Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাঘে-বাঁদরে

এক ছিল বাঘ। তার গায়ে ডোরাকাটা দাগ। তার খুব রাগ। এক দিন সে বনের পথে যাচ্ছিল। তখন একটা বাঁদর, ওই আকাশছোঁয়া উঁচু লম্বা ময়নাগাছের মগডালে বসে কলা ছুলে খাচ্ছিল আর মোটকা বই পড়ছিল। কলা খেয়ে সে ফেলল খোসা, বাঘের গায়ে। বাঘের হল বিষম গোঁসা। ময়নাগাছের চওড়া গুঁড়ি আঁচড়ে সে গর্জন করে বলল হালুম! কে রে তুই বাঁদর! তোর সাহস এমন জোর! এক বার তুই নাম। এই আমি থাকলাম। এক থাবাতে ধরে তোকে দুই থাবাতে খেলুম!

ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

তিলোত্তমা মজুমদার
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৫ ০০:০৯
Share: Save:

এক ছিল বাঘ। তার গায়ে ডোরাকাটা দাগ। তার খুব রাগ। এক দিন সে বনের পথে যাচ্ছিল। তখন একটা বাঁদর, ওই আকাশছোঁয়া উঁচু লম্বা ময়নাগাছের মগডালে বসে কলা ছুলে খাচ্ছিল আর মোটকা বই পড়ছিল। কলা খেয়ে সে ফেলল খোসা, বাঘের গায়ে। বাঘের হল বিষম গোঁসা। ময়নাগাছের চওড়া গুঁড়ি আঁচড়ে সে গর্জন করে বলল হালুম! কে রে তুই বাঁদর! তোর সাহস এমন জোর! এক বার তুই নাম। এই আমি থাকলাম। এক থাবাতে ধরে তোকে দুই থাবাতে খেলুম!

বাঁদর দেখেশুনে কলার খোসা ফেলেনি। বাঘের কথায় তার মালুম হল সামনে বিপদ ভীষণ! সারা গায়ে ফুটল শিহরন! পড়লে বাঘের থাবায়, বাঁচাবে কার বাবায়? ‘বাপরে বাঘ! মলুম!’ বলে বাঁদর এ-গাছ থেকে
সে-গাছ কেবল লাফায়। আর বাঘ ময়না থেকে শিমুল, শিমুল থেকে চালতা, চালতা থেকে জারুল, পারুল, সেগুন গাছের তলায় তলায় বাঁদরকে ধেয়ে কেবল ঝাঁপায়। হাঁপায়। দাপায়।

একসময় ক্লান্ত হয়ে বাঘ ঘুমিয়ে পড়ল। ক্রমে তার নাকডাক উচ্চগ্রামে চড়ল। তার হাঁকের চেয়ে বেশি নাকডাক। স্বরতর্জনের চেয়ে বড় নাসিকাগর্জন! খ্যাঁও ফোঁত্‌ ফো-র-র-র এমন শব্দ ওঠে নাকে যে বাঁদরের পিলে চমকাতে থাকে। একবার সে ভাবল এই সুযোগে পালিয়ে যায়! পালালে আর কে তাকে পায়! কিন্তু সেটা ভীরুতা! বাঁদরকুলে সবাই তাকে ভিতু বলবে তা চলবে না। তাই সে বসে রইল কখন বাঘের ভাঙবে ঘুম। আবার সে শুরু করবে গাছ থেকে গাছে লাফাবার ধুম। তো, বাঁদর পাতা উল্টে বই পড়ছে তো পড়ছেই। বাঘের নাকহাঁকডাক চলছে তো চলছেই। বাঘের ঘুম গাঢ়। বাঁদর বুঝল তাকে থাকতে হবে আরও। গাছের শক্ত ডালে এতক্ষণ বড্ড কষ্ট। অষ্টপ্রহর ভাল্লাগে না। ওদিকে গাছের তলে বাঘের নরম গা! কী আরাম হোথায় বা বা বা! আর ওই মখমলি হলুদ-কালো ছাল! বাঘের ছালে বসা মানে খাঁটি রাজার চাল। ‘যতক্ষণ ঘুমোয় বাঘ এই জারুলগাছের ছায়ে, ততক্ষণ আরাম করে ঠেসান দিই গায়ে।’ ভাবল বাঁদর। আর যা ভাবল তা করল। বাঘের পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে বই পড়তে লাগল। সে যেন বসে আছে হলুদকালো বাঘিচাবনে, নাকি তা হলদে-কালো ডোরা ডোরা বাঘালিচা তা কে জানে! বাঘ থাকলে বাগিচা হল বাঘিচা আর বাঘের ছালে গালিচা বাঘালিচা ছাড়া কী! বাঁদরের খুব ভাল লাগল। সে মন দিয়ে কঠিন বইটি পড়তে লাগল। বইয়ের নাম ‘বাঁদরামি’! সারা পৃথিবীর যত বাঁদরের যত কৌশল সব ওতে লেখা। তার মধ্যে বাঁদর পড়ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ ‘বাঘ মারিবে কেমনে’। পড়তে পড়তে বাঘের গায়ের নরমে গরমে আরামে বাঁদরও ঘুমিয়ে পড়ল।

এর মধ্যে বাঘের তো ঘুম ভেঙেছে! সে দেখে, আরেঃ! পাজি বাঁদর, তারই ছবি দেওয়া বই হাতে, তারই গায়ে ঠেসান দিয়ে ঘুমোচ্ছে! তো ব্যাপারটা দেখতে হচ্ছে! সে আস্তে করে বইখানা তুলে পড়তে শুরু করল। বাঘরে বাঘ! বাঁদরের মাথায় এত বুদ্ধি! বাঘ একেবারে অবাক! বাঘ মারার এত রকম ফন্দি! এমনকী, মারার আগে করবে নাকি বন্দি!

আগাগোড়া বইটা পড়ে ফেলে বাঘ দেখল, বাঁদরের কানে যদি একটা ডেঁয়ো পিঁপড়ে ছেড়ে দেওয়া যায় তবে কানের মধ্যে ঢুকে পিঁপড়েটা চ্যাঁচামেচি করবে, তাইতে বাঁদর খেপে উঠবে! পিঁপড়ে কামড়ালে ব্যাটা আচ্ছা জব্দ হবে। আর কানের মধ্যে ডেঁয়ো পিঁপড়ে পোষ মানানোর পদ্ধতি ‘বাঁদরামি’ বইতে নেই!

তখন বাঘটা পিঁপড়ে খোঁজার জন্য যেই না গা ঝাড়া দিয়েছে, বাঁদরের ঘুম গেল ভেঙে। সে দেখে, ওরে বাবা! বাঘটা তার কানের কাছে। কটমট করে চেয়ে আছে! সে বইতে যা পড়েছিল, ভয়ে সব ভুলে গেল। আর বাঘ বাঁদরের ভ্যাবাচ্যাকা মুখ দেখে ভাবল, বাঁদর নিশ্চয়ই বাঘ ধরার ফন্দি আঁটছে! দু’জনেই একসঙ্গে বাপরে-মারে বলে দিল দু’দিকে ছুট। বইটা গাছতলে পড়ে রইল। বাতাসে তার পাতা উড়তে লাগল ফরফর করে!

সেই থেকে লেখাপড়া জানা বাঁদররা কলার খোসা ফেলার আগে দেখে নেয় গাছের নীচে বাঘ আছে কি না! আর বাঘেরা গাছের
তলায় এলে উপরে তাকিয়ে ঠাহর করে নেয়, গাছে বই-হাতে কোনও বাঁদর আছে কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE