পুঁথিটি দ্বিতীয় বার সম্পাদনা করে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন এডওয়ার্ড ডিমক ও প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্ষিত মূল পুঁথিটি দেখে তৃতীয় বার সম্পাদনা করেছেন শম্পা রাউৎ, সংশোধিত হয়েছে পূর্ব পাঠের নানা ত্রুটি। ফিরিয়ে দিয়েছেন পুঁথির মূল পাঠ, কয়েকটি পৃষ্ঠার চিত্রও সংযুক্ত করেছেন। পুঁথির বিবরণের সঙ্গে কবি পরিচয়, রচনাকাল, পুঁথির ভাষিক লক্ষণ, আবিষ্কার ও প্রকাশ-প্রসঙ্গের আলোচনা করেছেন। ভাস্কর পণ্ডিতের হত্যাস্থল ‘মানকর’ ও তার সন্নিহিত অঞ্চল নিয়ে তথ্য, কাব্যের শেষ চরণের নিহিতার্থ প্রসঙ্গে নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নবীন গবেষকের ছোট্ট বইটি বাংলার ইতিহাস চর্চায় উল্লেখযোগ্য সংযোজন।

নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদ থেকে যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী সম্পাদিত মহারাষ্ট্র পুরাণ-এর পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। কোন পুঁথি থেকে পাঠ গৃহীত হয়েছে তার উল্লেখ না থাকলেও এতে সংযোজিত হয়েছে সম্পাদক-কৃত বিস্তারিত আলোচনা, যদুনাথ সরকারের দীর্ঘ প্রবন্ধ ‘বর্গীর হাঙ্গামা’, কেদারনাথ মজুমদার হারাধন দত্ত চিত্তপ্রিয় মিত্রের আলোচনা, তমোনাশচন্দ্র দাশগুপ্তের ইংরেজি ভূমিকা ইত্যাদি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Review Book Literature Memoirs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE