Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩

কংগ্রেসে বাড়ছে বাম জোটের দাবি, কটাক্ষ শাসক শিবিরের

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে কী করণীয়, তা নিয়ে মতামত নিতে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের দিল্লিতে বৈঠক ডেকেছেন রাহুল গাঁধী। তার আগে বামেদের সঙ্গেই জোট চেয়ে দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে কংগ্রেসের অন্দরে!

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:১৪
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে কী করণীয়, তা নিয়ে মতামত নিতে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের দিল্লিতে বৈঠক ডেকেছেন রাহুল গাঁধী। তার আগে বামেদের সঙ্গেই জোট চেয়ে দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে কংগ্রেসের অন্দরে!

Advertisement

দলের নিচু তলার কর্মীরা যে তৃণমূলের আক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পেতে বামেদের হাত ধরতেও প্রস্তুত, আগেই সে কথা বলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কোচবিহারে রবিবার তাঁর সামনেই দলের বিধায়ক থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীরা একই মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছেন। সিতাইয়ের কংগ্রেস বিধায়ক কেশব রায় যেমন সরাসরিই বলেছেন, “বামেরা যা করেছে, তার দশ গুণ বেশি অন্যায়-অত্যাচার গত সাড়ে চার বছরে তৃণমূল করেছে! এই জন্যেই মানুষ পরিবর্তনের পরিবর্তন চাইছেন। সেই জন্যই বামেদের সঙ্গে জোটের পক্ষে সওয়াল করা হয়েছে।” একই ভাবে কোচবিহার জেলা কংগ্রেসের সভাপতি শ্যামল চৌধুরী মঞ্চ থেকেই কর্মীদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে জোট চান কি না? একবাক্যে ‘না’ জবাব দিয়ে কর্মীরা বামেদের সঙ্গে বোঝাপড়ার দাবি তোলেন। যা দেখিয়ে শ্যামলবাবুর বক্তব্য, “নিচু স্তর থেকে ওই দাবি ওঠেছে। রাজ্য সভাপতি দিল্লিতে বিষয়টি জানাবেন।”

কোচবিহার পুরনো পোস্ট অফিস পাড়ার ওই সভায় অধীর অবশ্য জোট নিয়ে কিছু বলেননি। তবে পরে প্রদেশ সভাপতি বলেন, “জেলার তথা রাজ্যের নেতা-কর্মীরা জোটের পক্ষে সওয়াল করছেন। সওয়াল করা এক জিনিস আর সিদ্ধান্ত নেওয়া একটা জিনিস! নেতা-কর্মীদের সম্মান জানিয়ে তাঁদের কথা দিল্লিতে জানাব। জোটের ব্যাপারে সর্বভারতীয় নেতৃত্বই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এটুকু বলতে পারি তৃণমূলের সঙ্গে জোট হবে না!”

আলিপুরদুয়ারের পরে এ দিনই ফালাকাটায় সভা ছিল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের। বামফ্রন্টের জনসভা থেকে সূর্যবাবু সরাসরি কংগ্রেসকে নিয়ে কিছু বলেননি। তবে বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বান জানিয়েই অন্যান্য দলের ঝান্ডার তলায় থাকা মানুষকেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজোট করার কথা বলেছেন। পরে প্রশ্নের জবাবে সূর্যবাবু শুধু বলেন, ‘‘কংগ্রেস কী করবে, তা সাংবাদিকরাই ভাল বলতে পারবেন! জোট তো হবে মানুষের!”

Advertisement

বস্তুত, বাম-কংগ্রেস বোঝাপড়ার জল্পনা যত বাড়ছে, তৃণমূল শিবির থেকে উড়ে আসছে ততই কটাক্ষ! বিরোধীদের বক্তব্য, ওই জোট-সম্ভাবনা শাসক দলকে উদ্বেগে রেখেছে বলেই যে কোনও সভা-সম্মেলনে এখন জোট সম্পর্কে তাচ্ছিল্য করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন তৃণমূল নেতারা! শ্রীরামপুরের মাহেশে দলের কর্মী সম্মেলনে গিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম যেমন বলেছেন, ‘‘যাঁরা এখনও কংগ্রেস করেন, তাঁদের কথা ভেবে খারাপ লাগছে! কংগ্রেস কর্মীরা কি এ বার ইন্দিরা গাঁধীর পাশে জ্যোতি বসুর ছবি আঁকবেন?’’ আবার কাঁকসায় বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, ‘‘এ সব বাজার গরম করার চেষ্টা! এই জোটের কোনও রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই!’’ তাঁদের আসনসংখ্যা আরও বাড়বে বলেও দাবি করেছেন সুব্রতবাবু।

জোটের প্রশ্নে কংগ্রেসের ঘরেও যে দোলাচল আছে, তা-ও অবশ্য এ দিন স্পষ্ট হয়েছে পরিষদীয় দলনেতা
মহম্মদ সোহরাবের মম্তব্যে। তাঁর কথায়, কথায়, “আমরা একটা বাঁকের মুখে (ক্রসরোড) দাঁড়িয়ে রয়েছি। ভুলতে পারছি না ৩৪ বছর ধরে সিপিএমের অত্যাচার! ভুলতে পারছি না সবং কলেজে কৃষ্ণপ্রসাদ জানার খুনও! এই ঘটনা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তুলে ধরছি। বিচার-বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব।’’ সবং বিধানসভার অন্তর্গত ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কর্মীদের নিয়ে শেখচক মার্কেটে এ দিন সম্মেলনে এসেছিলেন এআইসিসি-র সম্পাদক শাকিল আহমেদ খান, সোহরাব, বিধায়ক মানস ভুঁইয়া, দলের রাজ্য মহিলা সভানেত্রী সুব্রতা দত্ত প্রমুখ। মানসবাবুর বক্তব্য, “অনেক কর্মী জোট নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন। কিন্তু আমি বলি, কোনও দিকে না তাকিয়ে কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে! সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা মাথা পেতে মেনে নেব!”
আর শাকিলের আশ্বাস, “আমরা এমন কোনও সিদ্ধান্ত হতে দেব না, যেখানে কংগ্রেসের লোকসান হয়। কংগ্রেসের লাভ হয়, এমন প্রয়াস আমাদের থাকবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.