Advertisement
E-Paper

মাথেরন-লাভাসা-মহাবালেশ্বর-পঞ্চগনি-খান্ডালা-লোনাভালা

পশ্চিমঘাট পাহাড়, উপত্যকা, নদী আর জঙ্গল। প্রকৃতি তার রূপ উজাড় করে দিয়েছে মহারাষ্ট্রের এ সব অঞ্চলে। আজ শেষ পর্ব।পশ্চিমঘাট পাহাড়ের ঢালে নিরালা অভিজাত নব্য ‘হ্রদশহর’ লাভাসা। পাহাড়স্থলী-ওড়াসগাঁও হ্রদ-উপত্যকা-কেতাদুরস্ত এলাকাটি নিজস্ব বিনিময়ে অপরূপ। ওড়াসগাঁও লেক— ২০ কিমি লম্বা হ্রদটিকে ঘিরেই পাখির বাসার মতো লাভাসা। ছবির মতো হ্রদ-উপত্যকা, চারপাশে প্রকৃতি বসে জাপটে ধরে।

মধুছন্দা মিত্র ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ২১:২৪
‘হ্রদশহর’ লাভাসা

‘হ্রদশহর’ লাভাসা

মাথেরন

রূপকথার পাহাড়ি ঠিকানা মাথেরন। পর্যটকের নিভৃত অবসর। ‘মাথেরন’ মরাঠি শব্দ। অর্থ বহু— ‘ফরেস্ট অফ দ্য টপ’, ‘ইডেন অফ কোঙ্কনপট্টি’, ‘উডল্যান্ড ওভারহেড’, ‘মাদার ফরেস্ট’। নানা প্রজাতির গাছপালা ও শ’দেড়েক ভেষজ ঔষধি গাছগাছালি ঘেরা ছিমছাম পাহাড়ি শহর। মাথেরন টয়ট্রেন স্টেশনকে মাঝখানে ছুঁয়ে ডাইনে প্যানোরমা পয়েন্ট, বাঁয়ে ওয়ান ট্রি পয়েন্ট পর্যন্ত ব্যাপ্ত শহর। জলবায়ুও দারুণ স্বাস্থ্যপ্রদ। এ পাহাড়ি শহরে যন্ত্রচালিত যানবাহনের সম্মতি নেই। হাঁটা পথে টাট্টু ঘোড়া, পনি, হাতেটানা এক আসনের রিকশাই ভরসা। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য ক্যামেরায় ধরে রাখার মতো। মাথেরনের গাছগাছালি ছাওয়া রাঙামাটির পথে খুশির হাতছানি। দোসর যখন পরমা প্রকৃতি।

রূপকথার পাহাড়ি ঠিকানা মাথেরন

আরও পড়ুন: সোনালি বালুতট-মায়াবী সূর্যাস্ত-পর্বতমালার হরিয়ালি, ডাকছে কোঙ্কন

কী ভাবে যাবেন

প্রথমে মুম্বই। মাথেরন মাত্র ১০৮ কিমি। মুম্বই থেকে নেরাল পৌঁছে, খেলনা রেলে ন্যারোগেজ লাইনে ২১ কিমি দুলকি চালে মাথেরন। অসামান্য অভিজ্ঞতা এই রেলযাত্রায়, ২৮১টি রোমহর্ষক বাঁক, শুধুই আদিম রোমাঞ্চ।

কোথায় থাকবেন

ছবির মতো মাথেরন পাহাড়ি শহরে হোটেল, রিসর্ট, হলিডে হোম, ধর্মশালা প্রচুর। ভরা মরসুমে প্যাকেজ প্রথাও চালু আহার সমেত। বেশির ভাগই নিরামিষ আহার। মহারাষ্ট্র পর্যটন আবাস দস্তুরিনাকার পাশেই। অনলাইন বুকিং: matheranmtdc@ maharashtratourism.gov.in

কী দেখবেন

নয়নাভিরাম পাহাড়ি নিসর্গ মাথেরনে ভুরি ভুরি প্রকৃতিবীক্ষণস্থল। অন্তত দুটো দিন সকাল বিকেল লেগে যাবে প্রতিটি পয়েন্ট দেখতে। এমজি রোড বরাবর বাজারপয়েন্ট ঘোরা ও কেনাকাটা।

মাথেরনে টয় ট্রেন

লাভাসা লেকসিটি

পশ্চিমঘাট পাহাড়ের ঢালে নিরালা অভিজাত নব্য ‘হ্রদশহর’ লাভাসা। পাহাড়স্থলী-ওড়াসগাঁও হ্রদ-উপত্যকা-কেতাদুরস্ত এলাকাটি নিজস্ব বিনিময়ে অপরূপ। ওড়াসগাঁও লেক— ২০ কিমি লম্বা হ্রদটিকে ঘিরেই পাখির বাসার মতো লাভাসা। ছবির মতো হ্রদ-উপত্যকা, চারপাশে প্রকৃতি বসে জাপটে ধরে। খানিক জিরেন হবে। ওপাশে ওড়াসগাঁও বা বাজি পাসলকর বাঁধ। লাভাসা প্রকৃতি ও পরিবেশের রম্য মিশেল। তবে চটকদার যেমন ঠাটবাটও তেমন। মূল লেকসিটি ঢোকার বিশাল প্রবেশতোরণ, কাচ ঘেরা তোরণদ্বার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা জেনে নেবে কিছু জরুরি প্রশ্ন, তার পর প্রবেশের ছাড়পত্র মিলবে। জাঁকালো বিদেশিপনা আছে এই লেকসিটিতে। ইউরোপিয়ান স্টাইলের অট্টালিকা, টাউন হল, অভিজাত পোর্টেফিনো স্ট্রিট, বুলেভার্ড, বিদেশি নাগরিক ও সেলিব্রিটিদের প্রাচুর্যময় নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্ট। বিলাসবহুল মহার্ঘ হোটেল, ওয়াটার কমপ্লেক্স। এতটাই সুন্দর, অভিজাত, অথচ অদ্ভুত কৃত্রিমতায় আচ্ছন্ন। সমস্ত এলাকার স্বাচ্ছন্দ্য ও রক্ষণাবেক্ষণে সজাগ অতন্ত্র প্রহরা। পরিচিত হিল স্টেশনগুলির মতো একেবারেই ভিড়ভাড়াক্কাহীন, বিশৃঙ্খলাহীন, যানজটহীন বেশি রকম পরিচ্ছন্ন লাভাসা।

কী ভাবে যাবেন

মুম্বই বা পুণে থেকে গাড়ি ভাড়া করে লাভাসা। মুম্বই-লাভাসা ১৮৭ কিমি। পুণে-লাভাসা ৫৭ কিমি।

কোথায় থাকবেন

এমটিডিসি অনুমোদিত লেক ভিউ কটেজ (www.lakeviewcottagedavelavasa.com), এক্সথ্রিল (connect@xthrill.in), এরান্ত রির্টিট, অ্যালিয়েন্স, পোটেফিনো রয়েল, দ্য ওয়াটারফ্রন্ট’স, প্রক্সেটিক স্টুডিয়ো ইত্যাদি বহু মহার্ঘ হোটেল আছে।

হেল্পলাইন: ৯০৯৬০০১০০১/ ৯৫০৩০০১০০১

মহাবালেশ্বর

মোহময়ী প্রকৃতির স্নিগ্ধ রূপ উপভোগ করতে মহারাষ্ট্রের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সহ্যাদ্রীর উঠোনজোড়া মহাবালেশ্বর। অপার সৌন্দর্য ও অনবদ্য ঋতুবৈচিত্রে যে কোনও নামজাদা শৈলশহরকেই টেক্কা দেবে। বর্যায় মহাবালেশ্বর মায়াবী। ওক, ফার, বার্চ, উইলো গাছের পাতায় রিমঝিম বৃষ্টিফোঁটা, মেঘেদের নেমে আসা, সব মিলিয়ে মহাবালেশ্বরের রূপ আরও খোলতাই তখন। সবুজের স্বরলিপি আর নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া কৃষ্ণা নদীর লাবণ্য।

কী ভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে পুণে পৌঁছে গাড়িতে মহাবালেশ্বর ১৩০ কিমি। মুম্বই থেকে ২৪৭ কিমি।

কোথায় থাকবেন

এমটিডিসি হলিডে রিসর্ট যথেষ্ট ভাল। বুকিং: mahabeleshwarmtdc@ maharashtratourism.gov.in

এ ছাড়াও নানা মানের প্রচুর হোটেল আছে। ফোন: ০২১৬৮-২৬০৩১৮/ ২৬১৩১৮

কী দেখবেন

মহাবালেশ্বরের প্রধান আকর্ষণ ভেন্না লেক। পঞ্চগঙ্গার জল জমিয়ে সৃষ্ট হ্রদটি। পাহাড়ঘেরা চারপাশ। পর্যটকদের জন্য বিনোদনী নৌবিহার। অগণিত প্রকৃতিবীক্ষণ এখানে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে। গাড়িতে গিয়ে তার পর পায়ে হেঁটেই দেখে নেওয়া যায় আর্থার সিট বা ম্যাজিক, এলিফ্যান্ট, ম্যালকম, ইকো, নিডলহোল, সুইসাইডাল, হান্টিং, সাবিত্রী, টাইগারস, উইলসন, মাঙ্কি, মাজুরি পয়েন্টগুলি। পাঁচ কিমি দূরে পঞ্চগঙ্গা বা কৃষ্ণাবাঈ মন্দির। কৃষ্ণা-কাবেরী-সাবিত্রী-গায়ত্রী-বীনা— এই পাঁচ নদীর পবিত্র জল কুণ্ডে জমা হয়। অতিবালেশ্বর ও মহাবালেশ্বর, মারুতি, শ্রীজান্নিমাতা, দত্তা মন্দিরগুলিও দ্রষ্টব্য।

কেনাকাটা

শুধু প্রকৃতি দেখাই নয়, অবশ্যই স্বাদ নেবেন স্ট্রবেরিকুচির আইসক্রিম। স্মারক হিসেবে প্যাক করা স্ট্রবেরি, সরবত, মধু, চটি, কাঠের জিনিস।

পঞ্চগনি

সহ্যাদ্রীর কোলে নিরালায় ছুটি কাটাতে পঞ্চগনির তুখোড় বাতাবরণ সেরা গন্তব্য। দৃষ্টির নাগালে তার অসামান্য ঐতিহ্য— কৃষ্ণা নদীর নীলাভ আহ্বান, ধোম জলাধার, স্ট্রবেরি খেত, ওক-ফার-পোয়েনসিটিয়া ছাওয়া মায়াবী পরিবেশ। সহ্যাদ্রী রেঞ্জের পাঁচ পাহাড়ের মাঝে পাঁচটি গ্রাম নিয়ে পঞ্চগনি পাহাড়ি শহরটির বিস্তার। পাহাড়ে খাঁজ গলে কৃষ্ণা নদীর ঠমকদমক মনোরম আবহাওয়া। প্রকৃতি সঙ্গে পাহাড়, নদী, মালভূম, অধিত্যকা, জনপদ ও স্ট্রবেরি বাগানের নৈসর্গিক শোভা বর্ণনাতীত সুন্দর।

কী ভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে রেলপথে বা বিমানে মুম্বই। সড়কপথে মুম্বই-পঞ্চগনি ২৪৪ কিমি।

কোথায় থাকবেন

পঞ্চগনিতে প্রচুর হোটেল, রিসর্ট, হলিডে হোম ইত্যাদি রয়েছে। বছরের যে কোনও সময়ই চলে যাওয়া যায়।

কী দেখবেন

চার দিকে পাহাড়ের মাঝে এক পাহাড়ের মাথায় বিশাল সমতলভূমি, টেবলল্যান্ড। এশিয়ার অন্যতম দ্বিতীয় বৃহত্তম। ধু ধু প্রান্তরটি আশ্চর্য রকম লাল। বলিউডের প্রচুর সিনেমার শুটিং লেগেই থাকে এখানে। পান্ডবদের অজ্ঞাতবাসকালীন গভীর এক গুহাও রয়েছে। কাছেই পার্সি, অ্যাপেক্স ও সিডনি পয়েন্ট। গাড়ি নিয়ে চলে যাওয়া যায় পীর সাহেবের দরগা। পঞ্চগনি থেকে ফিরতিপথে ওয়াই গ্রামটি হল মহাভারতের বিরাট নগরী। ছবির মতো সুন্দর। এখানেও প্রচুর সিনেমার শুটিং হয়। আর দেখবেন স্ট্রবেরি খেত।

রসনাতৃপ্তি

অবশ্যই এখানকার অতি জনপ্রিয় তাজা রসালো স্ট্রবেরি উইথ ফ্রেশ ক্রিম।

খান্ডালা

সবুজের রম্য উঁকিঝুঁকি সহ্যাদ্রীর ৬২৫ মিটার উচ্চতায় অসম্ভব সুন্দর খান্ডালা জনপদ। ভোরঘাট পাহাড়ের প্রান্তসীমা যেখানে ডেকান অধিত্যকা এবং কোঙ্কনের সমতল প্রায় মিশে যাওয়ার অপেক্ষায়— সেই স্থানেই খান্ডালা শৈলশহর। খান্ডালার ‘ডিউক নোজ’ থেকে অসাধারণ দেখায় খান্ডালা ও ভোরঘাট পাহাড়ের নিসর্গলিপি। চারপাশে সদ্য ঘুমভাঙানিয়া সবুজ পাহাড়। শ’তিনেক ফুট উঁচু থেকে ঝাঁপিয়ে আসা ভূসির উচ্ছ্বল জলাধারটি চিত্তাকর্ষক। প্রকৃতির সঙ্গে জমে যাবে মৃদুভাষ আলাপপর্ব।

ভূসির উচ্ছ্বল জলাধার

কী ভাবে যাবেন

মুম্বই থেকে সড়ক দূরত্ব ৭৭ কিমি। ঘণ্টা দেড়েকের পথ মুম্বই-পুণে এক্সপ্রেসওয়ে ধরে। রেলপথে খান্ডালা যাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে রত্নগিরি প্যাসেঞ্জারে রাসায়নি স্টেশনে নেমে সেখান থেকে সড়কপথে খান্ডালা। মাত্র ৩ কিমি দূরেই খান্ডালার যমজ শহর লোনাভলা। ৭ কিমি দূরে কার্জাট নামের সুন্দর আরও এক শহরতলি।

কী দেখবেন

খান্ডালার রূপ খোলতাই হয় বর্ষার মরসুমে। দর্শনীয় পয়েন্ট বহু। টাইগারস লিপ, কুনে পয়েন্ট, সানসেট পয়েন্ট, সুইসাইড পয়েন্ট, টাইগারস ক্লিভ, রাজামঞ্ছি ফোর্ট, মাঙ্কি হিল, শুটিং পয়েন্ট, ভুসি ড্যাম, ডিউজ নোজ, শিবাজি পার্ক, রিউড পার্ক, সেলিব্রিটি ওয়াকস মিউজিয়াম ইত্যাদি।

কোথায় থাকবেন

প্রচুর হোটেল, রিসর্ট, ভিলা ইত্যাদি আছে।

আরও পড়ুন: দক্ষিণ কেরলের পাহাড়ে, জঙ্গলে, সমুদ্রে

লোনাভালা

পশ্চিমঘাট পাহাড়ের কোলে ২০৪৭ ফুট উচ্চতায় দিশাহীন সবুজ জেল্লায় বিছিয়ে অপরূপা লোনাভালা। লোনাভালা-খান্ডালা যমজ পাহাড়ি শহর। প্রাচীন সংস্কৃত শব্দ। ‘লোনলি’ থেকে এসেছে লোনাভালা নাম যার অর্থ ‘গুহার শহর’। কারলা-ভাজা-বেদমা, তিনটি বৌদ্ধগুহা রয়েছে কাছেপিঠে। প্রকৃতির সঙ্গে গল্পগাছায় পেরিয়ে যাবে প্রতিটি মুহূর্ত। হাত বাড়ালেই যেন ছুঁয়ে ফেলা যাবে পাহাড়-উপত্যকা-হ্রদ-গুহার প্রাঞ্জল ব্যাপ্তি। লোনাভালার রম্যতা।

সবুজে ঘেরা লোনাভালা

কী ভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে ট্রেনে বা বিমানে মুম্বই। মুম্বই-পুণে এক্সপ্রেসওয়ে ধরে কমবেশি দেড় ঘণ্টায় ৬৪ কিমি লোনাভালা।

কোথায় থাকবেন

অগুনতি হোটেল। অনেক হোটেলেই প্যাকেজ ট্যুর প্রথায় কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট অথবা একবেলা ডিনারের ব্যবস্থা আছে। বর্ষাকাল এখানকার পিক সিজন। বর্ষা পড়তেই পর্যটকেরা ছুটে আসেন।

কী দেখবেন

বর্ষায় প্রকৃতি সৌন্দর্যময়ী। এখানে লোনাভালায় পরিচয় হবে টুঙ্গারলি হ্রদ, পাভলা লেক, ব্যারোমিটার হিল, লায়ন, রাজমাচি ও শ্যুটিং পয়েন্ট, টাইগার লিপ, শিবাজি উদ্যান, ভারতীয় বায়ুসেনা ও নৌসেনা কেন্দ্র। হীনযান বৌদ্ধ গুহা ভাজা, মোট ১৮টি গুহার সমাবেশ। কারলা গুহা ভারতের বৃহত্তম বৌদ্ধ চৈত্য।

কেনাকাটা: লোনাভালার লোভনীয় অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘চিক্কি’ (বাদামতক্তি)। লোনাভালার মহাবীরস্বামী চকে সার দিয়ে চিক্কির দোকান।

‘গুহার শহর’ লোনাভালা

কারনালা

এক দিকে সহ্যাদ্রীর অনন্ত শ্যামলিমা, অন্য দিকে প্রকৃতির মায়াবী চমক-পাখপাখালির অজস্র কিচিরমিচির নিয়ে আগামী ছুটির কয়েক দিন পেতে পারেন কারনালার নিসর্গ আতিথেয়তা। মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার পশ্চিমঘাটের পাহাড়ি টিলায় কারনালা দুর্গ ও পাখিরালয় নিয়ে বছরভর জমজমাট কারনালা। নাতিদীর্ঘ পাহাড় ঘেরা চারপাশ, তাতে ঘন সবুজের বুনোট। পায়ে হেঁটেই পৌঁছে যাওয়া যায় কারনালা দুর্গের একেবারে টংয়ে। বিখ্যাত কারনালা পাখিরালয়ে প্রায় ২২২ প্রজাতির পাখির আস্তানা। এ ছাড়াও প্রায় চল্লিশের অধিক পরিযায়ী পাখির শীতকালভর নিত্য আনাগোনা।

কী ভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে মুম্বই। মুম্বই সিএসটি থেকে লোকাল ট্রেনে পানভেল স্টেশন এসে অটোরিকশায় মাত্র ১২ কিমি দূরত্বে কারনালা। মুম্বই থেকে টানা গাড়িতেও সহজে পৌঁছে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন

বহু রিসর্ট ও রেস্তোরাঁ রয়েছে থাকার। সবুজ পাহাড়ি ঘেরাটোপে এখানকার সুন্দর কটেজগুলোয় থাকতে মন্দ লাগবে না।

চিকলদারা জঙ্গল

মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ অঞ্চলের মাতপুরা পাহাড়, নারনালা দুর্গ, গাওয়িলগড় দুর্গ, তাপ্তি নদী, মহারাষ্ট্রের একমাত্র কফিবাগান, মহাভারতের কীচকবধ কাহিনি ও নিবিড় প্রকৃতি নিয়ে চিকলদারা। বাড়তি পাওনা বনের প্রাণীদের অবাধ্য সান্নিধ্য। মাতপুরা পাহাড়ের গায়ে নিসর্গের সংজ্ঞা বিরল রোদছায়া প্রাণখোলা প্রান্তর নিয়ে চিকলদারা। মধ্যপান্ডব ভীম, বিরাটরাজার শ্যালক কীচককে বধ করে এই উপত্যকা থেক ছুড়ে ফেলে দেন। মরাঠা শব্দ ‘দারা’ মানে উপত্যকা।

কী ভাবে যাবেন

কলকাতা বা মুম্বই থেকে মহারাষ্ট্রের অমরাবতী স্টেশন। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে চিকলদারা ৯৮ কিমি।

কোথায় থাকবেন

মহারাষ্ট্র পর্যটনের হলিডে রিসর্ট-এর অনলাইন বুকিং: chikhaldaramtdc@maharashtratourism.gov.in

ফোন: ০৭২২০-২৩০২৩৪/২৩০২৬৩। চেক ইন: ১.৩০, চেক আউট: ১২.০০

কী দেখবেন

মেলঘাট টাইগার রিজার্ভ ছমছমে জঙ্গল। পাঞ্চোল পয়েন্ট বা স্থানীয়রা বলেন ‘পঞ্চবোল’। এখানে উচ্চৈস্বরে কোনও শব্দ বললে পাঁচ বার গুঞ্জরিত হয়। ভীম কুন্ড, পান্ডবগুহা, অম্বাদেবী মন্দির, বীর লেক। এ ছাড়া সরকারি বোটালিকাল গার্ডেন বা কোম্পানি গার্ডেন, দ্বাদশ শতকের গাওয়িলগড় দুর্গ, নিসর্গ ছুঁয়ে হ্যারিকেন, দেবী, প্রসপেক্ট পয়েন্ট, মুক্তগিরি জৈনমন্দির, ট্রাইবাল মিউজিয়াম ও আরও কিছু দ্রষ্টব্য।

বোর অরণ্য

অরণ্যের দিনরাত্রি নিয়ে মহারাষ্ট্রে ভারতের কনিষ্ঠ অভয়ারণ্য বোর ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি। মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধা জেলার সেলু তালুকে বোর অরণ্য চিরে বয়ে যাচ্ছে বোরি নদী। গুমোট জঙ্গলপথে দেখা মিলতে পারে হরিণ, ময়ূর, বন্য শুয়োর, শম্বর, বাইসন, নীলগাই, বনবিড়াল, হায়না ইত্যাদি। ভাগ্যে থাকলে বাঘও জঙ্গলের মধ্যে নজরমিনার। বোর ব্যাঘ্রপ্রকল্প ভারতের মধ্যে ৪৭তম। বোর অরণ্য পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভেরই সম্প্রসারণ মাত্র।

কী ভাবে যাবেন

মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধা স্টেশন থেকে সেলু হয়ে নাগপুর-ওয়ার্ধা হাইওয়ে পেরিয়ে।

কোথায় থাকবেন

মহারাষ্ট্র সরকারের অতিথি নিবাসটি চমৎকার। পাশেই বোর জলাধার সার দেওয়া কিছু কটেজ।

কী দেখবেন

ভোর ছ’টা থেকে শুরু হয়ে যায় জঙ্গল সাফারি। শেষ সাফারি দুপুর তিনটে। অভয়ারণ্য বন্ধ থাকে সোমবার। বোর ব্যঘ্রপ্রকল্প ছাড়াও জলাধার, বৌদ্ধবিহার, প্রাচীন শিব মন্দির, ভুষাপতি জৈন মন্দির, গণেশ ও হনুমান মন্দির। খানিক দূরে ওয়ার্ধা স্টেশন থেকে ৮ কিমি দূরে মহাত্মা গাঁধীর স্মৃতিবিজড়িত সেবাগ্রামটি অবশ্য দ্রষ্টব্য।

আরও পড়ুন: লাচুং-ইয়ুমথাং-লাচেন-গুরুদোংমার

তাড়োবা-আন্ধেরি অরণ্য

বনজ নেশায় বুঁদ হয়ে অরণ্যের ঘেরাটোপে যেখানে শ্বাপদের চলমান পথ খুঁজে থমকে যাওয়া ও বাঘের রাস্তা পারাপার হওয়ার আরণ্যক ছবি। মহারাষ্ট্রের প্রাচীন ও বৃহত্তম তাড়োবা জঙ্গল, ব্যাঘ্র প্রকল্প। স্থানীয় আদিবাসী দেবতা ‘তাড়োবা’ বা ‘তারু’ নামের সঙ্গে মিলিয়ে ঘন অরণ্যের নাম হয়েছে তাড়োবা। প্রতি পৌষমাসে খুব ধুমধাম মেলা বসে তাড়োবা লেকের ধারে মন্দিরে। ১৯৫৫ থেকে অরণ্যটি ন্যাশনাল পার্কের মান্যতা পায়। গত বছর বাঘসুমারি থেকে জানা যায়, আপাতত সর্বমোট ৮৮টি বাঘ আছে এই অরণ্যে। গাউর, প্যান্থার, সম্বর, বাইসন, বার্কিং ডিয়ার, খ্যাঁকশিয়াল, বন্যকুকুর, চিতা, হায়না, নীলগাই, লঙ্গুর ইত্যাদি প্রাণীর বসবাস এ জঙ্গলে। আর আছে ঝাঁক ঝাঁক নানা প্রজাতির পাখি।

কী ভাবে যাবেন

ট্রেনে বা বিমানে নাগপুর। সেখান থেকে গাড়িভাড়া করে তাড়োবা মোহারলি ১৩৭ কিমি।

কোথায় থাকবেন

মহারাষ্ট্র পর্যটনের হলিডে রিসর্ট, তাড়োবা জঙ্গল রিসর্ট, ভদ্রাবতী তালুকে। অনলাইন বুকিং tadobamtdc@maharastratourism.gov.in

চেক ইন: দুপুর ১.৩০টা, চেকআউট: দুপুর ১২.০০। এ ছাড়াও রয়েছে ঘেরাই টাইগার ক্যাম্প, স্তাসারা জঙ্গল লজ, ইরাই সাফারি রিট্রিট, টাইগার ট্রেইল জঙ্গল ইকো লজ। ফেব্রুয়ারি থেকে মে হল এখানকার ভরা মরসুম।

জঙ্গল সাফারি

জিপসি ও জিপ সাফারি শুরু ভোর ৬টা থেকে বেলা ১০টা এবং দুপুর ৩টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা।

ছবি: লেখক

Tourist Spots Holiday Destination Tour Packages Maharashtra Lonavala
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy