ঝকঝকে আকাশ দেখে সফর শুরু করলেন। মাঝপথেই বৃষ্টি শুরু হল। কিংবা তুষারপাত। পাহাড়ি এলাকায় এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয় যখন তখন। অবিরাম বষ্টিতে ধস, সেতু উপচে নদীর বয়ে চলা— এ সবই হতে পারে যে কোনও সময়। দুর্যোগ আসে হঠাৎ করে। কখনও গন্তব্যে পৌঁছে আটকে পড়তে হয়, কখনও আবার মাঝপথেই বিপদ হয়। বিশেষত পাহাড়ি এলাকায় তুষারপাত, হড়পা বান, ধসের সমস্যা দেখা যায় মাঝমধ্যেই।আবার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গেলে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মুখে পড়তে হতে পারে। বেড়াতে গিয়ে আচমকা এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন যে কোনও মানুষকেই। তার জন্য মানসিক প্রস্তুতিও জরুরি।
ধস, ঘূর্ণিঝড়, অতিরিক্ত বৃষ্টি, হড়পা বান— নানা রকম ভাবে দুর্যোগ আসতে পারে। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত। দিকে দিকে ভেঙে পড়েছে সেতু। কোথাও সড়কের উপর জল বইছে। কোথাও ধস নেমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এমন পরিস্থিতিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আটকে পড়লে ভয়, উদ্বেগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভয় না পেয়ে এমন ঘটনার মোকাবিলা কী ভাবে করতে পারেন?
আরও পড়ুন:
১। কোন সময় বেড়ানোর পরিকল্পনা করছেন, সেটা খুব জরুরি। বর্ষার সময় অথবা ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলে, সফরের আগেই সতর্কতা জরুরি। বুঝে শুনে স্থান নির্বাচন করতে হবে, যাতে সেই জায়গা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও কয়েকটি দিন থাকা-খাওয়ার অভাব না হয়। তবে কখনও যদি আচমকা দুর্যোগের মুখে পড়তে হয়, সে ক্ষেত্রে জরুরি শর্তই হল উদ্বেগে না ভুগে মাথা ঠান্ডা রাখা।
২। বিপদের মুহূর্তে স্থানীয় মানুষেরাই সাহায্য করতে পারেন। সাধারণত পর্যটক-নির্ভর স্থানে পর্যটন, হোটেল ব্যবসায়ী বা স্থানীয়েরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তাঁদের পরামর্শ এমন পরিস্থিতিতে মেনে চলাই ভাল। তাঁরা সেই জায়গাটি, সেখানকার বিপদ সম্পর্কে যতটা ওয়াকিবহাল, বাইরে থেকে গেলে ততটা জানা সম্ভব হয় না।
৩। আচমকা দুর্যোগ নেমে এলে পরিস্থিতি এবং প্রশাসনিক বার্তার উপর নজর রাখা জরুরি। বরং ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে, বিপদ থেকে বেরোনোর কী কী উপায় রয়েছে। ধসে বা বৃষ্টিতে জোর করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লে বিপদ বাড়তে পারে। বরং যদি রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গিয়ে থাকে হোটেল বা হোম স্টে-তেই থেকে যাওয়া ভাল। সেখানে অন্তত মাথার উপর ছাদ এবং খাওয়াটুকু জুটবে।
৪। ধসের কারণে বা সেতু ভেঙে গেলে ঘুরপথে যাতায়াতের বন্দোবস্ত করতে লম্বা সময় লাগতে পারে। এ ক্ষেত্রে একটি রাস্তার উপরে চাপ পড়লে যানজট বেশি হয়। পথে বাড়তি সময় লাগে। এমন পরিস্থিতিতে গাড়িতে হাতের কাছে জল এবং শুকনো খাবার রাখা জরুরি। প্রয়োজনীয় ওষুধও নাগালে রাখুন। যাতে বাড়তি ৫-৭ ঘণ্টা গাড়িতে থাকলেও অন্তত জল, খাবার, ওষুধের জোগান অব্যাহত থাকে।
৫। দুর্যোগের মধ্যে সব সময় পরিশুদ্ধ পানীয় জল পাওয়া যায় না। সব জায়গায় বোতলের জল কেনা সম্ভব না-ও হতে পারে। এই কারণে সঙ্গে জল পরিশোধক রাসায়নিক রাখা ভাল। পাহাড়ি ঝোরার জলই সাধারণত পাহাড়ি এলাকায় পরিশোধন করে পানীয় হিসাবে খাওয়া হয়। তা থেকে বর্ষার সময় পেটে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। পেটের গন্ডগোল হলে বিপদ বাড়বে। তাই সঙ্গে জল পরিশোধক রাখা প্রয়োজন।
৬। দুর্যোগ বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। সেই কারণে নিজেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। এই সময় পরিষেবায় খামতি থাকলে তা নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি অর্থহীন। এতে পরিস্থিতি বিগড়ে যেতে পারে। বরং মানিয়ে নেওযার মানসিকতাই পরিস্থিতি সহজ করে দেবে।
৭। বিপদ যেহেতু বলে কয়ে আসে না, তাই সঙ্গে টর্চ, পাওয়ারব্যাঙ্ক, নগদ টাকা রাখা খুব জরুরি। কারণ, এই সব ক্ষেত্রে প্রথমেই বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। হাতের কাছে জোরালো টর্চ থাকলে অবশ্যই অন্ধকারে একটু হলেও সুবিধা হবে।
৮। বিপদে পড়লে যাতে পরিবারের অন্যেরাও সাহায্য করতে পারেন, সেই কারণেই কোথায় যাচ্ছেন, সেই ব্যাপারে বিশ্বস্ত কাউকে জানিয়ে আসাটাও জরুরি।