Advertisement
E-Paper

নিশানায় সুরঞ্জন, দিল্লির মতো হুমকি যাদবপুরেও

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের মিছিল থেকে ‘দেশবিরোধী’ স্লোগান দেওয়া হলেও কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলে শনিবার উপাচার্যকে কার্যত নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করলেন বিজেপি নেতারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৯
প্রতিবাদে জেএনইউয়ের পাশে যাদবপুর। — ফাইল চিত্র

প্রতিবাদে জেএনইউয়ের পাশে যাদবপুর। — ফাইল চিত্র

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের মিছিল থেকে ‘দেশবিরোধী’ স্লোগান দেওয়া হলেও কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলে শনিবার উপাচার্যকে কার্যত নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করলেন বিজেপি নেতারা। এর পিছনে উপাচার্যের রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। আরও এক ধাপ এগিয়ে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘উপাচার্যের দম নেই। আমরা এখানে ক্ষমতায় থাকলে নিঃসন্দেহে যাদবপুরের ভিতরে ঢুকে দিল্লির মতো কলার ধরে ওই দেশবিরোধীদের বার করতাম। তা সে অধ্যাপক, কর্মচারী, ছাত্র যে-ই হোক।’’

বিজেপির এহেন আক্রমণের সামনে অবশ্য নতিস্বীকার করেননি উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। নিজের অবস্থানে অনড় থেকেই তিনি জানান, কোনও ছাত্রছাত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর করা যাদবপুরের ঐতিহ্যবিরোধী। ফলে সেই রাস্তায় তিনি হাঁটবেন না।

কিন্তু মুখে কুলুপ রাজ্য সরকারের। জেএনইউ-কাণ্ড নিয়ে অন্য সব রাজনৈতিক দল সরব হলেও গোড়া থেকেই চুপ করে রয়েছে রাজ্যের শাসক তৃণমূল। আর পাঁচটা বিষয়ে আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করতে অভ্যস্ত হলেও জেএনইউ নিয়ে এমনকী একান্ত আলোচনাতেও রা কাড়ছেন না শাসক দলের প্রায় কোনও নেতাই। রাজ্যের নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যত ‘অশালীন’ আক্রমণের মুখোমুখি হওয়ার পরেও কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘উপাচার্য যথেষ্ট ভারসাম্য রেখেই কাজ করেছেন।’’

জেএনইউ-এর ছাত্র সংসদের সভাপতি কানহাইয়া কুমারের গ্রেফতারের প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার ক্যাম্পাস চত্বরে মিছিল বার করেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। সেখানে এক দল পড়ুয়া দেশবিরোধী স্লোগান দেন বলে অভিযোগ। পরের দিন দেখা যায় এক দল পড়ুয়া আফজল গুরুর ফাঁসির বিরুদ্ধে সরব হয়ে পোস্টার লাগাচ্ছেন।

এর পরেই পাল্টা পথে নেমে পড়ে বিজেপি। শুক্রবার বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ অভিযোগ করেন, ‘‘যাদবপুরে যারা দেশবিরোধী স্লোগান দিয়েছে, তাদের সঙ্গে বিদেশের উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর যোগ থাকতে পারে।’’ সেই আক্রমণ এ দিন তীব্রতর হয়েছে। সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, ‘‘উপাচার্যের নাকের ডগায় ভারতকে ভাঙার, বিভাজনের ষড়যন্ত্র করে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। উপাচার্য যদি তাদের চিহ্নিত না করেন, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নেন, তা হলে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধিতে তিনি কাজ করছেন।’’ তৃণমূল তাঁকে নিয়োগ করেছে বলেই উপাচার্য চুপ করে রয়েছেন বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন সিদ্ধার্থনাথ।

রাজনৈতিক নেতাদের এই ধরনের মন্তব্যে ‘ব্যথিত’ সুরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘কোনও উপাচার্য সম্পর্কেই এমন মন্তব্য করা উচিত নয়।’’ শুধু তৃণমূল নয়, বাম জমানাতেও যে তিনি উপাচার্য ছিলেন সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সুরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘আমি রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ মাথায় রেখেই কাজ করার চেষ্টা করেছি। আগামী দিনেও করব।’’ বিজেপির দাবি উড়িয়ে উপাচার্য ফের জানিয়ে দেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। তার নিজস্ব নিয়মকানুন, আইন রয়েছে। সেই আইনেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা হচ্ছে।

বিজেপির আক্রমণের সমালোচনায় মুখর বিরোধীরাও। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘ওরা সব জায়গাতেই দুগ্ধপোষ্য উপাচার্য চায়। তাই সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এমন কথা বলার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন।’’ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘কোনও দলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উপাচার্য কাজ করেছেন বলে মনে করি না। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার বজায় রেখেই কাজ করেছেন।’’

উপাচার্যের পাশে দাঁড়িয়েছে শিক্ষকমহলও। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘যদি কোনও স্লোগান দেওয়া হয়ে থাকে, তবে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবেন। কোনও রাজনৈতিক দল অনর্থক বিতর্ক তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত করতে চাইলে তা নিন্দনীয়।’’ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকারের মতে, ‘‘যাদবপুরের উপাচার্য সম্মানযোগ্য কাজ করেছেন। তাঁকে এ ভাবে আক্রমণ করাটা জঘন্য কাজ।’’ যাদবপুরের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা অপরাধমূলক কাজ।’’

শিক্ষক সংগঠন আবুটা-র যাদবপুরের আহ্বায়ক গৌতম মাইতি বলেন, ‘‘উনি (দিলীপ ঘোষ) এ ভাবে হুমকি দিয়ে আইনবিরোধী কাজ করলেন। ওঁর বিরুদ্ধেই প্রশাসনের পদক্ষেপ করা উচিত।’’ যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন জুটা-র নেতা পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, ‘‘এক জন সংবেদনশীল উপাচার্য হিসেবে যা করার, সুরঞ্জনবাবু তাই করেছেন।’’

যাদবপুরের ঘটনা নিয়ে এ দিন টেলিফোন ভবন থেকে রাজভবন পর্যন্ত মিছিল করে বিজেপি। সেখানে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘চার দিন পার হয়ে গেলেও যাদবপুর নিয়ে রাজ্যপালকে কোনও রিপোর্ট দিলেন না রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)।’’ তাঁর অভিযোগ, সরকার চুপ করে রয়েছে, কারণ তারা চাইছে এ রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী কাজকর্ম চলুক।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy