বইয়ের পাতায় পড়ে প্রকৃতিটাও বাস্তবের সঙ্গে মেলাতে পারছিল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র তীর্থ। আর্থিক কারণে প্রতিটি এলাকায় ঘোরার সামর্থ্য নেই বললেই চলে। গত বছরই মিলেছে সবজু সাথী সাইকেল। তা নিয়েই রাজ্য ভ্রমণে বেরিয়েছে জলপাইগুড়ির বাসিন্দা তীর্থকুমার রায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ইসলামপুরে পৌঁছয় সে। সেখানে মহকুমাশাসকের দফতর থেকে ইসলামপুর থানার প্রতি এলাকায় প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে ফের রওনা দেয় গন্তব্য স্থলের দিকে। তীর্থ জানিয়েছে, সে যাত্রা শেষ করবে নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে। কেন না তাঁর দেওয়া সাইকেল নিয়েই যে ঘুরে প্রকৃতিটাকে চিনতে পারছে সে।
বছর সতেরোর তীর্থ জানিয়েছে, বাবা সুুশীলচন্দ্র রায় একটি ওষুধ নির্মাণ সংস্থায় চাকরি করতেন। জন্মের প্রথম বছরেই বাবাকে হারিয়েছে সে। মা লক্ষ্মী রায় কোনও রকমে সংসার চালিয়ে তাকে পড়াশোনা করিয়েছেন। তিনিও মারা যান যখন সে নবম শ্রেণির ছাত্র। তখন থেকে তার দেখাশোনার দায়িত্ব এসে পড়ে জ্যাঠামশাইয়ের উপর।
জলপাইগুড়ির সোনাউল্লা হাইস্কুলের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র তীর্থের প্রতিটি মুহূর্তই কেটেছে প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে। ফলে কোনও বাধাই যেন বাধা মনে হয় না তার। তীর্থ জানিয়েছে, গত মার্চ মাসে বেরিয়েও পর পর দু’বার দার্জিলিং-এর পাহাড়ে সাইকেল চালিয়ে উঠতে পারেনি। সাইকেল নিয়ে হাঁটা পথেই উঠতে হয়েছে। তবে সমস্ত প্রতিকূলতা এড়িয়ে দার্জিলিং-এ পৌঁছনোর পরই রোগে আক্রান্ত হয়ে ফিরতে হয় তাকে। মামার মৃত্যুর সংবাদ পেয়েও এক বার ফিরতে হয় বাড়িতে। তবে আর বাধা নয়। এ বার সে রওনা দিয়েছে সোজা কলকাতার উদ্দেশে। সমস্ত জেলা ঘুরে কলকাতায় পৌঁছবে।
সাদা স্কুল ইউনিফর্ম রয়েছে তার পরনে। গলায় ঝুলছে স্কুলের পরিচয় পত্র। ক্যলোরি বাড়াতে রেখেছে ছোলা। সঙ্গে স্কুল ব্যাগ, জামাকাপড়ের ব্যাগ, জলের বোতল ছাড়াও রয়েছে একটি নোটবুক। আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে সবার কাছে বাড়িয়ে দিয়েছে তার নোট বুক। তাঁদের লেখা দু’-চার কথা বই হিসেবে প্রকাশ করার ইচ্ছা তাঁর। প্রতিদিন প্রায় একশো কিলোমিটার যাওয়ার টার্গেট রয়েছে তার। রাস্তা চিনতে কাজে লাগছে অ্যনড্রয়েড মোবাইলটি। সারা দিন সাইকেল চালিয়ে রাতে কখনও থানায় কখনও বা সরকারি লজে কাটিয়ে ফের রওনা দিচ্ছে সে। এ দিকে রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ার চাপ। তাই সারা দিন সাইকেল চালিয়েও রাতে পড়াশোনা করছে মনোযোগ দিয়ে। পড়তে গিয়ে কোনও অসুবিধা হলে দিনে এলাকার কোনও স্কুলে ঢুকে শিক্ষকদের সাহায্যও নিচ্ছে তীর্থ। এর পর দেশে ও বিদেশেও ঘোরার ইচ্ছে তার।
এই স্কুল ছাত্রের মনের আশার প্রশংসা করেছেন ইসলামপুর থানার আইসি সুকুমার ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘কারও প্রকৃতির প্রতি এতটা টান না থাকলে সাইকেল নিয়ে ভ্রমণে বের হতে পারত না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy