Advertisement
E-Paper

ঘুষ নিয়ে ধৃত আবগারি আধিকারিক

এক মদ ব্যবসায়ীর থেকে ঘুষ নেওয়ার সময় বুধবার ঘাটালে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন অশোককুমার দে নামে আবগারি দফতরের এক আধিকারিক। রাতে হুগলির শ্রীরামপুরে তাঁর বাড়ি এবং দাসপুরে তাঁর ভাড়াবাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা উদ্ধার করলেন রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার অফিসাররা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪৬
বন্ধ: অশোককুমার দে’র শ্রীরামপুরের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

বন্ধ: অশোককুমার দে’র শ্রীরামপুরের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

এক মদ ব্যবসায়ীর থেকে ঘুষ নেওয়ার সময় বুধবার ঘাটালে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন অশোককুমার দে নামে আবগারি দফতরের এক আধিকারিক। রাতে হুগলির শ্রীরামপুরে তাঁর বাড়ি এবং দাসপুরে তাঁর ভাড়াবাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা উদ্ধার করলেন রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার অফিসাররা।

কাজের সুবিধার জন্য দাসপুরের ভাড়ার ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন অশোকবাবু। শ্রীরামপুরের চন্দ্রমোহন রায় লেনের বাড়িতে থাকতেন অশোকবাবুর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে। প্রতি শুক্রবার সেখানে আসতেন অশোকবাবু। সোমবার ফিরে যেতেন। শ্রীরামপুরের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে থ হয়ে যান তদন্তকারীরা। আলমারি, বাক্স, শো-কেস, বিছানার তলায় থরে থরে সাজানো টাকা! সব মিলিয়ে ওই বাড়ি থেকে ৮৬ লক্ষ ৯৭ হাজার ৫১০ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। এ ছাড়াও, বেশ কিছু সোনার গয়না, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং লকারের সন্ধান মিলেছে বলে তদন্তকারীরা দাবি করেছেন।

রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার এডিজি রামফল পওয়ার বলেন, ‘‘অশোকবাবুর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৯৩ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ ধৃতকে বৃহস্পতিবার বিচার ভবনের বিশেষ আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

আড়াই বছর আগে ঘাটাল রেঞ্জের ডেপুটি এক্সাইজ কালেক্টর হিসাবে যোগ দেন অশোকবাবু। দফতরের ঘাটাল এবং চন্দ্রকোনা রোড সার্কেলের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। টাকার বিনিময়ে বেআইনি মদের কারবারে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি কাজে যোগ দেওয়ার পরে ঘাটাল এবং চন্দ্রকোনা রোড এলাকায় বেআইনি মদের দোকানের সংখ্যা বাড়ে। রমরমা বাড়ে চোলাই মদেরও। তাঁর অধীনে প্রায় ৪৫টি মদের দোকান ছিল। অভিযোগ, প্রতিটি দোকান থেকে মাসোহারা হিসেবে প্রায় পাঁচশো টাকা নিতেন অশোকবাবু। চন্দ্রকোনা রোডের মাধবপুরের একটি মদের দোকানের মালিক এ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। সেই মতো তদন্তকারীরা টোপ দেন ওই অশোকবাবুকে। তদন্তকারীরা জানান, বুধবার দুপুরে ঘাটাল মহকুমার দাসপুরে নিজের অফিসে বসেই এক মদ ব্যবসায়ীর থেকে ৬ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার সময়ই অশোকবাবু ধরা পড়ে যান। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই দু’টি বাড়িতে তল্লাশি তলে। শ্রীরামপুরের বাড়িতে তল্লাশির সময় অশোকবাবুর স্ত্রী, ছেলে এবং মেয়ে তিন জনেই বাড়িতে ছিলেন।

এতদিন যে অশোকবাবুকে অ্যাটাচি হাতে গটগট করে ঢুকতে-বেরোতে দেখতেন চন্দ্রমোহন রায় লেনের বাসিন্দারা, বুধবার তাঁর বাড়িতে কেন পুলিশ হানা দিল, তা প্রথমে বোধগম্য হয়নি কারও। পরে সব শুনে তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ!

শ্রীরামপুরে বছর কুড়ি বসবাস করছেন অশোকবাবু। আগে এখানে আবগারি দফতরের কোয়ার্টারে থাকতেন‌। পরে তিনতলা বাড়ি করেন। বৃহস্পতিবার বাড়িটি তালাবন্ধ ছিল। পড়শিরা জানান, বাড়ির সবাই সকালেই বেরিয়ে যান। ভাল চাকরি করলেও অশোকবাবুর চালচলন ছিল সাধারণ। মিঠু মুখোপাধ্যায় নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘অশোকবাবু অত্যন্ত ভদ্র ছিলেন। যা সব শুনছি, বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে।’’ ওই এলাকারই এক প্রৌঢ় বলেন, ‘‘আধ্যাত্মিক কথাবার্তা খুব বলতেন অশোকবাবু। তিনি এই রকম!’’

বুধবারের তল্লাশিতে উপস্থিত এক অফিসার বলেন, ‘‘বাড়ির ভিতরটা সাদামাটাই। কেন অত টাকা উনি বাড়িতে রাখলেন, সেটাই রহস্য!’’

1 Crore Bribe Excise officer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy