Advertisement
E-Paper

খাঁড়ি-নারকেল-ঢেউ ভাসি ভগবানের দেশ

শেষ ডিসেম্বরের হাড়কাঁপানো শীতের হাত থেকে অব্যাহতি দিতে অনেক দিন ধরেই হাতছানি দিচ্ছিল সবুজে মোড়া সুন্দরী কেরল।

দেবোত্তম চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৪২

শেষ ডিসেম্বরের হাড়কাঁপানো শীতের হাত থেকে অব্যাহতি দিতে অনেক দিন ধরেই হাতছানি দিচ্ছিল সবুজে মোড়া সুন্দরী কেরল।

ডিসেম্বরের শেষ আর জানুয়ারির দিন সাতেক জুড়ে বেরিয়ে পড়লাম স্বপ্নপূরণে। ডিসেম্বরের ২৭ তারিখে হাওড়া থেকে রাত পৌনে বারোটার চেন্নাই মেলে চেপে ২৯ তারিখ কাকভোরে পৌঁছে গেলাম চেন্নাই। দীর্ঘ ট্রেনযাত্রার ধকল কাটিয়ে, স্টেশনেই মধ্যাহ্নভোজের পাট চুকিয়ে রওনা দিলাম এগমোর স্টেশনের দিকে। এগমোর থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার কন্যাকুমারী এক্সপ্রেস আমাদের কন্যাকুমারীতে নামিয়ে দিল সকাল সাতটা নাগাদ।

হোটেলে পৌঁছে স্নান-খাওয়া সেরে পায়ে হেঁটে বেরোলাম কুমারী আম্মানের মন্দির দর্শনে। মন্দিরের স্থাপত্যসৌন্দর্য আহামরি নয়, তবে দেবীর হিরের নাকছাবির দ্যুতি আর ইতিউতি বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড দেখে বেশ ভাল লাগল।

পরের দিন সকালবেলা বিবেকানন্দ রক দেখব বলে বেরিয়ে পড়লাম। মন্দিরের সামান্য আগের রাস্তায় লঞ্চ জেটিতে পৌঁছে টিকিট কেটে পাড়ি দিলাম বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর আর ভারত মহাসাগর দিয়ে ঘেরা ভারতের শেষ ভূখণ্ডের দিকে। তুমুল ঢেউ আর এলোমেলো হাওয়া সামলে অবশেষে হাজির হলাম মন্দির প্রাঙ্গণে। মন্দির চত্বরের, বিশেষত ধ্যানকক্ষের ভাবগম্ভীর পরিবেশ আমাদের যেন নিয়ে গেল অন্য এক জগতে।

নতুন বছরের প্রথম দিনে আমরা হাজির হলাম বিখ্যাত কোভালম সমুদ্রসৈকতে। কোভালমের তিনটি সৈকতের মধ্যে লাইটহাউস বিচটি সব চেয়ে সুন্দর। যত দূর চোখ যায় সুনীল জলরাশি আর ধনুকাকার সৈকতের পিছনে অগুনতি হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং আয়ুর্বেদিক ম্যাসাজ পার্লার। বিকেলে আমাদের গন্তব্য শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দির। পুরুষদের ধুতি পরে ও উর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত রেখে এই মন্দিরে প্রবেশের নিয়ম। মন্দিরে অসাধারণ ভাস্কর্য দেখে এবং অনন্তশয্যায় শায়িত শ্রীবিষ্ণুর দর্শন শেষে ইতি টানলাম ত্রিবান্দ্রম (অধুনা তিরুবনন্তপুরম) ভ্রমণের।

পরের দিন ১৪৭ কিলোমিটার দূরের ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ নামে খ্যাত আলেপ্পি বা আলাপুঝা পৌঁছে অবাক হলাম। যে দিকেই তাকাই শুধু জল আর জল। তার মধ্যেই ভাসছে ছোট-বড় নানা আকারের নৌকা আর লঞ্চ। যাত্রিবাহী এক লঞ্চে সওয়ার হয়ে ঘন্টা তিনেকে ব্যাকওয়াটার বা খাঁড়ি পাড়ি দিয়ে আমরা চললাম কোট্টায়াম। দু’পাশের তীর জুড়ে দাঁড়িয়ে অসংখ্য নারকেল আর কলাগাছ। দু’পাশে যত দূর চোখ যায় সবুজ ধানের জমি। নৌকায় চেপে এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে চলেছে স্কুলের কচিকাঁচারা। স্থানীয় মানুষেরা ব্যস্ত তাঁদের দৈনন্দিন কাজে। এই চলমান জীবনের খণ্ডচিত্র আর শঙ্খচিল, পানকৌড়ি, স্নেকবার্ড ও আরও অজস্র নাম-না-জানা পাখি দেখতে দেখতে চলে এলাম কোট্টায়াম।

মঙ্গলবার কোট্টায়াম থেকে ১১৮ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দুপুরবেলা চলে এলাম পেরিয়ারের প্রবেশদ্বার কুমিলিতে। ১৮৯৫ সালে কেরলের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী পেরিয়ারের ওপর বাঁধ দেওয়ার ফলে এই অঞ্চলের নিচু জঙ্গলের কিছুটা প্লাবিত হয়ে সৃষ্টি হয় বিশাল এই কৃত্রিম হ্রদের। জঙ্গল ডুবিয়ে হ্রদ হওয়ায় এখনও জলের উপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বড়-বড় মরা গাছের গুঁড়ি। পরের দিন সকালে কেরল পর্যটন পরিচালিত লঞ্চের আপার ডেকের তিনটে টিকিট হাতে নিয়ে বুনো হাতির পাল দেখার জন্য উদগ্রীব হলাম। যদিও হাতি দেখার সৌভাগ্য আমাদের হল না, বদলে দেখলাম অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। বিকেলে কথাকলি নাচ দেখার পরে স্থানীয় বাজারে গেলাম কেরলের বিখ্যাত মশলা আর হোমমেড চকোলেট কিনতে।

জানুয়ারির পাঁচ তারিখে চললাম কেরলের শৈলশহর মুন্নার। কুমিলি থেকে ঘন্টা দেড়েকের পথ পাড়ি দেওয়ার পর সহসাই বদলে গেল দৃশ্যপট। রাস্তার দু’ধারে ছবির মতো সাজানো চায়ের বাগান, তার ফাঁকে ফাঁকে ছড়িয়ে আছে অজস্র কমলালেবুর গাছ। এই অনিন্দ্যসুন্দর পথশোভা দেখতে দেখতে দুপুর নাগাদ পৌঁছলাম ঘন সবুজের মখমল জড়ানো রোদ ঝলমলে মুন্নারে। পরের দিন সকালে বিরল প্রজাতির নীলগিরি থর দেখতে গেলাম এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যানে। এখানেই প্রতি বারো বছর অন্তর ফোটে নীলাকুরুঞ্জি ফুল। পেরিয়ারে হাতি না দেখতে পাওয়ার আফশোস সুদে-আসলে মিটিয়ে নিলাম নীলগিরি থর দেখে।

ওই দিন মধ্যাহ্নভোজন সেরে তিনটে নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম ১৪২ কিলোমিটার দূরের কোচির উদ্দেশে। সাত তারিখ লঞ্চে চেপে মাত্তানচেরি ডাচ প্রাসাদ, ইহুদি সিনাগগ ও সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চ (ভাস্কো-ডা-গামা এখানে সমাধিস্থ হন, পরে দেহাবশেষ স্থানান্তরিত হয় পর্তুগালের লিসবনে) দেখে সাঙ্গ হল কেরল ভ্রমণ।

কী ভাবে যাবেন?

বিমানে ত্রিবান্দ্রম কিংবা কোচি। ট্রেনে গেলে হাওড়া থেকে সরাসরি ত্রিবান্দ্রম বা কোচিগামী ট্রেন না ধরে চেন্নাই হয়ে যাওয়াই সুবিধা।

কখন যাবেন?

মাঝ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত কেরল ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়।

কোথায় থাকবেন?

কেরালার ত্রিবান্দ্রম, কোট্টায়াম, কুমিলি, মুন্নার, কোচি ইত্যাদি পর্যটকপ্রিয় স্থানগুলির কোনওখানেই থাকার জায়গার অভাব নেই। নানা মানের বেসরকারি হোটেলের পাশাপাশি প্রতিটি স্থানেই আছে কেরালা পর্যটনের নিজস্ব পর্যটক আবাস।

Kanyakumari Kerala
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy