আগ্রহ-অপেক্ষা ছিলই। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান হল। দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হয়েছে এই বছর। প্রথম বার সেখানে রথযাত্রা। তাই নিয়েই সাজে সাজ রব। প্রাচীনত্ব ও ঐতিহ্যের নিরিখে রথযাত্রা বললেই প্রথমেই নাম আসে পুরীর। ওড়িশার এই সৈকতশহরে লক্ষ লক্ষ মানুষ ছুটে আসেন একটি বার জগন্নাথদেবের রথের রশি স্পর্শ করতে। সেই তালিকায় থাকেন বঙ্গের মানুষও। তবে নতুনত্বের টানও যে কম নয়, দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের পর থেকে পর্যটকের ভিড় তারই প্রমাণ। শুধু দিঘা নয়, কলকাতার আনন্দপুরেও এ বছর নতুন জগন্নাথ মন্দির হয়েছে। এ বছর রথের সময়ে ঘুরে নিতে পারেন নতুন এবং পুরনো মিলিয়ে এ রাজ্যেরই পাঁচ জগন্নাথ মন্দির।
দিঘার জগন্নাথ মন্দির
দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।
নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০২২ সালে। তার তিন বছর পর প্রায় ২০ একর এলাকা জুড়ে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরি হল। অক্ষয়তৃতীয়ায় মন্দিরের দ্বারোদঘাটন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বছরই প্রথম বার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরে রথযাত্রা। শুধু রথযাত্রা নয়, মন্দির নিয়েও জনমানসে আগ্রহ কম নেই। মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীও নজরকাড়া। নাটমন্দিরটি দাঁড়িয়ে রয়েছে ১৬টি স্তম্ভের উপরে। মূল মন্দিরে রয়েছে ভোগমণ্ডপ, নাটমন্দির, জগমোহন এবং গর্ভগৃহ। ভিতরে সিংহাসনে রয়েছে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি। নিমকাঠের তৈরি মূল বিগ্রহের পাশাপাশি পাথরের মূর্তিও রয়েছে। এ ছাড়া, রয়েছে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহও। রথযাত্রার দিনে বা রথ এবং উল্টো রথের মধ্যবর্তী সময়ে ঘুরে আসতে পারেন মন্দির থেকে।
মাহেশের জগন্নাথ মন্দির
শ্রীরামপুর মাহেশের জগন্নাথ মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।
নতুনের প্রতি বাড়তি আকর্ষণ তৈরি হলেও প্রাচীনত্বের আলাদা ঐতিহ্য থাকেই। সেই জায়গাতেই দিঘার রথযাত্রাকে টেক্কা দিতে পারে হুগলির শ্রীরামপুরের মাহেশের রথ। প্রাচীনত্ব ও ঐতিহ্যের বিচারে বাংলার মধ্যে হুগলির মাহেশের রথের স্থান সম্ভবত সর্বাগ্রে। ছ’শো বছরেরও বেশি পুরনো মাহেশের রথ। মাহেশের জগন্নাথ মন্দির থেকে মাসির বাড়ি বল্লভপুরে নিয়ে যাওয়া হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে যেমন আবেগে ভাসে পুরী, মাহেশও তেমনই। মাহেশে রথযাত্রা দেখতে এলে ঘুরে যেতে পারেন জগন্নাথ মন্দিরে। মাহেশের জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৩৯৬ খ্রিষ্টাব্দে। জানা যায়, জগন্নাথ ভক্ত ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারীর হাত ধরেই পুজোপাঠ শুরু হয়েছিল মাহেশে। পুরনো মন্দির সংস্কার করে নতুন মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে কয়েক বছর আগে।
খিদিরপুরের জগন্নাথ মন্দির
খিদিরপুরের জগন্নাথ মন্দির তৈরি হয়েছে পুরীর মন্দিরের আদলে। ছবি: সংগৃহীত।
খিদিরপুর ট্রাম ডিপোর কাছেও রয়েছে জগন্নাথ মন্দির। বর্তমান মন্দিরটি পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে ২০০৩ সালে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরেই মতোই এখানেও অরুণ স্তম্ভ, গরুড় স্তম্ভ এবং রত্নবেদি রয়েছে। ১৯৬৯ সালে এখানে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন সেটি ছিল আকারে ছোট। ধীরে ধীরে এই মন্দিরের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। নতুন মন্দির গড়ে ওঠে। প্রতি বছরই ধুমধাম করে রথযাত্রা হয় এখানে।
আনন্দপুরের জগন্নাথ মন্দির
আনন্দপুরে নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির। ছবি:সংগৃহীত।
কলকাতার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে আনন্দপুরে এই বছর তৈরি হয়েছে জগন্নাথ মন্দির। ১০ কাঠা জায়গায় ৫৫ ফুট উঁচু মন্দির নির্মিত বেলেপাথর দিয়ে। পুরী থেকে আনা নিমকাঠে তৈরি এখানকার জগন্নাথের মূর্তি।
নিউ টাউনের জগন্নাথ মন্দির
নিউ টাউনের জগন্নাথ মন্দির। ছবি: সপ্তর্ষি চৌধুরী। ইনস্টাগ্রাম।
নিউ টাউনে কারিগরি ভবনের কাছে রয়েছে আরও একটি নবনির্মিত মন্দির। রথযাত্রায় ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকেও। ফোয়ারা, পাথরে বাঁধানো সাজানো মন্দির চত্বর। সমুদ্র মন্থনের দৃশ্য মূর্তির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মন্দিরগাত্রে। রয়েছে দেবদেবীর মূর্তি। মূল ফটক দিয়ে ঢুকে প্রশস্ত জায়গা। তার পরেই গর্ভগৃহ। পূজিত হন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা।