Advertisement
E-Paper

খুনের হুমকির পরেই মিলল দেহ

পড়শি এক পরিবার তাকে চোর বলেছিল। খুন করে ফেলবে বলে হুমকিও দিয়েছিল। তার ২৪ ঘণ্টা পরেই বারো বছরের সুরজিৎ বাগদির দেহ মিলল গাছে, ঝুলন্ত অবস্থায়। দেহ দেখে তখন অবশ্য তাকে চেনাই দায়। সারা দেহে বিড়ির ছ্যাঁকা, মারধরের দাগ। দড়ি দিয়ে বাধার চিহ্ন পায়ে! মহম্মদবাজারের ডামড়া গ্রামের ঘটনা। ঘটনা জানাজানি হতেই গা ঢাকা দিল অভিযুক্ত কার্তিক বাগদি ও তাঁর পরিবার।

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:০২
নিহত সুরজিৎ বাগদি। —নিজস্ব চিত্র।

নিহত সুরজিৎ বাগদি। —নিজস্ব চিত্র।

পড়শি এক পরিবার তাকে চোর বলেছিল। খুন করে ফেলবে বলে হুমকিও দিয়েছিল। তার ২৪ ঘণ্টা পরেই বারো বছরের সুরজিৎ বাগদির দেহ মিলল গাছে, ঝুলন্ত অবস্থায়। দেহ দেখে তখন অবশ্য তাকে চেনাই দায়। সারা দেহে বিড়ির ছ্যাঁকা, মারধরের দাগ। দড়ি দিয়ে বাধার চিহ্ন পায়ে! মহম্মদবাজারের ডামড়া গ্রামের ঘটনা। ঘটনা জানাজানি হতেই গা ঢাকা দিল অভিযুক্ত কার্তিক বাগদি ও তাঁর পরিবার।

পরিবারের দাবি, গ্রামেরই প্রতিবেশী কার্তিক বাগদির পরিবার টাকা পয়সা চুরির অভিযোগে গত মঙ্গলবার ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া সুরজিতের বাড়িতে এসে তাকে মারধর করে। এবং খুন করে দেবে বলে হুমকি দেয়। বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ সুরজিৎ বাড়ি থেকে বের হয়। তার পর আর সে ফেরেনি। বৃহস্পতিবার গ্রামের বাইরে জয়সাগর ও ভাড়কাটিয়া নামে দু’টি পুকুরের মাঝের পাড়ের একটি কদম গাছের ডালে গলায় নাইলনের দড়িতে তাকে ঝুলতে দেখা যায়। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই লোকজন দেহটি নামিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। মৃতের শরীরে বিড়ির ছ্যাকা ও মারধরের দাগ রয়েছে। পায়েও দড়ি বাঁধার দাগ আছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মহম্মদবাজারের দামড়া গ্রামের বাসিন্দা পিরু বাগদির এক মেয়ে অপর্ণা ও এক ছেলে সুরজিৎ। দুজনেই ডামড়া স্কুলে পড়ে। মেয়ে নবম ও ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। মঙ্গলবার সকালে গ্রামে কানাঘুসো শোনা যায়, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী এক পরিবার, তাঁদের বাড়ি থেকে টাকা পয়সা চুরির অভিযোগ করেছে গ্রামবাসীদের কাছে। এ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননি পিরুবাবু। ওই দিনই তিনি নবান্ন উপলক্ষে শ্বশুর বাড়ি চলে যান। ছেলে মেয়ে বাড়িতে থাকে। সে দিনই সন্ধ্যায় যে প্রতিবেশী পরিবার তাঁদের বাড়িতে চুরির অভিযোগ করেছিলেন তাঁরা পিরুবাবুর বাড়িতে চড়াও হয়ে সুরজিৎকে মারধর করে। প্রতিবাদ করায় দিদি অপর্ণাকেও মারে বলে অভিযোগ।

পরিবারের দাবি, অপর্ণাদের চিৎকারে ছুটে আসেন পাশের বাড়ি থেকে তাদের আত্মীয়রা। আত্মীয়দের তাড়া খেয়ে সুরজিৎদের ছেড়ে পালায়। ভায়ের এরকম মৃত্যুতে হতবাক অপর্ণা ভাল করে কথা বলতে পারছে না। অপর্ণার দাবি, ‘‘ওরা যাওয়ার সময় ভাইকে পেলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যায়। ভাই বুধবার সকাল নটা নাগাদ বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর আর ফেরেনি। বাবা মামার বাড়ি থেকে ফিরলে বাবাকে সব জানাই। দুপুর থেকে আমরা সবাই ভাইকে খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু কোথাও খুজে পাইনি।’’ সুরজিতের মাসি শেফালি দাসের দাবি, ‘‘সুরজিৎকে মেরে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেহে অজস্র বিড়ির ছ্যাঁকা ও মারধরের দাগ রয়েছে। এমনকী নাইলনের দড়ি দিয়ে যে পা বাঁধা হয়েছিল, তার প্রমাণ দু’টি পায়েই দড়ির দাগ।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি বোনপোর মৃত্যুর খবর পেয়ে আজ সকালেই আসি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সুরজিৎকে মেরে গাছে ঝুলিয়ে দেয় ওই পরিবারের লোকজন।’’

এ দিন ছেলের মৃত্যুর খবরে কার্যত বাক শক্তি হারিয়েছেন পিরুবাবু। বছর দুই আগে স্ত্রী ফুলটুসি মারা গিয়েছেন। দিন মজুরের কাজ করে খুব কষ্ট করে ছেলে মেয়েকে পড়াচ্ছিলেন তিনি। স্বপ্ন ছিল, ছেলে মেয়ে লেখাপড়া শিখে চাকরি করবে। কিন্তু ছেলের মারা যাওয়ার খবরে সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল! দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে চোখের জল মুছতে মুছতে কোনও রকমে সে কথাই বলছিলেন। ‘‘চুরির অপবাদ দিয়ে ছেলেটাকে মেরে ফেলল। এর বিচার চাই।’’

এ দিন গ্রামের বেশির ভাগ মানুষেরই দাবি করেছেন, সুরজিৎকে মেরে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ, কেউ গলায় দড়ি বেঁধে গাছে ঝুললে, কোনও মতেই তার পায়ে দড়ি বাঁধার দাগ থাকার কথা নয়। পিরুবাবু ইতিমধ্যেই প্রতিবেশী কার্তিক বাগদি ও তাঁর বাবা আকাল বাগদি, কার্তিকের কাকা সনৎ ও তার দুই ছেলে বিষু ও বাপ্পার নামে অভিযোগ দায়ের করেছে। তবে যে পরিবারের বিরুদ্ধে মেরে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তারা ইতিমধ্যেই সকলে পালিয়েছে। এ দিনই দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য সিউড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

12 year boy beaten up tortured Death mohammedbazar bhaskarjyoti majumdar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy