Advertisement
E-Paper

উর্বশী রৌতেলা পারেন, আর আপনি কান চলচ্চিত্রোৎসবে যেতে পারেন না?

কান চলচ্চিত্রোৎসবে এ বছরের ভিড়টা একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, নাম না জানা বহু ভারতীয় প্রতিনিধিই লাল গালিচায় হেঁটেছেন। কানের মতো চলচ্চিত্রোৎসবে এঁরা পৌঁছোলেন কী করে?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ ১৫:২০
কান চলচ্চিত্রোৎসবে আপনিও যেতে পারেন!

কান চলচ্চিত্রোৎসবে আপনিও যেতে পারেন! ছবি : সংগৃহীত।

এ বছরের কান চলচ্চিত্রোৎসব শেষ। কিন্তু পরের বছর চাইলে কি সেখানে আপনিও যেতে পারবেন?

ভাবুন তো যে লাল গালিচায় ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন, আলিয়া ভট্ট, জাহ্নবী কপূরেরা গ্ল্যামারের বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে গেলেন, সেই একই গালিচায় হাঁটছেন আপনিও! সিনেমা দেখছেন ফ্রান্সের সৈকতশহরের সমুদ্রতীরের ওপেন থিয়েটারের সামনের সারিতে বসে। সিনেমাপ্রেমীদের তো বটেই এবং ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছেও এটি স্বপ্ন। তবে চাইলে সেই স্বপ্ন পূরণও হতে পারে।

কান চলচ্চিত্রোৎসবে এ বছরের ভিড়টা একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, নাম না জানা বহু ভারতীয় প্রতিনিধিই লাল গালিচায় হেঁটেছেন। ঐশ্বর্যা, আলিয়ারা তো ভারতীয় সিনেমা জগতের বড় নাম! কিন্তু তাঁরা ছাড়াও ২০২৫ সালের কান চলচ্চিত্রোৎসবের লাল গালিচায় এমন অনেকে এসেছেন, যাঁদের মুখ দেখা তো দূর, নামও শোনেননি অধিকাংশ মানুষ। অথচ তাঁরা দিব্যি সেজেগুজে রেড কার্পেটে হাজির হয়েছেন। লাল গালিচায় হেঁটে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে হাত নেড়েছেন তারকাদের মতো করে (কাদের উদ্দেশে, তা জানা নেই যদিও)। এঁদের ছবিও উঠছে। সমাজমাধ্যমের সৌজন্যে সে সব ছবি ছড়িয়ে পড়েছে দুনিয়া জুড়ে। অথচ অনেকেই তাঁদের নাম শোনা তো দূর, মুখ দেখেও চিনতে পারেননি। কানের মতো চলচ্চিত্রোৎসবে এঁরা পৌঁছোলেন কী করে?

কানের অতিথিদের জন্য বিভিন্ন শ্রেণি ভাগ করা আছে। কানে কী ভাবে যাবেন, তা বোঝার জন্য এই শ্রেণির ভাগ জানাটা জরুরি।

কানের অতিথিদের জন্য বিভিন্ন শ্রেণি ভাগ করা আছে। কানে কী ভাবে যাবেন, তা বোঝার জন্য এই শ্রেণির ভাগ জানাটা জরুরি। —ফাইল চিত্র।

চাইলে যে কেউ কানে যেতে পারেন?

সিনেমা জগতে যে সমস্ত চলচ্চিত্র উৎসবের খ্যাতি রয়েছে, ফ্রান্সের কানে আয়োজিত চলচ্চিত্রোৎসব তার মধ্যে অন্যতম। ফ্যাশন যতই সেখানে মুখ্য হোক, সিনেমা সেই অনুষ্ঠানের মূল বিষয়। তারকাদের কথা আলাদা। তাঁদের সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়ে ডেকে আনা হয়। কিন্তু উর্বশী রৌতেলার মতো অভিনেত্রী, যাঁর সিনেমার নাম চট করে অনুরাগীদেরও মনে পড়বে না, তিনি কানের লাল গালিচায় এক দিন নয়, দু’দিন নয়, চার দিন হাজির হলেন কী ভাবে? উর্বশীর তবু পরিচিতি আছে। সিনেমায়, ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয়ও করেছেন। কিন্তু কানের লাল গালিচায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লকেট পরে যে রুচি গুজ্জর আন্তর্জাতিক দুনিয়ার নজর নিজের দিকে টেনে নিলেন, তাঁকে কত জন চিনতেন? রুচির মতো আরও বহু নাম না জানা ভারতীয় প্রতিনিধি কানে গিয়েছিলেন। সমাজমাধ্যম প্রভাবী এবং ফ্যাশন সমালোচক ঐশ্বর্যা সুব্রহ্মণ্যম জানাচ্ছেন, চাইলে তাঁদের মতো কানে যেতে পারেন আপনিও!

তবে কি কানে চলচ্চিত্রোৎসবের টিকিট কাটা যায়?

যদি ভেবে থাকেন কোনও কনসার্টের মতো টিকিট কাটলে আর চড়া দাম দিলেই কানে পৌঁছোনো যাবে, তবে কিন্তু বিষয়টি তা নয়। কানের বন্দোবস্ত একটু অন্য রকম। ঐশ্বর্যা জানাচ্ছেন, কানের অতিথিদের জন্য বিভিন্ন শ্রেণি ভাগ করা আছে। কানে কী ভাবে যাবেন, তা বোঝার জন্য এই শ্রেণিবিভাগ জানাটা জরুরি।

কানে নিজেদের ছবির প্রদর্শনে এসেছিলেন হোমবাউন্ডের অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালক এবং প্রযোজকেরা।

কানে নিজেদের ছবির প্রদর্শনে এসেছিলেন হোমবাউন্ডের অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালক এবং প্রযোজকেরা। ছবি: সংগৃহীত।

১। প্রথম শ্রেণি: যথার্থই যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ

ঐশ্বর্যার কথায়, ‘‘কানে যে ছবির প্রদর্শন হয়, তাতে যোগ দিতে হলে আমন্ত্রণ পাওয়া জরুরি। আর ওই সব ছবির আমন্ত্রণ যায় মূলত সিনেমার সঙ্গে জড়িত পেশাদার, প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত কর্মী, ব্র্যান্ড প্রতিনিধি, ফিল্মের ছাত্রছাত্রী এবং ফিল্ম সমালোচকদের কাছে।’’ এঁরা হলেন প্রথম শ্রেণিভুক্ত। পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা, অভিনেত্রী— যাঁদের জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন। এঁরা তাঁরা। কানে এঁরা যান যথার্থই নিজেদের কাজের সূত্রে।

২। দ্বিতীয় শ্রেণি: বড় তারকারা

ঐশ্বর্যা, আলিয়া, দীপিকা পাড়ুকোন, প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার মতো তারকারা কানে যান তাঁদের ছবির জন্য নয়, বিভিন্ন নামী ব্র্যান্ডের দূত হিসাবে। সেই সব কোটি কোটি ডলারের ব্র্যান্ড কানের মতো চলচ্চিত্র উৎসবের আর্থিক সহায়ক হিসাবে থাকে।

৩। তৃতীয় শ্রেণি: সমাজমাধ্যম প্রভাবীরা

কানের আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী ব্র্যান্ডগুলি সাধারণের দরজায় নিজেদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য সমাজমাধ্যম প্রভাবীদের সঙ্গে হাত মেলায় বা চুক্তিবদ্ধ হয়। এই সমস্ত প্রভাবীরা তারকাদের থেকে কিছুটা কম গ্ল্যামারাস হলেও ক্যামেরার সামনে সদাপ্রস্তুত। এঁদের অনুগামীর সংখ্যাও অনেক। তাই প্রচারের জন্যও ভাল বিকল্প। এঁরাও লাল গালিচায় হাঁটতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, সাজগোজের জন্য এঁদের এক জন স্টাইলিস্টের ব্যবস্থাও করে ওই ব্র্যান্ড।

 ঘুরপথেও কানে আসা যায়। যাঁরা সেই হদিস জানেন, তাঁরা লাল গালিচায় হাঁটতেও পারেন। ছবিতে কানের লাল গালিচায় দেখা যাচ্ছে উর্বশী রৌতেলাকে।

ঘুরপথেও কানে আসা যায়। যাঁরা সেই হদিস জানেন, তাঁরা লাল গালিচায় হাঁটতেও পারেন। ছবিতে কানের লাল গালিচায় দেখা যাচ্ছে উর্বশী রৌতেলাকে। ছবি: সংগৃহীত।

৪। চতুর্থ শ্রেণি: নিজের ব্যবস্থা নিজে করা

এই শ্রেণিতে আসতে পারেন আপনিও। তবে কোনও ব্র্যান্ড আপনাকে সাহায্য করবে না। গাঁটের কড়ি খসিয়ে নিজের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। তার জন্য অনুমতি পেতে কানের অফিসিয়াল মিডিয়া পার্টনার ব্রুট-এর দ্বারস্থ হতে হবে। অজস্র ইমেলের ফলে ভাগ্যদেবী সহায় হলে কপালে শিকে ছিঁড়তে পারে। অনেকে এর জন্য জনসংযোগ সংস্থা, এমনকি অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও দ্বিধা করেন না। আমন্ত্রণপত্র জোগাড় করার জন্য জান লড়িয়ে দেন আগ্রহীরা।

৫। পঞ্চম শ্রেণি: টিকিট ব্ল্যাক

প্রকৃত অর্থে টিকিট ব্ল্যাক করা নয় অবশ্যই। তবে রাস্তাটা একটু বাঁকা। এই শ্রেণিভুক্ত ‘অতিথি’রা কেন কানে এলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না কেউ। যেমন প্রশ্ন তোলা হয় না, তাঁরা কোনও দিন কোনও সিনেমা করেছেন কি না, তা নিয়েও। এঁরা কানে আসার জন্য মূল্য দেন। তবে সেই মূল্য দেওয়ার জন্য ঘুরপথ জানাটা জরুরি। যাঁরা সেই ঘুরপথের হদিস জানেন, তাঁরাই এই সুযোগ পান। এবং লাল গালিচায় হাঁটতেও পারেন।

৬। ষষ্ঠ শ্রেণিভুক্ত: শুধুই পোজ়

কানের এই শ্রেণির অতিথিদের ব্যখ্যা দিতে গিয়ে ঐশ্বর্যা বলেছেন, ‘‘৫০ ইউরো, একটি পোশাক, তবে রেড কার্পেট নয় শুধুই কার্পেট’’। ঐশ্বর্যা জানাচ্ছেন, এই ধরনের অতিথিদের চলচ্চিত্রোৎসবে দেখাই যায়। তবে এঁরা লাল গালিচায় হাঁটেন না। এঁদের সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা যায়। তবে হলে ঢুকে উৎসবে প্রদর্শিত সিনেমা দেখতে পারেন না এঁরা।

কোনও অজানা কারণে অদিতি রাও হায়দরিকে এ বছর রেড কার্পেটে হাঁটতে দেখা যায়নি!

কোনও অজানা কারণে অদিতি রাও হায়দরিকে এ বছর রেড কার্পেটে হাঁটতে দেখা যায়নি! ছবি: সংগৃহীত।

সাধারণ মানুষ কি কানে যেতে পারেন?

হ্যাঁ। সাধারণ মানুষ কানে যেতে পারেন। তবে তাঁরা লাল গালিচায় হাঁটতে পারবেন না। কিন্তু সিনেমা দেখতে পারবেন। তিনটি উপায়ে তা সম্ভব।

১। তিন দিনের প্যাকেজ

১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সি সিনেমাপ্রেমীদের জন্য কানে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তার জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাতে হবে। আবেদন গ্রাহ্য হলে তিন দিনের জন্য কানে থেকে সিনেমা দেখার এবং সমস্ত রকম অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ মিলবে।

২। সিনেফিলিস ব্যাজ

ফিল্ম বা কমিউনিকেশনের ছাত্র-ছাত্রী, ফিল্ম ক্লাবের সদস্যদের জন্য সিনেমা দেখার ব্যবস্থা থাকে। এঁদের সিনেফিলিস ব্যাজ দেওয়া হয়, যা থাকলে লাল গালিচায় হাঁটতে না পারলেও যে কোনও ফিল্মের প্রদর্শনে হাজির থাকার অনুমতি মেলে।

৩। বিনামূল্যে সৈকতে সিনেমা দেখার ব্যবস্থা

কান চলচ্চিত্র উৎসব চলাকালীন রাতে সৈকতে সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। যা বিনামূল্যে যে কেউ দেখতে পারেন। চাইলে আপনি সমুদ্রের তীরে বসে খোলা আকাশের নীচে সিনেমা দেখার সেই অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।

Cannes Film Festival Cannes Film Festival 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy