Advertisement
E-Paper

এখানে চিলিকা পাহাড়ঘেরা, পুজোর ছুটিতে চারচাকায় সওয়ার হয়ে চলুন রম্ভা, বরকুল

পুজোর ছুটিতে সফরের জন্য ট্রেন, বাস, বিমানের টিকিট কাটা হয়নি? বেড়ানোর সঙ্গী হতে পারে চারচাকাই। আনন্দবাজার ডট কম-এ থাকছে সড়কপথে ভ্রমণের চেনা-অচেনা গন্তব্যের হদিস।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৫৯

পুরী গিয়ে চিলিকা ঘুরেছেন? তবে চিলিকার সৌন্দর্য উপভোগের আরও দুই বিশেষ ঠিকানাও কিন্তু রয়েছে। যেখান থেকে দৃশ্যমান পাহাড়ের বেড় দেওয়া উপহ্রদ। কোথাও সেই রং ঘন সবুজ, কোথাও আবার ধূসর। সে পথের সঙ্গী হয় সিগাল।

কলকাতা থেকে ৫৮২ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে গঞ্জাম জেলা। সেখানকারই জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র রম্ভা। এ বার পুজোয় ভিড় এড়িয়ে ঘুরতে চাইলে, ঠিকানা হতে পারে সেটাই।

রম্ভা থেকে চিলিকার রূপ দর্শনের অভিজ্ঞতা টেক্কা দিতে পারে পুরীকেও। নামে চিলিকা হলেও লোকমুখে চিল্কা বলেই পরিচিত এই উপহ্রদ। ভূগোল বইয়ের সংজ্ঞায় চিলিকা হল উপহ্রদ বা ঈষৎ নোনা জলের লেগুন। পুরী, খুরদা, গঞ্জাম— তিন জেলা জুড়ে তার বিস্তৃতি। তিন জেলা থেকেই সেই রূপ উপভোগ্য।

হাতে যদি দিন চারেক বা পাঁচেক ছুটি থাকে, তা হলে এখনই সাজিয়ে ফেলুন সফরসূচি। রম্ভাতেই থেমে থাকতে হবে না। ইচ্ছা এবং পছন্দ অনুযায়ী ঘুরে নিতে পারেন বরকুল, সৈকত শহর গোপালপুরও। আর যদি বন্যপ্রাণের প্রতি আকর্ষণ থাকে, তা হলে এই সফরে দেখা পেতে পারেন কৃষ্ণসারেরও। চাপা যেতে পারে রোপওয়ে।

রম্ভা থেকে তারাতারিণী মন্দির ঘুরে চলে যেতে পারেন গোপালপুরেও।

রম্ভা থেকে তারাতারিণী মন্দির ঘুরে চলে যেতে পারেন গোপালপুরেও।

গন্তব্য রম্ভা। তবে কলকাতা থেকে চারচাকায় সওয়ার হলে পথে ঘুরে নেওয়ার জায়গার কিন্তু অভাব হবে না। বরং চারটি বড় শহরে থামতে পারবেন ইচ্ছামতো। একটি রাত বা গোটা একটি দিন রাখতে পারেন সফরের সময় স্থানীয় জায়গা ঘোরার জন্যও।

সফর শুরু করতে পারেন রাতে। ভোরবেলাও সফর শুরুর জন্য মন্দ নয়। কলকাতা থেকে বেরিয়ে চায়ের বিরতির জন্য কোলাঘাট আদর্শ। রেস্তরাঁ, ধাবা, হোটেল— রাস্তার দু’পাশে। ভোজনরসিকদের জন্য এই জায়গাও বেশ জনপ্রিয়। গাড়ি এগোলে একে একে পেরোবে খড়্গপুর, জলেশ্বর। পরের বড় শহর বালেশ্বর। ঘোরাঘুরির জন্য এই জায়গাও কিন্তু তালিকায় নাম লেখাতে পারে।

রম্ভা পৌঁছোনোর তাড়াহুড়ো না থাকলে বালেশ্বরে একটি রাত কাটাতে পারেন। এখান থেকে ঘুরে নেওয়া যায় চাঁদিপুর, পঞ্চলিঙ্গেশ্বর। রাত্রিবাসের জন্য বেছে নিতে পারেন এই দু’টির মধ্যে কোনও একটি জায়গা। চাঁদিপুরে উপভোগ করা যাবে সৈকত। আর পঞ্চলিঙ্গেশ্বরে মিলবে প্রকৃতির ছোঁয়া, পাহাড়। একটি সম্পূর্ণ দিন এখানে ভ্রমণের জন্য রাখলে ঘুরে নিতে পারেন কুলডিহার অরণ্যও। জায়ান্ট স্কুই‌রেল এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। ২৫০ প্রজাতির পাখির বাস এখানে। মাঝেমধ্যে ঢুকে পড়ে হাতির পালও।

তবে বালেশ্বরে থাকতে না চাইলে এগিয়ে চলুন কটক বা ভুবনেশ্বরের দিকে। পথেই পড়বে ভদ্রক। প্রতিটি জায়গাই রাতের হল্ট বা বিরতির জন্য বেছে নেওয়া যায়। কটক সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মস্থান। হাতে একটু সময় থাকলে ঘুরে নিতে পারেন নেতাজির নামাঙ্কিত সংগ্রহশালা, চণ্ডীমাতার মন্দির, মহানদী ভিউ পয়েন্ট।

চিলিকার বুকে ভেসে পড়লে পৌঁছোনো যায় ব্রেকফাস্ট আইল্যান্ডে।

চিলিকার বুকে ভেসে পড়লে পৌঁছোনো যায় ব্রেকফাস্ট আইল্যান্ডে। — নিজস্ব চিত্র।

কটকের বদলে রাত্রিযাপন করতে পারেন ভুবনেশ্বরেও। উদয়গিরি, খণ্ডগিরি, লিঙ্গরাজ মন্দির এ সব যদি দেখা হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে বরং ঘুরে নিতে পারেন তাপাং। ভুবনেশ্বর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে নিজিগড়ে অবস্থিত তাপাং ইদানীং পর্যটক মহলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জায়গাটি দেখলে ক্যানিয়ন মনে হতে পারে। আসলে এটি একটি পরিত্যক্ত খনি। খননকাজের পর বড় বড় গহ্বরে জল জমে হ্রদের আকার নিয়েছে।

১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে এগোলে ভুবনেশ্বর থেকে রম্ভার দূরত্ব ১২৮ কিলোমিটারের মতো। ঘণ্টা তিনেকেই পৌঁছোনো যায়। রম্ভার সৌন্দর্য উপভোগের সবচেয়ে ভাল ঠিকানা ওড়িশা পর্যটন দফতরের পান্থনিবাস। চিলিকার গায়েই তার অবস্থান।

রম্ভার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বেশ সুন্দর একটি বাঁধানো চত্বর রয়েছে। সেটি ভিউ পয়েন্ট। যন্ত্রচালিত নৌকায় ভেসে পড়া যায় উপহ্রদেও। নামে উপহ্রদ হলেও তার ঢেউ এবং বিস্তার মনে করায় সাগরের কথাই। চিলিকা উপভোগের সবচেয়ে মনোরম সময় ভোর, নয়তো বিকেল। সময় অনুযায়ী নৌকা বুকিং করতে পারেন পান্থনিবাস থেকে। একে একে ঘুরে নিতে পারেন ব্রেকফাস্ট আইল্যান্ড (হ্রদের বুকে ছোট্ট দ্বীপের মধ্যে চার দিকে দরজা দেওয়া ঘর), বার্ডস আইল্যান্ড, ঘণ্টাশিলা আইল্যান্ড। সঙ্গে পাখিদের উপযোগী খাবার থাকলে আর তা ছড়িয়ে দিলে নৌকায় আপনার সঙ্গী হবে ব্রাউন হেডেড গাল। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়বে চারপাশে।

রম্ভা থেকে নানা দিকে নানা ভাবে ঘোরা যায়। চিলিকা ঘুরতে চাইলে চলে যেতে পারেন পাশের জেলা খুরদার বরকুলেও। সেখানেও যন্ত্রচালিত নৌকোয় ঘণ্টাখানেকের সফরে ঘুরে নেওয়া যায় কালীজাই মন্দির। চিলিকার বুকে একটি দ্বীপের উপর মন্দির। বিস্তীর্ণ জলরাশির বুকে তৈরি এই মন্দির নিয়ে রয়েছে স্থানীয় লোককথাও। ভারী মনোরম এই স্থান। বরকুলে উপভোগ করা যায় রোমাঞ্চকর জলক্রীড়াও।

বন্যপ্রাণের ছবি তোলার আগ্রহ থাকলে সফর সাজাতে পারেন বানিয়া-চিকিলি এবং খল্লিকোট হয়ে। ভোর থাকতেই বেরিয়ে পড়তে হবে বানিয়া-চাকিলির উদ্দেশে। কপাল ভাল থাকলে পাহাড় ঘেরা গ্রামেই দেখা মিলবে কৃষ্ণসারের। এই পথের সৌন্দর্যও ভারী মনোরম। খাল্লিকোটের নির্মলঝর মন্দির এনে দেবে প্রশান্তি। পাহাড়ের কোলে ধাপে ধাপে উঠে পৌঁছোতে হয় মন্দিরে। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ ঘিরে মন্দির নির্মিত। রয়েছে পবিত্র জলকুণ্ড।

— নিজস্ব চিত্র।

বানিয়া-চিকিলিতে দেখা মিলতে পারে কৃষ্ণসার মৃগের।

নির্মলঝর দেখে চলুন খল্লিকোটের জগন্নাথ মন্দির দর্শনে। পাহাড়ের অবস্থান এবং নারকেল গাছের সারি এই প্রাচীন মন্দিরের সৌন্দর্যে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। পুরীর মন্দিরের আদলে নির্মিত এই মন্দির। তবে ভিড়ভাট্টা কম। নির্জন, পরিচ্ছন্ন।

ঘুরে নিতে পারেন গোপালপুরের সৈকতেও।

ঘুরে নিতে পারেন গোপালপুরের সৈকতেও।

নির্মলঝার হয়ে চলে যেতে পারেন বরকুল। সেখানে রাত্রিবাস করে আশপাশের জায়গাগুলি ঘুরতে পারেন। আর যদি বরকুল না যান, তা হলে বরং গোপালপুরের দিকে গাড়ি ছোটান। পথে দেখে নিন তারাতারিণী মন্দির। পাহাড়ের মাথায় এই মন্দিরে পৌঁছোনোর জন্য রয়েছে রোপওয়ে।

সৈকত শহর হিসাবে গোপালপুর বেশ জনপ্রিয়। বিস্তীর্ণ সৈকতে খাওয়ার জন্য মাছ, কাঁকড়া।

কোথায় থাকবেন?

রম্ভা, বরকুল এবং গোপালপুর তিন জায়গাতেই ওড়িশা পর্যটন দফতরের পান্থনিবাস রয়েছে থাকার জন্য। সেখানেই খাওয়ার ব্যবস্থা। কাঁকড়ায় অ্যালার্জি না থাকলে অবশ্যই চিলিকার কাঁকড়া খেতে ভুলবেন না। গোপালপুরে সমুদ্রের ধারে অসংখ্য হোটেল আছে। বিলাসবহুল রিসর্টও মিলবে এখানে।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে সড়কপথে কোলাঘাট, খড়্গপুর, ভদ্রক, কটক, ভুবনেশ্বর হয়ে রম্ভা। একটানা গাড়ি চালালে ১২-১৩ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে।

Rambha Barkul Offbeat Odisha Travel Puja Special 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy