Advertisement
E-Paper

নদীখাত যেন শিল্পের সমার্থক, গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সঙ্গে তুলনাও টানা হয়, ওড়িশার কোথায় সেই ঠিকানা?

পুজোর ছুটিতে সফরের জন্য ট্রেন, বাস, বিমানের টিকিট কাটা হয়নি? বেড়ানোর সঙ্গী হতে পারে চারচাকাই। আনন্দবাজার ডট কম-এ থাকছে সড়কপথে ভ্রমণের চেনা-অচেনা গন্তব্যের হদিস।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:২১
ওড়িশার এক স্বল্পচেনা ঠিকানা। ভূগোলে পড়া অনেক কিছুই খুঁজে পাবেন এখানে।

ওড়িশার এক স্বল্পচেনা ঠিকানা। ভূগোলে পড়া অনেক কিছুই খুঁজে পাবেন এখানে। ছবি: সংগৃহীত।

পুজোর ছুটি মানে কারও জীবনে যেমন ঘরে বসে দেদার আড্ডা, ভূরিভোজ, কারও কাছে তেমনি বেড়িয়ে পড়া। কর্মব্যস্ত জীবন থেকে এক বার বেরিয়ে পড়ার ফুরসত পেলে সেই সুযোগ ছাড়তে চান না অনেকেই।

পুজোর সময় পরিচিত জায়গায় উপচে পড়া ভিড়। ট্রেন-বাসে টিকিট অমিল। তাই চারচাকাকে সঙ্গী করে বেড়িয়ে পড়ুন। আনন্দবাজার ডট কমে রইল ওড়িশার এমন দুই জায়গার খোঁজ, যেখানে প্রকৃতি উপুড়হস্ত। প্রায় অচেনা সেই ঠিকানায় এক বার গিয়ে পড়লে, সফর মনে থেকে যাবে চিরদিন। বেড়িয়ে পড়ুন সরাফগড় এবং কানাকুণ্ডের উদ্দেশে। সফরের ক্লান্তি খানিক কাটাতে জুড়ে নিন ঘাটশিলাও।

কলকাতা থেকে সরফগড়ের দূরত্ব ৫৮৪ কিলোমিটার। কোলাঘাট, খড়্গপুর হয়ে এগোতে হবে। এটাই সহজ পথ। হাতে সময় কম থাকলে যাত্রা শুরু করা যায় রাতেই। আর তাতে স্বচ্ছন্দ না হলে বরং ভোরবেলাই বেড়িয়ে পড়ুন। লোধাশুলি পার করে যেতে হবে বহড়াগড়ার দিকে। ঘুরতে ঘুরতে গন্তব্যে পৌঁছনোই যদি লক্ষ্য থাকে, একটি দিন থেকে যান ঘাটশিলায়।

বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে নিবিড় যোগ এই স্থানের। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যে বার বার এসেছে সুবর্ণরেখা, ঘাটশিলা, ফুলডুংরি, রঙ্কিনীদেবীর কথা। সেই স্থানটি ঘুরে নিতে পারলে মন্দ কি! ঘাটশিলায় এখন ঝাঁ চকচকে রিসর্ট। রয়েছে বিভূতিভূষণের বাড়িও। এখান থেকে ঘুরে নিতে পারেন রাতমোহনা, ধারাগারি, বুরুডি এবং গালুডি লেক।

রাতটা ঘাটশিলায় কাটিয়ে পর দিন ভোর ভোর বেরিয়ে পড়ুন সরফগড়ের উদ্দেশ্যে। এই দিন যেতে হবে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার। পথে খুব বেশি ক্ষণ না দাঁড়ালে সময় লাগবে ৯ ঘণ্টার মতো।

ওড়িশার সুন্দরগড় জেলার সরাফগড়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্র। অরণ্য-পাহাড়ের সমন্বয় এই স্থানের রূপ বাড়িয়েছে কয়েক গুণ। পর্যটন নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি অবশ্য যেমন নেই, তেমন এখানে থাকার অসুবিধাও নেই। পাহাড় ঘেরা ড্যামের ধারে ওড়িশা সরকারের নেচার ক্যাম্প মন ভাল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

কানাকুণ্ডে নদীখাতের শৈল্পিক সৌন্দর্য।

কানাকুণ্ডে নদীখাতের শৈল্পিক সৌন্দর্য। ছবি: সংগৃহীত।

সরাফগড় পৌঁছে সেই রাতটা বিশ্রাম নিন। পরের দিন একেবারে ভোর থাকতে বেরিয়ে পড়ুন ৫০ কিলোমিটার দূরে কানাকুণ্ডের উদ্দেশ্যে। এই জায়গার জন্যই তো এখানে আসা। কেন্দু-শাল সঙ্গ দেবে এই পথে। মাঝেমধ্যে পড়বে ছোট ছোট গ্রাম।

মহানদীর শাখানদী আইবি কানাকুণ্ডে সৃষ্টি করেছে প্রাকৃতিক শিল্প-সৌন্দর্য। পাথরের উপরর দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় তৈরি হয়েছে গিরিখাত। তবে শুধু গিরিখাত নয়, কানাকুণ্ডে দর্শনীয় নদীর ক্ষয়কাজে সৃষ্ট ভূমিরূপ। নদীপথে নরম শিলা ক্ষয়ে যায় দ্রুত। শক্ত শিলা অটুট থাকে। বছরের পর বছর নদীর জলে কোথাও ক্ষয়, কোথাও না ক্ষয়ে যাওয়া পাথর তৈরি করে অপূর্ব সব ভূমিরূপ।

তা দেখেই কেউ কেউ অ্যারিজ়োনার বিশ্ববিখ্যাত ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’-এর সঙ্গে এই স্থানের তুলনা টানতে শুরু করেছেন। রূপ-রং দিয়ে বিচার করলে এই তুলনা অন্যায্য মনে হতে পারে বটে, তবে কানাকুণ্ড তার নিজস্ব সৌন্দর্যে উজ্জ্বল। বর্ষার সময় জল বেশি। তখন গিরিখাতের রূপ ততটা বোঝা যায় না। শিলার ক্ষয়কাজ, নকশা স্পষ্ট হয় শীতে জল কমে গেলে।

সুন্দরগড়ে শুখা মহাদেবের মন্দির।

সুন্দরগড়ে শুখা মহাদেবের মন্দির। ছবি:সংগৃহীত।

এই স্থান ঘোরার জন্য হয় ভোর নয়তো বিকেলবেলাটা বেছে নেওয়াটাই ভাল। কারণ ঠা-ঠা রোদে সৌন্দর্য উপভোগ কিছুটা কষ্টকর হতে পারে। তা ছাড়া, নদীখাতের শিলাগুলি ভীষণ মসৃণ। দেখলে মনে হবে যেন মোম গলিয়ে কেউ তৈরি করেছে। ফলে অসাবধান হলেই পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে।

এখান থেকে ঘুরে নেওয়া যায় শুখা মহাদেবের মন্দির। রথের আদলে তৈরি মন্দিরে বিশেষ তিথিতে না গেলে ভিড় তেমন হয় না। নিশ্চিন্তে ঘোরা যায়।

সুন্দরগড়ে দেখে নিন ভেড়ীবহাল ঝর্না।

সুন্দরগড়ে দেখে নিন ভেড়ীবহাল ঝর্না। ছবি:সংগৃহীত।

সরাফগড়ে ঘুরে নেওয়া যায় সরাফগড় জলাধার, ভেড়ীবহাল ঝর্না। কেউ কেউ বলেন, ইচ্ছা নদীর উপর বাঁধ দিয়ে জলাধারটি তৈরি। এই জায়গাটিকে যেন বেড় দিয়ে রেখেছে পাহাড়। শান্ত পরিবেশ মন ভাল করে দেয়। শীতকালে পিকনিক পার্টির দল ভিড় করলেও, অন্য মরসুমে তেমন ভিড়ভাট্টা থাকে না। নেচার ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় তৈরি করা হয়েছে পার্ক। রয়েছে ভাসমান জেটি, বোটিংয়ের ব্যবস্থা। স্পিড বোট, প্যাডেল বোট— দুইয়েরই ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। কানাকুণ্ডের মতো এই জায়গাও বিকেলে কিংবা ভোরে দেখতে বেশি ভাল লাগবে।

সরাফগড় জালাধার এবং বাঁধ।

সরাফগড় জালাধার এবং বাঁধ। ছবি: সংগৃহীত।

দুই রাত এখানে থাকলে আশপাশের সমস্ত জায়গা ঘুরে নেওয়া যাবে। ফেরার সময় একই পথে না গিয়ে জামশেদপুর হয়েও ফিরতে পারেন। সরাফগড় থেকে জামশেদপুর ৩৭২ কিলোমিটার। এখানে রাত্রিবাসের পাশাপাশি পরের দিন দলমা ঘুরে নিতে পারেন। জামশেদপুরেও ড্যাম, পার্ক রয়েছে। এখান থেকে কলকাতার দূরত্ব ২৮২ কিলোমিটার। দলমা ঘুরে এলে দূরত্ব পড়বে ৩১০ কিলোমিটার।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে বহড়াগড়া হয়ে ঘাটশিলার দূরত্ব ২৪১ কিলোমিটার। ৪-৫ ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন সেখানে। কলকাতা থেকে সরাসরি সরাফগড় যেতে সময় লাগবে ১০-১২ ঘণ্টার মতো।

কোথায় থাকবেন?

ঘাটশিলা এবং জামশেদপুরে একাধিক হোটেল আছে। সরফগড়ে থাকতে পারেন নেচার ক্যাম্পে।

Travel Tips Puja Travel Kanhakund Odisha Sarafgarh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy