মধ্যপ্রদেশের অমরকণ্টক থেকে শুরু হয়ে গুজরাতের খাম্বাত উপসাগরে গিয়ে মিশেছে নর্মদা। বয়ে গিয়েছে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের উপর দিয়ে। নদীপথের কোথাও পাহাড়, কোথাও অরণ্য। অপূর্ব তার শোভা। তিন রাজ্যেই নর্মদা নদীকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়ে পর্যটন কেন্দ্র। তবে গন্তব্য যদি হয় মধ্যপ্রদেশ, তাহলে কোন কোন জায়গা ঘুরবেন জেনে নিন।
অমরকণ্টক: বিন্ধ্য, মাইকাল ও সাতপুরা এই তিন পাহাড়শ্রেণি এসে মিশেছে এখানে। নর্মদা-র উৎপত্তিস্থল অমরকণ্টক, তীর্থরাজ নামেও পরিচিত। নর্মদার উৎসস্থল বা নর্মদা উদগম ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা মন্দির। নবম শতাব্দীতে রেওয়ার মহারাজা তৈরি করেন নর্মদা মন্দির। এই মন্দির চত্বরে রয়েছে হাতির মূর্তি। দেখার আরও অনেক কিছু আছে অমরকণ্টকে। শোন নদীর উৎপত্তিও এখানে। তা ছাড়া রয়েছে কপিলধারা, দুগ্ধধারা, কপিলাশ্রম, পাতালেশ্বর মহাদেব মন্দির ইত্যাদি। শহরে ঢোকার মুখে রয়েছে কবীর চবুতরা, যেখানে সন্ত কবীর সাধনা করতেন।
জবলপুরে যে দুই জায়গা না দেখলেই নয়, তা হল ধুঁয়াধর জলপ্রপাত ও মার্বেল রক। ছবি: সংগৃহীত।
জবলপুর: মধ্যপ্রদেশের অন্যতম জনবহুল শহর জবলপুর। নর্মদা নদী এই জায়গার রূপ বাড়িয়েছে। অনেকে বলেন, জব্বল আরবি শব্দ। এর অর্থ পাথর। আবার অনেকে বলেন, ঋষি জাবালি নাকি এই স্থানে এসে নর্মদার তীরে তপস্যা করেন। সেই জাবালির নাম থেকে এই স্থানের নাম হয়েছিল জবলপুর।
জবলপুরে যে দুই জায়গা না দেখলেই নয়, তা হল ধুঁয়াধর জলপ্রপাত ও মার্বেল রক। ৩০ মিটার উঁচু থেকে নর্মদার প্রবল জলরাশি যখন পাথুরে জমিতে আছড়ে পড়ে, তৈরি হয় প্রবল বাষ্প। চারপাশ যেন মনে হয় ধোঁয়ায় ভরে উঠেছে। সেই থেকেই এর নাম ‘ধুঁয়াধর’। ‘ধুঁয়া’ হল বাষ্প আর ‘ধর’ হল প্রবাহ। বর্ষায় সেই রূপ হয়ে ওঠে অনবদ্য। পাখির চোখে জলপ্রপাতের রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় রোপওয়েতে।
ধুঁয়াধরের অদূরে ভেড়াঘাটে রয়েছে মার্বেল রক। ৮ কিমি বিস্তৃত নর্মদার গিরিখাতের সৌন্দর্য মনোগমুগ্ধকর। শাহরুখ খান-এর ‘অশোক’ থেকে হৃতিক রোশন-এর ‘মহেঞ্জোদারো’, এমন অসংখ্য হিন্দি ছবির শুটিং হয়েছে মার্বেল রক-এ। কোথাও দুধ সাদা পাথর, কোথাও পাথরের রং গোলাপি, কোথাও আবার পাথরের গায়ে লেগেছে হলুদের ছোঁয়া। মার্বেল পাথরের সেই খাতের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়েছে নর্মদা নদী। বর্ষা ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ে নৌ বিহারের ব্যবস্থা থাকে। পড়ন্ত বিকেলে পাথরের উপর যখন সূর্যের সোনালি আলো এসে পড়ে, সে এক অনুপম শোভা। ভারতের অন্য কোথাও মার্বেলের এমন সৌন্দর্য দেখা যায় না। মার্বেল রকের অপূর্ব সৌন্দর্য সবচেয়ে ভাল উপভোগ করা যায় পূর্ণিমা রাতে।
ভেড়াঘাটের কাছে একটি পাহাড়ের উপরে ৬৪ যোগিনী মন্দির রয়েছে। সেখান থেকে নর্মদা নদী উপত্যকার মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
মধ্যপ্রদেশের খান্ডওয়া জেলায় নর্মদা নদীর উত্তরে রয়েছে ওঙ্কারেশ্বর মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।
ওঙ্কারেশ্বর: মধ্যপ্রদেশের খান্ডওয়া জেলায় নর্মদা নদীর উত্তরে রয়েছে ওঙ্কারেশ্বর মন্দির। নর্মদা নদীর তীরে মান্ধাতা দ্বীপেই তার অবস্থান। দ্বীপটির প্রাকৃতিক আকার অনেকটা দেবনাগরী ‘ওম’ চিহ্নের মতো। এখানে রয়েছে বহু প্রাচীন শিবমন্দির। বলা হয়, এই মন্দির শিবের ১২টি জ্যোর্তিলিঙ্গের মধ্যে একটি। এখানে মামলেশ্বর, সিদ্ধনাথ মন্দির-সহ একাধিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। ওঙ্কারেশ্বর-এর সৌন্দর্য বাড়িয়েছে নর্মদা নদীর উপর তৈরি সেতু। নৌকা করে নদী পারাপারও করা হয়। জায়গাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্যও রয়েছে। প্রতি বছর অসংখ্য পুণ্যার্থী শিবমন্দির দর্শনে আসেন এখানে। ওঙ্কারেশ্বর ভোপাল থেকে প্রায় ২৬৫ কিলোমিটার এবং ইনদওর থেকে প্রায় ৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।