পর পর বিমান বিপত্তি! অনেকে বিমানে যাত্রা করতেই ভয় পাচ্ছেন। মনে হচ্ছে, এটিই যেন তাঁর জীবনের শেষ বিমানযাত্রা না হয়ে যায়। এমনই সময়ে অভিনেত্রী শেফালি শাহ বিমান থেকে ছবি তুলে পোস্ট করলেন সমাজমাধ্যমে। কেবল যাত্রার ছবি দেওয়া বা জীবনের খুঁটিনাটি জানানোই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। বরং এই প্রথম বার বিমানের নিরাপত্তা, বিমান দুর্ঘটনার কথা মাথায় এল তাঁর। সাম্প্রতিক সময়টিকে 'বিমানযাত্রার অতিমারি' হিসেবে চিহ্নিত করলেন অভিনেত্রী।
অতিমারি কেন? গত দেড় মাসে বিমান দুর্ঘটনার খবরে ছয়লাপ সংবাদমাধ্যম। বিশ্ব জুড়ে একের পর এক বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে। তা ছাড়া ঠিক কত বিমান যে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে মাঝআকাশে বিপদে পড়েছে, তা গুনতে গেলে বেগ পেতে হবে। গত জুন মাসে অহমদাবাদের লোকালয়ে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান। মৃত্যু হয়েছিল ২৬০ জনের। তার পর একই সংস্থা-সহ অন্যান্য সংস্থার একাধিক বিমানে নানাবিধ যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ায় মাঝরাস্তা থেকে ফিরে আসে। কোথাও আবার আগুন ধরে যায় বিমানে। ও দিকে রাশিয়ায় একটি নিখোঁজ বিমানের ধ্বংসাবশেষ মেলে। অন্য দিকে, বাংলাদেশের ঢাকায় স্কুলভবনে বায়ুসেনার বিমান ভেঙে পড়ে। লন্ডন সাউথএন্ড বিমানবন্দরে আরও একটি বিমান ভেঙে পড়ে ওড়ার সঙ্গে সঙ্গেই।
কী ভাবে আতঙ্কের মধ্যেও ঘণ্টা কয়েকের আকাশযাত্রা সুন্দর করে তোলা যায়? ছবি: সংগৃহীত।
এমনই সময়ে শেফালি উঠলেন বিমানে। জানলার দিকে তাকিয়ে থাকা একটি ছবিও পোস্ট করলেন। সঙ্গে দীর্ঘ ক্যাপশন। ‘আজব উড়ান অতিমারি’ মধ্যে তিনি যে ভয় পাচ্ছেন, এমন নয়। কিন্তু মন থেকে ঝেড়ে ফেলতেও পারছেন না সমস্ত ঘটনার কথা। কিন্তু অভিনেত্রীর সফর অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ কৌশল আসলেই শিক্ষণীয় যে, কী ভাবে আতঙ্কের মধ্যেও ঘণ্টা কয়েকের আকাশযাত্রা সুন্দর করে তোলা যায়। শেফালি বিমানবন্দর পৌঁছোনো থেকে আকাশে ওড়ার পর পর্যন্ত বিস্তারিত রুটিনের কথা বললেন। যার প্রতি পদে কেবলই ভ্রমণপিপাসুর সুর।
প্রথম বার বিমানে ওঠার সময়ে যে রোমাঞ্চ তাঁর হয়েছিল, ঠিক তেমনই আজও প্রতি বারের যাত্রায় অনুভব করেন ৫২ বছরের অভিনেত্রী। সময়ের আগে বিমানবন্দরে পৌঁছে যাওয়া, ব্যাগপত্রের দায়িত্ব সংস্থার কাঁধে সঁপে দেওয়া, জানালার পাশে বসার জন্য বোর্ডিং পাস চেক করা, চেক-ইনের পর এক কাপ কফি বা বইয়ের দোকানে একটু ঢুঁ মারা, বিমানবন্দর থেকে উত্তেজনা তৈরি হয় তাঁর। মধ্যরাতের উড়ানে বেশি আনন্দ পান তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘‘যখন গোটা শহর ঘুমোয়, তখন বিমানবন্দরের ভিতরে অন্য এক জগৎ। সবাই ব্যস্ত।’’ চারপাশের সেই পরিবেশের ভিতর নিজেকে খুঁজে পান তিনি। অন্য ভাবে।
আরও পড়ুন:
বিমানে ওঠার পর জুতো খুলে নরম মোজা পরে বসে পড়া, সিট বেল্ট বেঁধে হালকা চাদর মুড়ি দিয়ে আরাম করে বসা, গরম তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে এক কাপ পানীয়ে চুমুক দেওয়া, ম্যাগাজ়িন পড়া, জানলার বাইরে তাকিয়ে রানওয়েতে বিমানের সারি দেখা— শেফালির কাছে প্রতিটি মুহূর্ত খুব আনন্দদায়ক।
কিন্তু পর পর দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণ হারানোর খবর শুনতে শুনতে নতুন উপলব্ধি হয় শেফালির। তিনি লিখলেন, ‘‘এত বছর ধরে যাতায়াত করছি, কিন্তু কখনও মনে হয়নি, এটাই হয়তো আমার শেষ যাত্রা।’’ আতঙ্ক নয়, বরং এত বছর নিরাপদ থাকার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা নিয়ে এখনও তিনি প্রতিটি যাত্রা শুরু করেন। আকাশে ওঠা এখন তাঁর কাছে কেবল গন্তব্যে পৌঁছানো নয়, এক আশীর্বাদ। সকলেই যেন এই আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন, সকলেই যেন নিরাপদে থাকেন, এই প্রার্থনা করতে করতে এ বার বিমান সফর সারলেন শেফালি।
অভিনেত্রীর মতো আপনিও নিজের বিমানযাত্রাকে আতঙ্কের না করে, সুখকর করে তুলতে পারেন। প্রয়োজন কেবল নিজের সঙ্গে কথা বলা। যাত্রার সময়টি আসলে নিজের। পৃথিবীর কোলাহল, সমস্যা থেকে দূরে থাকার সময় এটি। বই পড়া, গান শোনা, ধ্যান করে নিজেকে সময়টি দিন। এতেই সফর সুন্দর হবে।