Advertisement
E-Paper

কাকতীয় তেলঙ্গানা

এক দিকে প্রশান্তির লাকনাভারাম লেক, অন্য দিকে রামাপ্পা মন্দির... সৌন্দর্য ও ইতিহাসের সহাবস্থান এক দিকে প্রশান্তির লাকনাভারাম লেক, অন্য দিকে রামাপ্পা মন্দির... সৌন্দর্য ও ইতিহাসের সহাবস্থান তেলঙ্গানা

ভাস্কর্য: রামাপ্পা মন্দিরের বাইরের ভিউ

ভাস্কর্য: রামাপ্পা মন্দিরের বাইরের ভিউ

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২০ ০১:০৯
Share
Save

তেলঙ্গানা বলতেই প্রথম যে ছবিটা চোখের সামনে ফুটে ওঠে, সেটা হল চারমিনার আর গোলকোণ্ডা বেষ্টিত রাজধানী হায়দরাবাদ। বিরিয়ানির গন্ধে আর ঐতিহাসিক ঐশ্বর্য-দর্শনে ডুবে থেকে সহজেই ভুলে যাই, এই রাজ্য নিজাম বা মুঘল দ্বারা পরিচালিত হওয়ার আগে একাধিক শতাব্দী ধরে চোল, মৌর্য, সাতবাহন, চালুক্য, কাকতীয়, বাহমনি সাম্রাজ্যেরও অধীন ছিল। তার কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ এখনও ঝিনুকের মধ্যে মুক্তোর মতো লুকিয়ে রয়েছে তেলঙ্গানার আনাচকানাচে। হায়দরাবাদ থেকে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যেই কাকতীয় রাজবংশের এ রকম বেশ কিছু নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়।

কাকতীয় রাজবংশের পূর্বতন রাজধানী ছিল লাকনাভারাম। কিন্তু দ্বাদশ শতাব্দীতে সেই রাজধানী ওয়ারাঙ্গলে স্থানান্তরিত হওয়ার পরে, বিশাল জলরাশির মাঝে ১৩টি দ্বীপ আর তার চারপাশের পাহাড় ও জঙ্গল নিয়ে লাকনাভারাম লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বেশ কিছুটা পথ পেরিয়ে তার পর দেখা মেলে লাকনাভারাম লেকের। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শান্ত নীল জল যেন হাতছানি দেয় অনন্তের। পাকা রাস্তা থেকে দ্বীপগুলিতে যেতে গেলে লেকের উপর দিয়ে উজ্জ্বল হলুদ রঙের ঝুলন্ত সেতু একমাত্র ভরসা, যা এখানকার অন্যতম আকর্ষণও বটে। এই সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে সামনের জলরাশি পেরিয়ে পাহাড়ের পিছন থেকে সূর্যোদয় দর্শন— সব ক্লান্তি মুছে গিয়ে এক অদ্ভুত ভাল লাগায় মন ভরে ওঠে। ব্যস্ত শহর, নিয়ন আলো পেরিয়ে মনে হয় কোনও স্বপ্নরাজ্যে প্রবেশ করেছি, যেখানে শব্দ মানে শুধু জলের স্রোত আর রাতজাগা পাখির ডাক! আলো মানে গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্যের ছটা বা পূর্ণিমা রাত্রে জ্যোৎস্নাস্নাত লেকের জল অথবা জঙ্গলের বুকে অনেকটা জায়গা জুড়ে জ্বলতে থাকা গাছের সারি। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ওই জায়গা চাষযোগ্য করার জন্যই নাকি এই ব্যবস্থা! এই লেকের জলই আশপাশের গ্রামগুলি চাষের কাজে ব্যবহার করে আসছে কাকতীয় আমল থেকে। চারদিক পাহাড় আর শুকনো গাছের জঙ্গলের মাঝের উপত্যকায় এই নয়নাভিরাম হ্রদ সৃষ্টি —কাকতীয়দের প্রকৃতিপ্রেমেরই পরিচায়ক। এখন এই লেক, দ্বীপপুঞ্জ (এর মধ্যে প্রধানত তিনটি দ্বীপ) আর তার চার দিকের পাহাড়-জঙ্গল ও ঝুলন্ত সেতুটিকে কেন্দ্র করে তেলঙ্গানা সরকার পর্যটনকেন্দ্র স্থাপন করেছে ।

লেকের পাশের জঙ্গলে পরিযায়ী পাখির সন্ধানে অনেকেই জঙ্গলের মধ্যে পায়ে চলা পথ ধরে ট্রেকিংয়ে বেরিয়ে পড়েন। আবার অনেকে স্পিডবোটে চড়ে বাকি দ্বীপগুলোয় অ্যাডভেঞ্চারে যান। এ সব না করে শুধুমাত্র বিশ্রাম নিতে আর প্রকৃতিকে আঁজলা ভরে আস্বাদন করতে চাইলেও লাকনাভারাম হতাশ করবে না। লেকের জলে আর শুষ্ক জঙ্গলের মাথায় লাল সূর্যের প্রথম আলোর পরশ, রাতের নিস্তব্ধতা খানখান করে দেওয়া পাখির ডাকের শিহরন, পায়ের কাছে আছড়ে পড়া মিঠে ধ্বনির ছলাৎ ছলাৎ জলের ঢেউ, তাঁবুর ভিতরে প্রিয়জনের ওম... বেড়ানো মানে এই উপলব্ধিগুলোকেও ছুঁয়ে দেখা!

বিস্তার: লাকনাভারাম লেকের উপরে ঝুলন্ত সেতু

সেই রকমই লাকনাভারাম হ্রদের কাছাকাছি ইতিহাসের স্বাদ যাওয়া যায় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তৈরি পালাম্পেট গ্রামের রামাপ্পা বা রামালিঙ্গেশ্বর মন্দিরে। দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে স্যান্ডবক্স পদ্ধতিতে তৈরি এই মন্দিরের সিলিংয়ের খিলানগুলিতে এবং প্রতিটি থামে পাথরের তৈরি সূক্ষ্ম কারুকাজ বিস্ময় জাগায়। গর্ভগৃহের দরজার পাশের একটি থামে পাথরে খোদিত একটি বাঁশির গায়ে আঙুলের টোকা পড়লেই সপ্তসুর নির্গত হয়। সপ্তদশ শতকের প্রচণ্ড ভূমিকম্পে শুধু মন্দিরের মেঝে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাকি মন্দির এখনও অটুট। এখানে মানুষের আনাগোনা এখনও বড়ই কম; দূরের পাহাড়ের নীচে ছোট সুখী গ্রামগুলো দেখতে দেখতে মন্দিরের সিঁড়িতে বসে কল্পনায় এঁকেই ফেলা যায় কোনও ঐতিহাসিক উপন্যাসের প্লট...শময়িতা শীল

Travel Telangana

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}