উঁচু বহুতল, ঝকঝকে রাস্তা, নৈশজীবনের মাদকতা, শহুরে পরিবেশ যেমন পর্যটক আকর্ষণের বিষয়বস্ত হয়, ঠিক তেমনই নিরিবিলি গ্রামও টানে কোনও কোনও পর্যটককে। কোলাহল বর্জিত, আতিশয্যবিহীন স্থানের খোঁজেও ছুটে যান কেউ কেউ। লক্ষ্য একটাই, ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত জীবন থেকে মুক্তি। প্রকৃতির আলিঙ্গনে নিজেকে খুঁজে নেওয়া। শান্ত পরিবেশে একান্ত যাপন। আপনি যদি এই দ্বিতীয় তালিকার মানুষ হন, তা হলে চলুন এমন কোনও গ্রামে, যেখানে প্রকৃতির সুনিবিড় স্পর্শ রয়েছে।
নাকো, হিমাচল প্রদেশ

নাকো মনাস্ট্রি। ছবি: সংগৃহীত।
রুক্ষ, ঊষর পাহাড়ি গ্রামও যে এমন চমৎকার হতে পারে, তা বোঝা যাবে নাকো গেলে। হিমাচল প্রদেশের কিন্নর জেলায় হিমালয়ের কোলে কয়েক ঘর লোক নিয়ে ছোট্ট গ্রাম নাকো। গ্রামের নামেই হ্রদ। সেটাই এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১১ হাজার ফুট উচ্চতার শান্ত স্থানটিতে সব সময়েই থাকে শীতল পরশ। এখানে এলে মনে হবে, হাত বাড়ালেই যেন তুষারাবৃত পাহাড়চূড়া ছুঁয়ে ফেলা যায়। নাকো হ্রদকে বেষ্টন করেই গড়ে উঠেছে বাড়িঘর। চড়াই পথে খানিকটা গেলে নাকো মনাস্ট্রি। তবে প্রত্যন্ত গ্রাম হলেও পর্যটকদের আনাগোনা যথেষ্ট। উচ্চতাজনিত কারণে এই স্থানে শীতের দাপট যথেষ্ট। শীতের মরসুমে গ্রাম ঢেকে যায় তুষার চাদরে। নাকো ঘোরার আদর্শ সময় সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর। মার্চ-এপ্রিল, মে-তেও আবহাওয়া পাবেন চমৎকার।
কী ভাবে যাবেন?
হিমাচল প্রদেশের বড় শহর মানালি। সেখান থেকে রেকংপিও হয়ে নাকো যাওয়া যায়। বাস পরিষেবাও আছে। রেকংপিও থেকে কাজাগামী বাস ধরে গ্রামে যাওয়া যায়। সবচেয়ে ভাল ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করে নেওয়া। রেকংপিও থেকে নাকোর দূরত্ব ১০১ কিলোমিটার। হিমাচলের আর একটি জনপদ কল্পা। সেখান থেকে নাকোর দূরত্ব প্রায় ৯৮ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেন?
নাকো গ্রামে রয়েছে বেশ কয়েকটি হোটেল। সেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে।
খিমসর, রাজস্থান

বালিয়াড়ি, মরুভূমির রূপ খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করতে চাইলে রাজস্থান ভ্রমণের সঙ্গে জুড়ে নিতে পারেন খিমসর। ছবি: সংগৃহীত।
উন্মুক্ত বালুপ্রান্তর, মাঝে মধ্যে বিক্ষিপ্ত কিছু গাছ। তারই মাঝে কয়েক ঘর জনবসতি। বালিয়াড়ি, মরুভূমির রূপ খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করতে চাইলে রাজস্থান ভ্রমণের সঙ্গে জুড়ে নিতে পারেন খিমসর। জোধপুর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে তার অবস্থান। ধু ধু বালুপ্রান্তরের রূপও যে এমন হয়, এখানে এসে সূর্যোদয়, সূর্যাস্তের সাক্ষী না থাকলে বোঝা অসম্ভব। স্থানীয় সংস্কৃতি জানতে হলে একটি বা দু’টি দিন এখানে থেকে যেতে পারেন। এখানে রয়েছে ষোড়শ শতকের খিমসর দুর্গ। ঘুরে নিতে পারেন স্যান্ড ডিউনস ভিলেজ।
কী ভাবে যাবেন?
জোধপুর অনেক ভাবেই যাওয়া যায়। বিমানে দিল্লি বা জয়পুর পৌঁছে স়ড়কপথে জোধপুর যেতে পারেন। হাওড়া এবং কলকাতা থেকে রেলপথে জোধপুর পৌঁছে সেখান থেকে গাড়িতে খিমসর যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
খিমসরে থাকার জন্য রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল হোটেল। গ্রাম্য কুঁড়েঘরের আদলে তৈরি হোটেলও রয়েছে।
আরও পড়ুন:
মাওলিনং

পরিচ্ছন্ন গ্রামের স্বীকৃতি পেয়েছে মাওলিনং। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট গ্রাম মাওলিনং এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রামের শিরোপা অর্জন করেছে। শিলং থেকে দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার। খাসি সম্প্রদায়ের বাস এই গ্রামে। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ছবির মতো সুন্দর। চেষ্টা করেও কেউ এক টুকরো আবর্জনা এলোমেলা পড়ে থাকতে দেখবেন না। জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলি যেখানে প্লাস্টিকের বর্জ্যে ভরে উঠছে, মাওলিনং সেখানে সত্যি ব্যতিক্রম। জৈব বর্জ্য এখানে জমা করা হয় বাঁশের ময়লা ফেলার পাত্রে। তা থেকে তৈরি হয় সার।
কী ভাবে যাবেন?
মাওলিনংয়ের সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দরটি শিলংয়ে। সেখান থেকে মাওলিনংয়ের দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার। শিলং বা চেরাপুঞ্জি থেকে বাসে ডাওকি গিয়ে সেখান থেকে গাড়িতে গ্রামটিতে যেতে পারেন। ডাওকি থেকে দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। অসমের গুয়াহাটি থেকে সড়কপথেও মাওলিনং যাওয়া যায়। তবে দূরত্ব অনেকটাই বেশি হবে।
কোথায় থাকবেন?
মাওলিনং গ্রামেই থাকতে পারেন। এখানে থাকার জন্য হোটেল এবং হোম স্টে দুই-ই রয়েছে।