Advertisement
E-Paper

পুকুরে মাখনায় লাভ

মালদহের চাঁচল আর হরিশ্চন্দ্রপুরে মাখানা চাষ হয়। পশ্চিমবঙ্গের অন্যত্র এই চাষ বিশেষ দেখা যায় না বা খাওয়ারও রেওয়াজ নেই। পানিফলের মতো জলাভূমির এই খাদ্য ফসল কিন্তু বেশ পুষ্টিকর। এর বীজ থেকে তৈরি খই বাজারে প্যাকেটে কেনা যায়।

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৬ ০০:৩২

আনন্দময় পুস্তে

মালদহের চাঁচল আর হরিশ্চন্দ্রপুরে মাখানা চাষ হয়। পশ্চিমবঙ্গের অন্যত্র এই চাষ বিশেষ দেখা যায় না বা খাওয়ারও রেওয়াজ নেই। পানিফলের মতো জলাভূমির এই খাদ্য ফসল কিন্তু বেশ পুষ্টিকর। এর বীজ থেকে তৈরি খই বাজারে প্যাকেটে কেনা যায়।

মাখনা খই

জলাভূমির মাটিতে পোঁতা মাখনা চারাগাছের কন্দ থেকে অনেকগুলি শাখা বার হয়। এক-একটি গাছে প্রায় ১৪-২০টি ফুল হয়। ফুল থেকে গোলাকৃতি কাঁটাযুক্ত অনেকটা কমলালেবুর মতো ফল হয়। এই ফলের মধ্যে ২০-২৫টি ছোট ছোট চেরী ফলের মতো গোলাকৃতি কালো-বাদামি রঙের শক্ত বীজত্বকযুক্ত বীজ থাকে। এই বীজ ভাল ভাবে শুকিয়ে নিয়ে গরম কড়াইয়ে বালিতে ভেজে নিতে হয়। এরপর মেঝেতে ফেলে কাঠের পাটাতন দিয়ে আঘাত করলেই বীজত্বক ফেটে খই পাওয়া যায়।

চাষের পদ্ধতি

বর্ষার শুরুতে পুকুর বা জলাভূমি পরিষ্কার করে দু’তিনটি চাষের পর মই দিয়ে জমি সমান করে নিতে হবে। নিজের চারা না থাকলে যাঁরা চাষ করেন, তাঁদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। প্রথম বছর চাষ করার পর আর বীজ বা চারার জন্য ভাবতে হবে না। জ্যৈষ্ঠের শেষে বা আষাঢ় মাসের মধ্যে চারা গাছগুলিকে মূল জমিতে দেড় থেকে দুই মিটার লাইন থেকে লাইন ও গাছ থেকে গাছের দূরত্বে শিকড়সুদ্ধ কন্দ মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। পুকুরের মাটি যদি বেশি পাঁক যুক্ত হয়, তাহলে দূরত্ব অাধ মিটার বাড়িয়ে দেওয়া যাবে। জমি উর্বর হলে দু’তিনটে চারা একসঙ্গেও লাগানো যেতে পারে। এক মাসেগাছ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য ছোট ছোট কাঁটাতে গাছ ভরে যায়। দেড় মাসের মাথায় পুরো পুকুর ছেয়ে যাবে । কাঁটা ভর্তি ওই পুকুরে নামা তখন কঠিন।

সার প্রয়োগ

জমি উর্বর হলে কিছু দেওয়ার দরকার নেই। কম উর্বর হলে জমি তৈরি করার সময় বিঘা প্রতি দেড় থেকে দুই টন গোবর সার ও ৪-৬ কেজি ইউরিয়া, ২০-২৫ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট এবং ৪-৫ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ দিলে ফলন ভাল হবে। গাছ লাগানোর ৬-৭ সপ্তাহ পরে ১৫-২০ দিন পরপর ৩-৪ বার গাছের উপর প্রতি লিটার জলে আধ গ্রাম জিঙ্ক ঘটিত অণুখাদ্য স্প্রে করলে ফলনের গুণগত মান ভাল হবে।

আগাছা দমন

গাছের বাড়বাড়ন্ত বেশি হওয়ায় খুব একটা জলজ আগাছা দেখা যায় না। তবে, পুকুরে জলঝাঁঝি, কচুরিপানা, শ্যাওলা ইত্যাদি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তা পরিষ্কার করতে হবে।

রোগ-পোকা

ভাদ্র-আশ্বিন মাসে মাখানাতে পামরি পোকা লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে নিমতেল (১৫,০০০ পিপিএম) এক মিলি হারে প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। লেদা পোকা লাগলে বিউভেরিয়া ব্যাসিয়ানা ২.০ গ্রাম। যদি আক্রমণ মারাত্মক হয়, তাহলে সেভিন পাউডার ১০ শতাংশ হেক্টর প্রতি ২৫ কেজি ছড়িয়ে দিতে হবে অথবা সাইপারমিথরিন ০.৫ শতাংশ ইসি প্রতি লিটার জলে ১ মিলি হিসাবে দ্রবণ তৈরি করে স্প্রে করতে হবে। গোড়া পচা, গুল্ম পচা, পাতা পচা মাখানা গাছের মারাত্মক রোগ। এই রোগ অবশ্য বীজ থেকে সংক্রামিত হয়। তাই এর হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে চারা শোধন করে নিতে হবে।

বীজ তোলা

শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছ পচতে শুরু করে। ফলত্বক পচে গিয়ে শক্ত কালো-বাদামি রঙের বীজ মাটির উপর গাছের গোড়ায় ছড়িয়ে থাকে। বাঁশের ঝুড়ি দিয়ে কাদাসমেত বীজগুলো তুলে নেওয়া হয়। এরপর নাইলনের জালে রেখে পরিষ্কার জলে ভাল ভাবে বীজগুলোকে ধুয়ে নেওয়া হয়। বীজের উপর সাদা কাগজের মতো পাতলা বীজের আবরণী থাকে। একটু চাপ দিয়ে ঘসে ধুয়ে নিলে তা পরিষ্কার হয়ে যায়। এর পর রোদে ভাল ভাবে শুকিয়ে নিয়ে বীজ বস্তাবন্দি করে ফেলুন।

পরবর্তী বছরের চাষের জন্য পুষ্ট বড় বীজ সংগ্রহ করে জলের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে হবে। জল ছাড়া রাখা যাবে না। ফাল্গুন মাসের শেষে অঙ্কুর বার হলে নার্শারি পুকুরে বুনে নতুন চারা তৈরি করতে হবে।

লেখক বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy