Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ক্যানসার বিশেষজ্ঞ কুকুর

সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।বেআইনি দ্রব্য শনাক্ত করতে কুকুরের ব্যবহার প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৬০ সালে। পরবর্তী কালে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অপরাধী এবং বিস্ফোরক চিহ্নিতকরণের কাজে এদের ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু, রোগ চিহ্নিতকরণের কাজে সারমেয়দের ব্যবহার, এমনটা হয়তো ভাবা যায় না! কিন্তু, এই কাজটিই এ বার করছেন আমেরিকার একদল বিজ্ঞানী।

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার

• আর্মেনিয়ায় প্রস্তর যুগের যন্ত্র আবিষ্কার

প্রযুক্তিগত দিক থেকে প্রাচীন বিশ্ব যে কতটা উন্নত ছিল, এ বার সেই তথ্য উঠে এল বিজ্ঞানীদের গবেষণায়। সম্প্রতি আর্মেনিয়ায় প্রস্তর যুগের বেশ কয়েকটি যন্ত্র উদ্ধার করেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। গবেষণা করে দেখা যায়, আবিষ্কৃত যন্ত্রগুলি প্রায় ৩ লক্ষ ২৫ হাজার বছর আগের। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমেরিকা-ইউরোপের একদল গবেষকের যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি এ বিষয়ে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স জার্নালে।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের গবেষক সিমল ব্লকলি জানান, প্রস্তর যুগে মানুষের জৈবিক ও ব্যবহারিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কী ভাবে যন্ত্রপাতির উন্নতি হয়েছে, তার ধারণা পাওয়া যাবে আবিষ্কৃত ওই নিদর্শনগুলি থেকে। তাঁর মতে, তখনকার মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ছিল অনেক বেশি। শিকারের জন্য দু’রকম প্রযুক্তির মিশেলে যন্ত্র তৈরি করা হত। পরে মানব সভ্যতার বিস্তারের সঙ্গে তা ইউরেশিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে। ব্লকলির দাবি, এই আবিষ্কার আফ্রিকার লিভালোইস প্রযুক্তিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেবে। পাশাপাশি, এর মাধ্যমে প্রস্তর যুগের অন্য জনজাতির মধ্যে উদ্ভাবনী শক্তি যে ভিন্ন ছিল তার প্রমাণও পাওয়া যাবে। লিভালোইস প্রযুক্তিতে ছোট ও সহজে বহনযোগ্য যন্ত্রপাতি তৈরি করা হত। ব্লকলি এবং তাঁর গবেষক সহকর্মী অ্যলিসন ম্যাকলেওড জানিয়েছেন, আর্মেনিয়ার কোটাক প্রদেশের নর গেগি নামে ওই গ্রামে প্রচুর আগ্নেয় উপাদান মজুত ছিল।

• ডাইনোসরের হাত

ডাইনোসরের সঙ্গে আমাদের বেশির ভাগেরই প্রথম পরিচয় ‘জুরাসিক পার্ক’ বা ‘সায়েন্স সিটি’ সিনেমার সৌজন্যে। কিন্তু, এই ভয়ঙ্কর দর্শন দ্বিপদ প্রাণীটি নাকি প্রথমে ছিল চারপেয়ে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গিয়েছে, বিবর্তনের ফলে তাদের সামনের পা দু’টি ছোট হতে হতে হাতে পরিণত হয়।

চিন ও পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ১০০ মিলিয়ন বছর আগের ‘সিট্যাকোসরাস’ ডাইনোসরের হাজারখানেক জীবাশ্মের নমুনা পাওয়া গিয়েছে। যাদের পোশাকি নাম ‘প্যারট ডাইনোসর’। বেজিংয়ে মেরুদণ্ডী প্রাণীদের জীবাশ্মের গবেষণাগারে ডাইনোসরের উপর গবেষণা করেছেন গবেষক জাহো। তিনি বলেন, ‘‘মাত্র কয়েক মিলিমিটারের শিশু ডাইনোসরের বেশ কিছু জীবাশ্ম আমরা পেয়েছি। খুব সাবধানে তাদের হাড়গোড় নিয়ে কাজ করেছি। সব সময় খেয়াল রাখতে হয়েছে, যাতে এই গুরুত্বপূর্ণ নমুনার কোনও ক্ষতি না হয়।’’
বেজিং গবেষণাগারের বিশেষ অনুমতি নিয়ে জাহো এক থেকে ১০ বছর বয়সের ১৬ টি ডাইনোসরের হাত ও পায়ের হাড়গুলি আলাদা করেন। তাতে দেখা গিয়েছে এদের হাত দু’টি পায়ের তুলনায় অনেক লম্বা। জন্মের পর তিন বছরের মধ্যেই হাতের হাড় বড় হয়ে যেত। চার থেকে ছয় বছরের মধ্যে হাতের হাড়ের বৃদ্ধির গতি যেত কমে এবং লক্ষণীয় ভাবে পায়ের হাড় বেশি মাত্রায় বাড়ত।
ডাইনোসরের হাড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনেক নতুন তথ্য এই নতুন গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে বলে দাবি করেছেন বেজিং গবেষণাগারের অধ্যাপক জিং ইউ। ডাইনোসরদের জীবনযাপন পদ্ধতি দেখলেও অবাক হতে হয়। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তথা জাহোর পিএইচডি সুপারভাইজার অধ্যাপক মাইক বেন্টন জানিয়েছেন, “এই গবেষণা ছোট এবং বড় ডাইনোসরের বিবর্তন সম্বন্ধে একটা নতুন দিক খুলে দিল।”

• পশ্চিম ইউরোপের প্রাচীনতম নকল দাঁত

দাঁতের সমস্যায় ভোগেন না এমন মানুষ বোধহয় বিরল। দাঁত তোলা এবং তার জায়গায় নকল দাঁতের ব্যবহারও বহুল প্রচলিত।

কিন্তু এই নকল দাঁতের ব্যবহার ঠিক কতটা প্রাচীন?

খ্রিস্টের জন্মের অনেক আগে থেকেই দাঁত নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করেছেন তত্কালীন চিকিত্সকেরা। নষ্ট দাঁতের পরিবর্ত হিসাবে নকল দাঁতে ঠিক কী পদার্থ ব্যবহার করা যায় তার পরীক্ষাও হয়েছে বিস্তর। কাঠ থেকে লোহা, সোনা থেকে রুপো— ব্যবহার করা হয়েছে অনেক কিছুই। খ্রিস্ট-জন্মের হাজার দেড়েক বছর আগে মিশরে নকল দাঁতের জায়গায় সোনার তারের ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। জাপানিরা আবার উনিশ শতকের গোড়া পর্যন্ত ব্যবহার করত বিশেষ এক গাছের কাঠ। সম্প্রতি ফ্রান্সে এক মহিলার সমাধি আবিষ্কার করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। ২০-৩০ বছরের ওই মহিলার একটি দাঁতের জায়গায় একটা লোহার টুকরো বসানো ছিল। পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, সমাধিটি লৌহ যুগের। মহিলার উপরের পাটির একটি দাঁতের জায়গায় লোহার টুকরোটি আটকানো ছিল। টুকরোটি কি নকল দাঁত হিসাবেই ব্যবহৃত হত? সমাধিটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে, এর সঠিক উত্তর জানতে হিমসিম খাওয়ার জোগাড় বিজ্ঞানীদের। সমাধিটির বয়স নির্ধারণ করাও প্রায় অসম্ভব বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বিজ্ঞানীদের অনুমান, প্রাচীন কালে অ্যানাস্থেসিয়া আবিষ্কার না হওয়ায় সজ্ঞানেই নষ্ট দাঁত উঠিয়ে লোহার নকল দাঁতটি বসানো হয়েছিল। এর ফলে ওই মহিলার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে তাঁদের আশঙ্কা। তবে, আধুনিক বিজ্ঞান মতে নকল দাঁতের উত্কৃষ্টতম উপাদান হল টাইটেনিয়াম। কাজেই লোহার ব্যবহার থেকে হয়তো সংক্রমণ এবং তার কারণেই মহিলার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। তবে একটা ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত, এর আগে পশ্চিম ইউরোপে নকল দাঁতের এত প্রচীন ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায়নি।

ঐতিহ্য

• স্বমহিমায় বারাখাম্বা

বছরখানেক সংস্কার-কাজের পর ফের স্বমহিমায় ফিরে এল নয়াদিল্লির বারাখাম্বা সমাধিসৌধ। বেশ কয়েক বছর ধরেই নেশাবাজ, ভবঘুরেদের ডেরায় পরিণত হয়েছিল এটি। আর আঁধার নামলেই এখানে আড্ডা জমাত সমাজবিরোধীরা। এমন সব অভিযোগই উঠছিল দীর্ঘ দিন ধরে। অযত্নে, অবহেলায় পড়ে থাকা ঐতিহ্যময় এই সমাধিসৌধটি আবর্জনা ফেলার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই সৌধের সংস্কার করে রাজধানীর আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার (এ কে টি কে)। এই সংস্থা ছাড়াও প্রকল্পের কাজে অর্থ সাহায্য করেছে ডিডিএ-র দিল্লি আর্বান হেরিটেজ ফাউন্ডেশন। গত ২৮ মার্চ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।

ষোড়শ শতকে লোধী যুগের এই সমাধিসৌধটি রাজধানীর নিজামুদ্দিন হেরিটেজ অঞ্চলে অবস্থিত। লোধী রোডে ঐতিহ্যবাহী হুমায়ুনের সমাধিস্থলের কাছের উদ্যানে এর উপস্থিতি সম্বন্ধে স্থানীয়েরা ওয়াকিবহাল হলেও পর্যটন মানচিত্রে এটি প্রায় হারাতে বসেছিল। এক বার তো রাজধানীর আনট্রেসেবল লিস্টে নামও উঠে গিয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে এটির পুনরুদ্ধারে নামে এ কে টি কে। সংস্থার প্রজেক্ট ডিরেক্টর রতীশ নন্দা বলেন, ‘‘আমরা সংস্কার-কাজ শুরুর সময় সৌধটি মাদকাসক্তদের মাথাগোঁজার জায়গা ছিল। এমনকী, এলাকার যাবতীয় আবর্জনা এখানেই জমা হত।’’

১২টি স্তম্ভের উপর দাঁড়ানো বারাখাম্বা সৌধে তিনটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি প্রবেশপথ আছে। কেন্দ্রস্থলের অংশটিকে ঘিরে রয়েছে একটি বারান্দা। প্রধান গম্বুজ ছাড়াও সৌধের চার কোণে চারটি গম্বুজ রয়েছে। রতীশ নন্দা জানান, লোধী যুগের এই বিরল সৌধটিতেই একমাত্র পাঁচটি গম্বুজ রয়েছে। সৌধের ভিতরের অংশ পুনরুদ্ধার ছাড়াও এর চার পাশের পাঁচিলটির সংস্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পাঁচিলে আগের মতোই চার স্তরীয় রং লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া, ঢোকা ও বেরোনোর জন্য এখানে নতুন করে দরজা বসানো হয়েছে। সন্ধ্যার পর অপরাধমূলক কার্যকলাপ রুখতে সৌধে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করার জন্য ডিডিএ-কে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বারাখাম্বার সংস্কারকাজের জন্য ২০১৪ সালে এটিএকে-কে ৮০ লাখ টাকা দেয় দিল্লি আর্বান হেরিটেজ ফাউন্ডেশন। সে বছরের মে মাসে এর কাজ শুরু হয়। সৌধটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ডিডিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান বলবিন্দর কুমার। তিনি বলেন, “এটি একটি বিরল সৌধ। এলাকায় এ ধরনের আরও কয়েকটি সৌধ পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের কাজ হাতে নিতে চায় ডিডিএ। ইতিমধ্যেই একেটিকে-র সঙ্গে মিলিত ভাবে পাঁচটি প্রকল্পে সায় দিয়েছে তারা।”

• প্রদর্শনীতে ডিকেন্সের টেবল

‘গ্রেট এক্সপেক্টেশনস’ রচিত হয়েছিল এই টেবলে। ‘আওয়ার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড’ অথবা মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ ও একমাত্র অসমাপ্ত উপন্যাস ‘দ্য মিস্ট্রি অব এডউইন ড্রুড’ও লিখেছিলেন এই টেবলে বসেই। ভিক্টোরীয় যুগের বিখ্যাত ঔপন্যাসিক চালর্স ডিকেন্সের সেই টেবল এবং চেয়ার এ বার স্থায়ী ভাবে প্রদর্শিত হবে লন্ডনের সংগ্রহালয়ে। লন্ডনের ৪৮, ডটি স্ট্রিটে ডিকেন্সের একটি বাড়িতে রয়েছে এই সংগ্রহালয়। এ বার থেকে সেখানেই এই প্রদর্শগুলি রাখা থাকবে। গত মার্চে এ খবর শোনামাত্রই সেখানে ভিড় জমান তাঁর গুণমুগ্ধরা।

দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের কেন্ট কাউন্টিতে গাড’স হিল প্লেস-এ তাঁর বাড়িতে বসেই ধ্রুপদী উপন্যাসগুলি রচনা করেছিলেন ডিকেন্স। ১৮৭০ সালে লুক ফিল্ডেস-এর আঁকা এমটি চেয়ার এবং আর ডব্লিউ বুস-এর আঁকা ‘ডিকেন্সেস ড্রিমস’ শীর্ষক বিখ্যাত দু’টি তৈলচিত্রে লেখককে দেখা যায়। সে বছরেই ডিকেন্সের মৃত্যুর পর ওই চেয়ার-টেবলের মালিকানার হাতবদল হয়। একসময় তো নিলামেও ওঠে সেই বিখ্যাত চেয়ার-টেবল। সে সময় আসরে নামে ন্যাশনাল হেরিটেজ মেমোরিয়াল ফান্ড (এনএইচএমএফ)। লন্ডনের চালর্স ডিকেন্স সংগ্রহালয়কে সাত লক্ষ ৮০ হাজার পাউন্ডের অনুদান দেয় তারা। নিলাম হওয়ার আগেই অনুদানের অর্থে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সেই চেয়ার-টেবল কিনে নেয় সংগ্রহালয়। এর পরই সেগুলি স্থায়ী ভাবে প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেন সংগ্রহালয় কর্তৃপক্ষ। সগ্রহালয়ের ডিরেক্টর রবার্ট মোয়ে বলেন, “চেয়ার-টেবলগু‌লি সংগ্রহ করে আমরা যারপরনাই আপ্লুত। সাহিত্যগত ঐতিহ্যের দিক থেকে দেখতে গেলে এগুলি এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে রেখেছে।”

• শাহজাহানাবাদের রূপটান

ভোল পাল্টাতে চলেছে শাহজাহানাবাদ। ১৬৩৯ সালে এর গোড়াপত্তন করেছিলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান। এখন অবশ্য এটি পুরনো দিল্লি নামেই বেশি পরিচিত। মুঘল আমলে ভারতের রাজধানী ছিল শাহজাহানাবাদ। বিংশ শতকের প্রথম ভাগে এ দেশের রাজধানীর শিরোপা পায় নয়াদিল্লি। এর পর থেকেই জৌলুস হারাতে থাকে পুরনো দিল্লি। যদিও ঐতিহ্যের ধারে ও ভারে সতেরোশো শতকের এই শহরের জুড়ি মেলা ভার। এর অলিগলিতে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। সেই ঐতিহ্যময় শহরের হারানো জৌলুস ফেরাতে এ বার উদ্যোগী হল কেজরীবাল সরকার। এ বিষয়ে গত মার্চে একটি প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী পাঁচ বছর ধরে চলবে সেই সংস্কারের কাজ।

প্রকল্পের জন্য ১৮০০ কোটি টাকা খরচ করবে শাহজাহানাবাদ রিডেভেলপমেন্ট কপোর্রেশন (এসআরডিসি)। এ ছাড়া, এই প্রকল্পের কাজে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি)-এর কাছে ৩০৫ মিলিয়ন ডলারের অনুদানও নেবে তারা। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই সরকারের নগরোন্নয়ন মন্ত্রক, অর্থ মন্ত্রক এবং যোজনা মন্ত্রকের প্রয়োজনীয় অনুমতি পেয়েছে এসআরডিসি।
এই প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়েছেন ইনট্যাক (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ)-এর দিল্লি পর্যায়ের আহ্বায়ক এ জি কে মেনন। তিনি ব‌লেন, ‘‘সঠিক সময়েই প্রকল্প রূপায়ণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ, ভবিষ্যতে দিল্লির ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পেতে কাজে আসবে এই সিদ্ধান্ত।’’ এসআরডিসি-র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নিতিন পানিগ্রাহী বলেন, “এর আগেও বহু বার শাহজাহানাবাদের সংস্কারের কথা উঠেছিল। কিন্তু, কোনও বারই তা ফলপ্রসূ হয়নি। এ বারে আমরা এডিবি-র সাহায্যে প্রকল্পের একটি প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করেছি। শীঘ্রই তা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।’’
প্রকল্পের নয়া রিপোর্ট অনুযায়ী শাহজাহানাবাদের হাজারেরও বেশি হেরিটেজ সম্পত্তিকে বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। ওই সমস্ত সম্পত্তির মালিকদের সংস্কারের কাজে উত্সাহিত করা হবে। এসআরডিসি জানিয়েছে, সংস্কার ছাড়াও প্রকল্পে রয়েছে একটি ২৫ কিলোমিটারের সড়ক নিমার্ণের প্রস্তাব। এ ছাড়া শহরে সাইকেল চলাচলের জন্য আলাদা পথ, ফুটপাথ, নির্দেশিকা-সহ বিভিন্ন সুযোগসুবিধা থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ

• কুকুর যখন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ

বেআইনি জিনিস শনাক্ত করতে কুকুরের ব্যবহার প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৬০ সালে। পরবর্তী কালে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অপরাধী এবং বিস্ফোরক চিহ্নিতকরণের কাজে এদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু, রোগ চিহ্নিতকরণের কাজে সারমেয়দের ব্যবহার, এমনটা হয়তো ভাবা যায় না! কিন্তু, এই কাজটিই এ বার করছেন আমেরিকার একদল বিজ্ঞানী।
কী ভাবে?
ওই বিজ্ঞানীদের দাবি, বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কুকুররা এক জন মানুষের মূত্রের ঘ্রাণ নিয়ে খুব সহজেই চিহ্নিত করতে পারবে, তিনি থাইরয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত কিনা। বিশেষজ্ঞরা যার পোশাকি নাম দিয়েছেন ‘ক্যানাইন টেকনিক’।
তাঁদের আরও দাবি, এক জন ডায়াগনস্টিকের থেকেও অনেক নির্ভুল ভাবে এটি চিহ্নিত করতে পারবে কুকুরেরা। এমনকী, ৮৮.২% ক্ষেত্রে ‘ক্যানাইন টেকনিক’ নির্ভুল হয় বলেই দাবি করেছেন ওই বিশেষজ্ঞরা। এ ধরনের গবেষণা করা হয় আমেরিকার ইউনির্ভাসিটি অব আরকানসাস ফর মেডিক্যাল সায়েন্স-এ। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ইনভেস্টিগেটর ডোনাল্ড বোডেনার জানান, কোনও ব্যক্তি থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যানসারে আক্রান্ত কি না তা জানতে যে সমস্ত পরীক্ষাগুলি করা হয়, অনেক সময়ই তাতে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু এই পরীক্ষায় কুকুরকে ব্যবহার করে অনেক ভাল ফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া, অহেতুক সার্জারির ঝঞ্ঝাট থেকেও রেহাই পাবেন রোগী। কিছু ক্ষেত্রে প্রথম দশাতেই ক্যানসার ধরা পড়বে বলেও দাবি বিজ্ঞানীদের। তিনি জানান, মানুষের তুলনায় একটি কুকুরের ঘ্রাণ রিসেপটর ১০ গুণ বেশি শক্তিশালী। যার ফলে কোনও কোষ ক্যানসার আক্রান্ত কি না তা তারা সহজেই বুঝতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের থাইরয়েড ক্লিনিকে বায়োপ্সি করাতে আসা ৩৪ জন রোগীর উপরে ‘ক্যানাইন টেকনিক’ প্রয়োগ করা হয়। দেখা যায় এই পদ্ধতিতে পাওয়া ফল এবং বায়োপ্সির রিপোর্টে হুবহু মিল রয়েছে। এই বিশেষ পদ্ধতি চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজে কতটা লাগে এখন সেটা দেখার অপেক্ষায় গোটা বিশ্ব।

• গাছেদের সান বার্ন

সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচাতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন বহু মানুষ। কিন্তু, প্রশ্ন যদি হয় গাছেদের নিয়ে, তা হলে!
বাজার চলতি সানস্ক্রিন তো আর তারা লাগাতে পারে না। তা হলে সানস্ক্রিন ছাড়া গাছেরা কী ভাবে নিজেদের রক্ষা করে?
ত্বককে ঝকঝকে রাখতে মরিয়া এমন অনেকেই এটা জেনে আশ্চর্য হবেন, অতি বেগুনি রশ্মিতে গাছেদেরও সান বার্ন হয়। ওই রশ্মি মানুষের ডিএনএ-কে যে ভাবে ক্ষতি করে, ঠিক একই ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাছেদের ডিএনএ-কেও। শুধু পার্থক্য একটাই, রোদ থেকে নিজেদের ত্বকের পুড়ে যাওয়া রুখতে গাছদের বাজারচলতি সানস্ক্রিনের উপর ভরসা করতে হয় না। উল্টে গাছেরা নিজেরাই ক্ষতিকারক ‘আল্ট্রা ভায়োলেট রে’ থেকে বাঁচতে একটা উপায় বের করে নিয়েছে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, গাছেরা সিনাপেট এস্টার নামে একটি বিশেষ উপাদান উৎপন্ন করে। এটা বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে পাতায় পৌঁছয় এবং গাছের বাইরের আবরণকে ইউভি রে-র ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। মূলত সিনাপইল ম্যালেট নামে ওই এস্টার ইউভি-রে শুষে নেয়। ফলে, গাছের ত্বক রক্ষা পায়। বাজার চলতি সান স্ক্রিনে সিনামেট নামে এক প্রকার উপাদান থাকে। যা গাছের সিনাপেট এস্টারের মতোই কাজ করে।
এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী কালে পরীক্ষামূলক ভাবে এমন গাছ উৎপন্ন করা সম্ভব যা, গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এ জেরবার এই বিশ্বকে বাঁচাতে পারবে বলে বিজ্ঞানীদের আশা।

• দেহে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গরিলার ভরসা পচা কাঠ

সুস্বাদু খাবার দেখলে সকলেরই জিভে জল আসে। কিন্তু, পচা কাঠ দেখে কী কারও খাবার ইচ্ছা হয়?
জবাব হল, হয়! গরিলারা নাকি ভালবেসে পচা কাঠ খায়। তাও সেই পচা কাঠ তারা তত ক্ষণ চিবিয়ে যায়, যত ক্ষণ না মাড়ি দিয়ে রক্ত ঝরে। উগান্ডার বিউইন্ডি ইমপেনিট্রাবল ন্যাশনাল পার্কে এই দৃশ্য দেখে প্রথমে খানিকটা আশ্চর্যই হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। পরে গবেষণায় সামনে আসে পচা কাঠের রহস্য। গবেষণায় জানা যায়, নেহাতই সুস্বাদের জন্য নয়, আসলে এই পচা কাঠই হল গরিলাদের দেহে পর্যাপ্ত সোডিয়ামের বাহক।
গবেষণায় উঠে এসেছে, গরিলাদের দেহের ৯৫ শতাংশ ডায়েটারি সোডিয়ামের জোগান এ ভাবেই হয়।
বিউইন্ডি ন্যাশনাল পার্কের ১৫টি গরিলাকে পর্যবেক্ষণ করে এবং তাদের খাওয়া কাঠের নমুনা পরীক্ষা করেই বিজ্ঞানীরা এই তথ্য পেয়েছেন। তবে শুধুমাত্র গরিলাই নয়, কিছু বাঁদর, শিম্পাঞ্জি এবং লেমুরের প্রজাতিও দেহে সোডিয়ামের ঘাটতি এ ভাবেই মিটিয়ে থাকে।

পর্যটন কেন্দ্র

• পার্ল অব দ্য ইস্ট: পেনাং

মালয়েশিয়ার উপদ্বীপ অঞ্চলের উত্তর ভাগের মলাক্কা প্রণালীর কাছে একটি ছোট্ট দ্বীপ-শহর পেনাং। ব্রিটিশরা সমুদ্র তীরবর্তী এই শহরের নাম দিয়েছিলেন ‘পার্ল অফ দ্য ইস্ট’ বা প্রাচ্যের মুক্তো। মলাক্কা উপসাগরের তীরে ছোট ছোট মুক্তোর মতোই ছড়ানো দ্বীপগুলির মধ্যে একটি এই পেনাং। একটি অত্যাধুনিক সেতু মলাক্কা প্রণালীর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করেছে পেনাংকে। নীল সমুদ্র, পাহাড়, ঘন সবুজ অরণ্য— সব মিলিয়ে পেনাং যেন মালয়েশিয়ার ভূস্বর্গ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সুভাষচন্দ্র বসুর বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই পেনাংকে ঘিরে। এখানকার রাজধানী জর্জ টাউনকে হেরিটেজ‌ের তকমা দিয়েছে ইউনেস্কো। মালয়েশিয়ার ফুড ক্যাপিটালও বলা হয় এই শহরকে। মালয়, ভারতীয়, চিনা, এবং ইউরোপীয় সভ্যতার মিশেলে গড়ে উঠেছে এই শহর। তাই সব রকম খাবারেরই খোঁজ মেলে এখানে।

পেনাং-এর দর্শনীয় স্থান:
• কর্নওয়ালিশ ফোর্ট: পেনাং-এর উত্তর-পূর্ব উপকূলে অবস্থান এই দ্বীপটির। ১৭৮৬ সালে স্যার ফ্রান্সিস লাইট নামে এক ইংরেজ মালয়েশিয়ার কেদা প্রদেশের সুলতানের কাছ থেকে দ্বীপটি দখল করে নেন। কেদা জলদস্যুদের ঠেকাতে এই দুর্গটি নির্মাণ করেন তিনি। দুর্গের ভিতরে রয়েছে ‘সেরি রামবাই’ নামে এক বৃহৎ এবং প্রাচীন কামান। রয়েছে ১৮৮২ সালে নির্মিত একটি লাইট হাউস।

• শ্রীমারিয়াম্মান মন্দির: পেনাংয়ে বসবাসকারী ভারতীয়রা তৈরি করেন এই মন্দির। ১৮৮৩ সালে নির্মিত এই মন্দিরের গর্ভগৃহে বহুমূল্য রত্নখচিত মূর্তি আছে।

• সেন্ট জর্জ গির্জা: ১৮১৮ সালে নির্মিত সেন্ট জর্জ গির্জাটি পেনাংয়ের সবচেয়ে পুরনো গির্জা বলে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। এটি মালয়েশিয়ার প্রাচীনতম অ্যাংলিকান গির্জা।

• কুয়ান ইন মন্দির: চৈনিক, বর্মা এবং থাই শৈলীর মিশেলে এই বুদ্ধমন্দির তৈরি হয়েছিল ১৮০০ সালে।এর অপর নাম ‘কেকলকসি মন্দির’, যার অর্থ পরম শান্তির মন্দির।

• ইসলামিক মিউজিয়াম: এখানে পেনাংয়ের মুসলমান সম্প্রদায়ের কার্যকলাপের ইতিহাস পাওয়া যাবে।

• ক্যাপিটাল কেলিং মসজিদ: ১৯ শতকে তৈরি হয় এই সুন্দর এবং প্রাচীন মসজিদটি। পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় এই মসজিদটি।

এ ছাড়াও পাখিরালয়, প্রজাপতি পার্ক, জাতীয় উদ্যান, সমুদ্র এবং জলপ্রপাত— সব মিলিয়ে পেনাং সত্যিই মুক্তোর মতো অভিজাত, অনিন্দ্যসুন্দর এক ভ্রমণকেন্দ্র।

কাকাটীয় রাজবংশের রাজধানী ‘ওরুগল্লু’-ই বর্তমানে ভারতের নবতম রাজ্য তেলঙ্গনার এক ব্যস্ত শহর ওয়ারাঙ্গল। পাহাড়, জঙ্গল দিয়ে ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ আর একাধিক সরোবর ওয়ারাঙ্গলকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। শিল্পমণ্ডিত ওয়ারাঙ্গলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। কলকাতা থেকে ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেসে করে সরাসরি যাওয়া যায় ওয়ারাঙ্গল। ভারতের সব প্রধান শহরের সঙ্গেই রেল অথবা সড়কপথে যোগাযোগ আছে ওয়ারাঙ্গলের। হায়দরাবাদ থেকে ওয়ারাঙ্গলের দূরত্ব ১৪৮ কিলোমিটার।

কী দেখবেন:
দক্ষিণের যে কোনও প্রাচীন শহরের মতো ওয়ারাঙ্গলে আছে ঐতিহ্যমণ্ডিত একগুচ্ছ মন্দির। তবে এই শহরের প্রথম দ্রষ্টব্য অবশ্যই ওয়ারাঙ্গল দুর্গ। ত্রয়োদশ শতকে কাকাটীয় রাজা গণপতিদেব এবং তাঁর কন্যা রুদ্রমা দেবী নির্মাণ করেন এই দুর্গ। বিশালতায় এই দুর্গ আজও এক বিস্ময়। যদিও এটি এখন প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। দুর্গে রয়েছে বিশাল আকৃতির চারটি গেট। চার পাশের পরিবেশও অসাধারণ। এর সামনেই আছে স্বচ্ছ বিরাট সরোবর। শীতকালে এখানে ভিড় জমায় পরিযায়ী পাখিরা। হ্রদের পাশ দিয়ে পাকদণ্ডী বেয়ে পাহাড়ে উঠলে চার দিকের সবুজের সমারোহ আর মাথায় শিবমন্দির দর্শনও অতি চিত্তাকর্ষক। এ ছাড়া দেখা যাবে কুশমহল বা দরবার হল। এটি ইন্দো-সেরাসেনিক ধাঁচে তৈরি। ১৫০৪ সালে মন্দিরটি নির্মাণ করেন শীতব খান।

• ভদ্রকালী মন্দির: বিশাল তোরণ নিয়ে পাহাড়ের উপর দেবী কালীর মন্দির। মন্দিরের সামনে আছে শিবদুর্গার সুন্দর মূর্তি। সামনে হ্রদ ও তাকে কেন্দ্র করে দৃষ্টিনন্দন পার্ক।

• হাজার পিলার মন্দির: ওয়ারাঙ্গল মূলত তিনটি শহরের সমষ্টি। ওয়ারাঙ্গল, কাজিপেট এবং হান্নাম কোণ্ডা। এই হান্নাম কোণ্ডাতেই আছে কাকাটীয় রাজা রুদ্রদেবের তৈরি চালুক্য স্থাপত্যশৈলীর এক উত্কৃষ্ট নিদর্শন, হাজার পিলার মন্দির। ১১৬৩ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয় এই মন্দির। মন্দিরে রয়েছে শিব, বিষ্ণু এবং সূর্যের মূর্তি। ত্রয়ী দেবতার কারণেই এই মন্দিরকে বলা হয় ‘ত্রিকূটালয়ম’। এই মন্দিরের আর এক বৈশিষ্ট্য হল বিশালাকৃতি নন্দীর মূর্তি।

• রামাপ্পা মন্দির: ওয়ারাঙ্গল থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে পালমপেট গ্রামে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন এবং জনপ্রিয় রামলিঙ্গেশ্বর মন্দির। নির্জন পরিবেশে রামাপ্পা হ্রদ, পাহাড়ি টিলা আর সবুজের মাঝে রামাপ্পা মন্দিরের অবস্থান। প্রধান দেবতা শিব। ১২১৩ সালে রাজা গণপতিদেবের সেনাপতি রুদ্র সেনানীর হাতে তৈরি এই মন্দির। কাকাটীয় শিল্পশৈলীর অনন্য নিদর্শন এই মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে শিবের মূর্তি। প্রধান স্থপতি রামাপ্পার নামে এই মন্দিরের নামকরণ করা হয়।

• নৈসর্গিক চৌকরি

উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন অঞ্চলের পিথোরাগড় জেলার ছোট্ট জনপদ চৌকরি। কলকাতা থেকে সরাসরি ট্রেনে কাঠগুদাম পৌঁছে সেখান থেকে গাড়িতে যাওয়া যায় চৌকরি। কাঠগুদাম থেকে চৌকরির দূরত্ব ২১৪ কিলোমিটার।

এক দিকে ওক, পাইন, রডোডেনড্রনের ঘন জঙ্গল আর অন্য দিকে বিস্তীর্ণ চা বাগিচার পিছনে দুধসাদা হিমালয়ের তুষারবৃত শৃঙ্গগুলি পরিষ্কার দৃশ্যমান। হিমালয়ের ‘গেটওয়ে’ও বলা হয়ে থাকে ২০১০ মিটার উচ্চতার এই জনপদকে।

শুধু তাই নয় চৌকরিকে বলা হয় হিমালয় দর্শনের সেরা ‘মাউন্টেন গ্যালারি’। নন্দাদেবী, নন্দঘুণ্টি, চৌখাম্বা, ত্রিশূল, পঞ্চচুল্লি-সহ ৩০০ কিলোমিটার জুড়ে অসংখ্য তুষারশৃঙ্গের সারিবদ্ধ রূপ অন্য কোন পার্বত্য অঞ্চল থেকে দেখা যায় না। এখানে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মায়াবী রং বদলের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়।

প্রাকৃতিক দৃশ্য ছাড়াও চৌকরিতে রয়েছে:

• মাস্ক ডিয়ার সেন্টার: চৌকরি থেকে ৩-৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মাস্ক ডিয়ার সেন্টার। এখানে বিরল কস্তুরী মৃগের পরিচর্যা করা হয়।

• বেরিনাগ: ১২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই চা বাগান।

• গঙ্গোলিহাট: ৩৫ কিলোমিটার দূরে ১৮০০ মিটার উচ্চতায় পাতাল ভুবনেশ্বরের পথে গঙ্গোলিহাট কুমায়ন অঞ্চলের শিল্প-সংস্কৃতির এক কেন্দ্র। এ ছাড়াও এখানে আছে মহাকালী মন্দির।

• পাতাল ভুবনেশ্বর: চৌকরি থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত পাতাল ভুবনেশ্বরের পরিচিতি শৈবতীর্থ বলে। এই শৈবতীর্থে ৩৩ কোটি দেব-দেবীর বাস বলে কথিত। স্ট্যালাকটাইট এবং স্ট্যালামাইট পাথরে সৃষ্ট গুহাগুলি দর্শনও বেশ রোমাঞ্চকর।

• ত্রিপুরার গরিয়া উত্সব

গরিয়া পুজো ত্রিপুরার একটি অন্যতম ধর্মীয় উত্সব। স্থানীয় মানুষ তাঁদের পারিবারিক সমৃদ্ধি লাভের আশায়, চাষ-আবাদ, পশুপালনে ভাল ফল পেতে গরিয়া দেবীর আরাধনা করেন। তাঁদের ধারণা, দেবী সন্তুষ্ট হলেই তাঁদের মনস্কামনা পূর্ণ হবে। ত্রিপুরার মানুষের এমনই ধর্মবিশ্বাস দীর্ঘ দিনের। এমনকী, বিবাহিত মেয়েরা তাঁদের সাংসারিক সুখের আশায় বা সন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষায় গরিয়া দেবীর আরাধনা করেন। তাই প্রতি বছর চৈত্র মাসে রাজ্যে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে। এটি মূলত একটি উপজাতি উত্সব। পুজো প্রাঙ্গণে একটি লম্বা খুঁটি পোতা হয়। এই খুঁটিই দেবী গরিয়া রূপে পূজিত হন। সুতির কাপড়, ফুল, ডিম, মাটির পাত্র, মুরগি ইত্যাদি দেবীকে তুষ্ট করতে তাঁর পুজোয় নিবেদন করেন স্থানীয় মানুষ।

এই পুজোয় মুরগি বলি দেওয়ার রীতিও আছে। বিশ্বাস, গরিয়া মাতার পুজো চলাকালীন সেই প্রতীকী খুঁটির ছায়া অতিক্রম করাটা দেবীর প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করার সামিল। পুজো চলাকালীন মাদল, ঢাক, কাঁশর-সহযোগে নাচে গানে মেতে ওঠেন ত্রিপুরার ওই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষরা।

ফি বছর বর্ধমানে কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ গ্রামে দোল সংক্রান্তির পরের একাদশীতে বসে কাছাধারী গোপীনাথের মেলা। তিন দিনের মেলায় প্রথম দিন চিঁড়ে মহোৎসব, দ্বিতীয় দিন অন্ন মহোৎসব ও শেষ দিন অর্থাৎ বারুণী সংক্রান্তিতে স্নান। গোপীনাথের এই মেলা স্থানীয় ভাবে গোবিন্দ ঘোষ ঠাকুরের মেলা নামেও পরিচিত। শ্রীচৈতন্যদেবের অন্যতম পার্ষদ ছিলেন এই গোবিন্দ ঘোষ। কথিত, রাঢ় বঙ্গ ভ্রমণের সময়ে অগ্রদ্বীপে বিশ্রাম নিয়েছিলেন চৈতন্যদেব। সেই সময় গোবিন্দ ঘোষের সঞ্চয়ের প্রবণতা দেখে চৈতন্যদেব তাঁকে সংসারে মনোযোগী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে শ্রীচৈতন্যর উপস্থিতিতে অগ্রদ্বীপ গ্রামে গোপীনাথ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা হয়। গোপীনাথের সেবা করার দায়িত্ব পান গোবিন্দ ঘোষ। কিন্তু, তাঁর পাঁচ বছরের শিশু সন্তান মারা যাওয়ার পর সমস্ত ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন গোবিন্দ ঘোষ। শোনা যায়, তখন গোপীনাথ তাঁকে স্বপ্নে বলেন, তোমার মৃত্যুর পর আমি পুত্র হয়ে পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম করব। এবং গোবিন্দ ঘোষের মৃত্যুর পরে গোপীনাথ কাছা পরে পারলৌকিক কাজ করেন বলেও কথিত রয়েছে। সেই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ঘিরেই ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে বসে এই মেলা।

পরিষেবা

• রেলের নতুন ডেবিট কার্ড

ভিসা বা মাস্টার কার্ডের মতোই একটা পকেটসই কার্ড। তফাতের মধ্যে এর ব্যবহার বাড়তি সুবিধে দেবে রেল পরিষেবাতে। যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া আর ন্যাশনাল পেমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে আইআরসিটিসি-র যৌথ প্রয়াস এই প্রি-পেড ‘রুপে’ কার্ড।কার্ডটির সঙ্গে এক লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বিমা বিনামূল্যে পাবেন গ্রাহক। ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক থেকে সরাসরি বা আইআরসিটিসি-র সাইটে গিয়ে এই কার্ড কেনা যাবে।

প্রথমে দশ হাজার টাকা দিয়ে এই কার্ড চালু করতে হবে৷ পরবর্তী কালে পরিমাণটা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানো যাবে৷ কার্ড ব্যবহারের প্রথম ছ'মাসে আইআরসিটিসি থেকে রেলের টিকিট কেনার ‌ক্ষেত্রে প্রতিমাসে পাঁচ বার পর্যন্ত কোনও বাড়তি টাকা দিতে হবে না৷ ছ’মাস পর থেকে যে কোনও কেনাকাটায় প্রতি বার দশ টাকা করে বাড়তি শুল্ক দিতে হবে৷

আপাতত কার্ডটি দিয়ে শুধু রেলের টিকিট কেনা গেলেও পরে অন্যান্য কেনাকাটা, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন বিল মেটানোর মতো সুযোগ সুবিধাও পাওয়া যাবে।

নারী যায় যেখানে, বিপদ ধায় সেখানে! বাড়িয়ে বলা নয়। সুখের ভ্রমণ বদলে গিয়েছে অসুখে, এমন সাক্ষ্য দিতে পারেন এই দেশের অনেক নারীই। এমনকী, ভ্রমণের টানে ভারতে আসা বিদেশিনীরাও গলা মেলাতে পারবেন তাঁদের সঙ্গে। ভারত-ভ্রমণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে নারীদের জন্য।

এর ফলে নারী স্বাধীনতা যেমন প্রশ্নের মুখে পড়ছে তাতে, তেমনই আখেরে ক্ষতি হচ্ছে পর্যটন শিল্পের। সেই সমস্যা দূর করতে এ বার কেন্দ্রীয় পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফ থেকে বাড়িয়ে দেওয়া হল সাহায্যের হাত। পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রী মহেশ শর্মা লোকসভায় একটি লিখিত আশ্বাসপত্রও দিয়েছেন তার জন্য। আর জানিয়েছেন, ভারত ভ্রমণে নারীদের সুরক্ষায় কোনও ভাবেই পিছ-পা হবে না ভারত সরকার। তারই প্রথম উদ্যোগ ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া হেল্পলাইন’ (১৮০০১১১৩৬৩ অথবা ১৩৬৩)। পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের দাবি, এ বার থেকে ভারত ভ্রমণে নারীর সম্মান, সুরক্ষা ও স্বাধীনতা সংক্রান্ত সব সমস্যার মুশকিল আসান এই হেল্পলাইন।

• কাশী থেকে কাঠমান্ডু সরাসরি বাসে

মাত্র এক রাত! শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসে। আর তাতেই কাশীর বিশ্বনাথকে প্রণাম ঠুকে এ বার থেকে সরাসরি হাজির হওয়া যাবে নেপালের কাঠমান্ডুর পশুপতিনাথের দরবারে। ‘ভারত-নেপাল মৈত্রী বাস সেবা’ নামের বাসযাত্রার কল্যাণেই পাওনা যাবে এই নির্ঝঞ্ঝাটের সফর।

এত দিন পর্যন্ত বাসে করে নেপাল যেতে হলে পা দিতেই হত রক্সৌলের মাটিতে। সেখান থেকে মিলত সরাসরি বাস। কাশী-কাঠমান্ডু নতুন বাসের সুবাদে এ বার রক্স‌ৌল না হয়েও দিব্যি পৌঁছে যাওয়া যাবে নেপালে। সময় লাগবে ১২ ঘণ্টা। কাশী থেকে রোজ বাস ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়, আর নেপালে প‌ৌঁছে দেবে পরের দিন সকাল সাড়ে ১০টায়। আজমপুর, গোরক্ষপুর, সোনাউলি আর ভৈরাহাওয়া হয়ে বাস যাবে নেপালের পথে।

আর এই সফরের ভাড়া?

কাশী থেকে ১৩৩৩ টাকা। গোরক্ষপুর থেকে উঠলে আর একটু কম, ৬৮৮ টাকা। নেপাল যাত্রার জন্য বাসে চড়া যেতে পারে স‌োনাউলি থেকেও। সে ক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ৬৪৫ টাকা।

সংবাদ সংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE