Advertisement
১১ মে ২০২৪
Tourism

গন্তব্য যখন ভয়ঙ্কর সুন্দর 

ধবলগিরি নন্দাদেবীর বেস ক্যাম্পের পথে ট্রেকিংয়ের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাসেখান থেকেই ট্রেক শুরু। সে দিনের গন্তব্য পাঁচ কিলোমিটার দূরে লিলাম ভিলেজ। সন্ধ্যায় পৌঁছে গেলাম।

ঊষর: রুক্ষ পথ ধরে নন্দাদেবী

ঊষর: রুক্ষ পথ ধরে নন্দাদেবী

বিতান বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ০৬:০৫
Share: Save:

টরেন হলদোয়ানি পৌঁছবে, ভোর পাঁচটা। চাঁদের আলোয় ওই দেখা যায় ঢেউ। পাহাড়! তার টানেই তো কত দূর থেকে ছুটে আসা! রিজ়ার্ভড গাড়িও হাজির। দেরি না করে রওনা দিলাম, কারণ যেতে হবে ২৭০ কিলোমিটার দূরে মুন্সিয়ারি।

 প্রথম দিন: দিন পারমিটের ঝামেলা মিটিয়ে বেরোতে বেলা গড়িয়ে গেল। গন্তব্য ছিলামধর। ঘণ্টাখানেকের পথ। সেখান থেকেই ট্রেক শুরু। সে দিনের গন্তব্য পাঁচ কিলোমিটার দূরে লিলাম ভিলেজ। সন্ধ্যায় পৌঁছে গেলাম। পাহাড়ের কোলে ছবির মতো ছোট গ্রাম। গ্রামেরই একটি বাড়িতে রাত্রিবাসের ব্যবস্থা হল। মোবাইলের নেটওয়র্ক এত দূর পর্যন্তই!

 দ্বিতীয় দিন: জম্পেশ ব্রেকফাস্ট করে শুরু হল যাত্রা। সামনে মেইনসিং টপ। প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা চড়াই। এর পর বাবালধর পর্যন্ত দু’কিলোমিটার রাস্তা ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে নেমে গিয়েছে। ফেরার পথে দলের দুই সদস্য ভালুক দেখেছিল। দু’কিলোমিটার ডাউনহিল এবং সেটা শেষ হতেই দেখা মিলল গৌরীগঙ্গার। চপলা কিশোরী গঙ্গা পাহাড় কেটে বয়ে চলেছে সাসপেনশন ব্রিজের নীচ দিয়ে। এর পরের রাস্তা বেশ মনোরম। শেষ পর্যন্ত গন্তব্য বুগদিয়ার পৌঁছতে বেলা চারটে বাজল। এখানে সেনাদের স্যাটেলাইট ফোন থেকে বাড়িতে যোগাযোগ করা যায়।

 তৃতীয় দিন: আজ যাব রিলকোট। কিছু দূর যাওয়ার পরে প্রথম টি পয়েন্ট, নাহারদেবী। শরীরে তরল উষ্ণতা ভরে নিয়ে হাঁটা শুরু হল গৌরীগঙ্গার পাশ দিয়ে। বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ পৌঁছলাম রিলকোট।

 চতুর্থ দিন: আজ গন্তব্য মিলাম গ্রাম। প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ। প্রথম এক কিলোমিটার বেশ চড়াই। টিম লিডারের নির্দেশে সাবধানে ওই পথ পার হলাম। তার পর গাড়ি চলার রাস্তা। মিলামে পৌঁছেই বেরিয়ে পড়লাম। এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে সাময়িক বসতি স্থাপন করেছিলেন স্থানীয়েরা। স্কুল, পোস্টঅফিস সবই ছিল। পরে সরকারের সহযোগিতায় মুন্সিয়ারিতে স্থানান্তরিত হয় এই জনবসতি। এখন তার কঙ্কালই স্মৃতিচিহ্ন। সারি সারি পাথরের বাড়ি জনশূন্য। এই ঘরগুলোই ছিল কত যত্নের আশ্রয়! ভাবলে গা ছমছম করে।

 পঞ্চম দিন: প্রথম লক্ষ্য পূরণের দিন। যাব মিলাম গ্লেসিয়ার ও গৌরীগঙ্গার উৎস দেখতে। প্রথম ভিউ পয়েন্ট পর্যন্ত সুন্দর বাঁধানো রাস্তা। ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশ। আকাশের রং যে এত নীল, প্রায় ভুলতেই বসেছিলাম। ভিউ পয়েন্ট পেরিয়ে যত এগোই, ততই পাল্টে যেতে থাকে প্রকৃতি। এখন আর নির্দিষ্ট রাস্তা নেই। গ্লেসিয়ারে মোরেন ল্যান্ডের উপর দিয়ে গাইডের দেখানো পথে চলেছি দল বেঁধে। বাঁ দিকে শিশু গৌরী যেন হামাগুড়ি দিয়ে বয়ে চলেছে। এক সময়ে পৌঁছে গেলাম উৎসমুখে। শান্ত বরফ-জমা সব ঝর্না। মাঝেমাঝে হিমবাহ থেকে বরফের চাঁই খসে পড়ার ঝুপ ঝুপ শব্দ।

 ষষ্ঠ দিন: আজ থেকে লক্ষ্য নন্দাদেবী বেস ক্যাম্প। যাব গানাঘর। মিলাম পেরিয়ে ব্রিজের উপর দিয়ে পার হলাম গৌরীগঙ্গা। রাস্তা ঘন অ্যালপাইন ঘাসের মধ্য দিয়ে পৌঁছে দিল গানাঘর। গাইড একটি ঘর সাময়িক জবরদখল করে কিচেন বানালেন। আমাদের জন্য টেন্ট।

 সপ্তম দিন: আজ ফুরফুরে মেজাজ। নন্দাদেবী বেস ক্যাম্প যাব যে! প্রথম ভিউ পয়েন্টে দেখি, নন্দাদেবীর মাথায় রঙের আগুন! এখান থেকে নন্দাদেবীর পূর্ব আর পশ্চিম আংশিক দেখা যায়। বেস ক্যাম্প থেকে শুধু ইস্ট দেখা যায়। রাস্তায় বরফের দর্শন। চলতে বেশ অসুবিধে হচ্ছে। অনেক জায়গায় রাস্তা ধসে গিয়েছে। কোনও রকমে একটা পা ফেলার মতো জায়গা। বরফে পা হড়কানোর ভয় যথেষ্ট। গাইডের সাবধানী দৃষ্টি সকলের উপরে। কিছু জায়গায় হাত ধরে পার করে দিলেন। নন্দাদেবী একেবারে সামনে! আপাদমস্তক দুধসাদা বরফের চাদরে ঢাকা। তার পায়ের কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছে হিমবাহ। চারদিকে আরও কত পাহাড়চুড়ো। হাত বাড়ালে যেন ছোঁয়া যাবে।

স্বর্গসুন্দর যে ক্ষণস্থায়ী, নন্দাদেবীও জানে সে কথা। তাই হঠাৎ ঘন ধূসর চাদরে পাকাপাকি ভাবে নিজেকে মুড়ে নিল। আকাশের নীল শুষে নিল ওই ধূসর। তুষারপাতও শুরু হয়ে গেল। ভাল করে ছবি তোলা হল না। গাইড তাড়া দিলেন। মনে অতৃপ্তির স্ফুলিঙ্গ। হয়তো এই স্ফুলিঙ্গই পরের ট্রেকের আগুন জ্বালাবে— ‘অন্য কোথা, অন্য কোনখানে...’

সবাভাবিক সময়েও বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে বেরোলে সচেতন থাকতে হয়। এখন এই নিউ নর্মাল লাইফে সেই সচেতনতা আরও একটু বাড়াতে হবে। সন্তানের বয়স অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে মা-বাবাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nandadevi Hill Tourism Travel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE