পাহাড়ের কোলে জাঁসকার ও সিন্ধুর সঙ্গমস্থল
লেহ থেকে এ বার যাওয়া যাক কারগিলের দিকে, লেহ-শ্রীনগর সড়কপথ ধরে। এই পথের সৌন্দর্য, প্রাচীন গুম্ফা আর পর পর ছবির মতো ছোট-বড় জনপদের শোভা অত্যন্ত মনোরম। পথ গিয়েছে সিন্ধু নদের তীর বরাবর। প্রথমেই কিসক বোকুলা রিমপোচে বিমানবন্দর এবং তার প্রায় লাগোয়া স্পিতুক গুম্ফা। এ পথেই পড়বে বিখ্যাত ম্যাগনেটিক হিল। গাড়ির চালককে বলে রাখলে দেখিয়ে দেবে। উৎসাহীরা চাইলে তার আগে লেহ থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে ডানদিকের পথে আরও কিলোমিটার ছ’য়েক গেলে পৌঁছবেন পাহাড়ের কোলে ফিয়াং গুম্ফা এবং গ্রামে। ম্যাগনেটিক হিল পেরিয়ে নিমো গ্রামের আগে পড়বে সুন্দর জাঁসকার আর সিন্ধুর মিলনস্থল। গাড়িতে নেমে যাওয়া যায় সঙ্গমের কাছে।
স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের নির্দশন আলচি গ্রাম ও মন্দির চত্বর
যাত্রীদের জন্য বসার জায়গা ও ছাউনি রয়েছে সেখানে। শীতকালে জাঁসকার নদী জমে গেলে তার ওপর দিয়ে বিখ্যাত চাদর ট্রেক-এর শুরু হয় এখান থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার এগিয়ে চিলিং থেকে। এখানে কিছু ক্ষণ শোভা দেখে এগিয়ে যাওয়া যাক নিমোর দিকে। লেহ থেকে নিমো প্রায় ৩৯ কিলোমিটার, সুন্দর বর্ধিষ্ণু গ্রাম, প্রাতঃরাশ সেরে নেওয়া যেতে পারে পথের পাশের কোনও খাবারের দোকানে।
নিমো পেরিয়ে আরও প্রায় কিলোমিটার পাঁচেক এগোলে মাটির রং হয়ে ওঠে সুরকির মতো লাল, সেখান থেকে পথ চড়াই বেয়ে ওপরে উঠতে থাকে, ওপরে উঠে দেখা যায় প্রায় লাল পর্বতের গায়ে সাদা রঙের বাসগো গুম্ফার অবশেষ। এর পর টানা অনেক ক্ষণ একদম সোজা পথ চমকপ্রদ। আরও এগিয়ে সাসপোল, লেহ থেকে দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার।
লাল পাহাড়ের কোলে শ্বেতশুভ্র বাসগো গুম্ফার অবশেষ
সাসপোল পৌঁছবার আগে ডান দিকের পথে প্রায় ৯ কিলোমিটার গেলে বিখ্যাত লিকির গুম্ফা। লিকির শব্দের অর্থ সর্পবেষ্টিত। একাদশ শতকের সৃষ্ট গুম্ফার অভ্যন্তরীণ গঠন ও ফ্রেস্কো-র কাজ অনবদ্য। বাইরে সোনালি রঙের প্রায় ৭৫ ফুট উঁচু উপবিষ্ট বুদ্ধমূর্তি দর্শনীয়। দোকানপাট, খাবারের হোটেল, পথচলতি গাড়ির ভিড় নিয়ে সাসপোল বেশ জমজমাট জায়গা। সাসপোল ছাড়িয়ে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দূরে খালসে, সেখান থেকে পথ দু’ভাগে ভাগ হয়ে ডান দিকের পথ গেছে সিন্ধুর কূল বরাবর ডামখার, স্কুরবাচেন দা হয়ে বাতালিকের দিকে। আর সোজা পথ চলেছে কার্গিল। বাতালিকের পথে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে আর্য গ্রাম বলে পরিচিত একাধিক গ্রাম রয়েছে। তাদের মধ্যে দা এবং হানু পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। সুপ্রাচীন অতীতে সুদূর গিলগিট থেকে আগত দর্দ সম্প্রদায়ের মানুষের বাস এখানে। চাষবাস, পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলোর সঙ্গে এখনও বহির্বিশ্বের যোগাযোগ তেমন নেই। বনচোষ এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এই দর্দ বা ব্রোকপা মানুষেরা তাঁদের জীবন এখনও অতীতের অনুশাসন অনুযায়ী পালন করে চলেছেন। ভিন্ন সম্প্রদায়ে বিবাহ এখনও সিদ্ধ নয়। আমচি চিকিৎসা পদ্ধতি, পশুচামড়ার পোশাক, মাথার টুপিতে ফুল ও ফলের ব্যবহার এখনও প্রচলিত।
মোহময়ী হাসিতে আছে সুদূরের হাতছানি
সাসপোল থেকে খালসের দিকে একটু এগিয়ে বাঁ দিকে সিন্ধু পেরিয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে অসাধারণ সুন্দর আলচি গ্রাম ও মন্দির চত্বর। আলচি গুম্ফা আসলে কয়েকটি মন্দিরের সমষ্টি। কাঠ ও মাটি দিয়ে তৈরি কাশ্মীরি বাড়ির ধাঁচে লাখাং বা মন্দির, চোর্তেন আর মন্দিরগুলির অভ্যন্তরে অসাধারণ ফ্রেস্কো চিত্র ও মাটির সুবিশাল বুদ্ধ ও মঞ্জুশ্রী মূর্তি আলচি-র সম্পদ। দশম শতাব্দীতে গুরু রিনচেন জাংপো সম্ভবত এই গুম্ফার প্রতিষ্ঠাতা। এর দেওয়াল চিত্রগুলি সম্ভবত লাদাখ অঞ্চলের প্রাচীনতম ফ্রেস্কো বলে পরিচিত। আলচি থেকে মূল পথে ফিরে আরও এগিয়ে প্রায় ৫৬/৫৭ কিলোমিটার দূরে রুক্ষ, বন্ধুর পর্বতের পটভূমিকায় বিচিত্র লামায়ুরু গুম্ফা। এই অঞ্চলের বিচিত্র ভূমিরূপের জন্য অনেকে এখানকার নাম দিয়েছেন মুন ল্যান্ড। একাদশ শতাব্দীতে বিখ্যাত গুরু নারোপার প্রতিষ্ঠিত এই গুম্ফা লাদাখের অন্যতম বৃহৎ এবং প্রাচীন গুম্ফাগুলির অন্যতম। আদতে এটি তিব্বতি বন ধর্মাবলম্বীদের হলেও পরবর্তী কালে এটি দ্রিগুং কাগ্যু গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়।
রুক্ষ, বন্ধুর পর্বতের পটভূমিকায় লামায়ুরু গুম্ফা
লিকির, লামায়ুরু, আলচি দেখে ফিরে আসা যায় লেহ-তে। যাঁরা আর্য গ্রামে রাত কাটাতে চান তাঁরা এগিয়ে যান দা-এর দিকে। পর দিন লেহ ফেরার সময় লামায়ুরু, আলচি গুম্ফা দেখে ফিরতে পারেন। আর যাঁরা পাড়ি দেবেন কারগিল হয়ে অনন্যসুন্দর জাঁসকার উপত্যকায়, তাঁরা লেহ না ফিরে পর দিন পৌঁছে যান কার্গিল। যাঁরা দা গ্রামে রাত কাটাতে ইচ্ছুক নন তাঁরা রাত কাটাতে পারেন লামায়ুরু-তে। শুক্লপক্ষের চাঁদের আলোয় মুন ল্যান্ডের রহস্যময় ও বিচিত্র দৃশ্য সময় সময় অপার্থিব হয়ে ওঠে। কার্গিলের পথে মুলবেকে রয়েছে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু হাজার বছরের বেশি পুরনো দণ্ডায়মান মৈত্রেয় বুদ্ধমূর্তি, এটি দেখে এগিয়ে কার্গিল পৌঁছন ঠিক হবে।
অনন্যসুন্দর ও রহস্যময় মুন ল্যান্ড
তথ্যপঞ্জী:
লামায়ুরু-তে থাকা-খাওয়ার খরচ দু’জনের জন্য প্রায় ৪০০০ টাকা প্রতিদিন।
Hotel Moonland
মোবাইল: (91)9419888508
Email: hotelmoonland@gmail.com
Hotel Fotola
Mobile: 09469048470, Landline: 01982-224528
Dragon Hotel & Guest House
Phone: 094692 94037/+91 96 50 949347 / +91 9469294037
e-mail: dragonskyabu@gmail.com
ছবি: লেখক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy