জ্বরে ভুগে বাদুড়িয়ায় মারা গেলেন দুই মহিলা। দেগঙ্গায় মারা গিয়েছেন ২ জন। হাবরার এক মহিলারও মৃত্যু হয়েছে জ্বরে।
বাদুড়িয়ার ভোজপাড়া গ্রামের সাজেদা বিবি (৪৫) এবং আকলিমা বিবির (৪৪) পরিবারের দাবি, ডেঙ্গিতে ভুগেই মারা গিয়েছেন তাঁরা। একজন কলকাতার নার্সিংহোমে, অন্যজন বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ডেঙ্গিতে নয়, মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।
এরই প্রতিবাদ করে বাদুড়িয়ার বিধায়ক কাজি আব্দুর রহিম দিলু বলেন, ‘‘ঘরে ঘরে ডেঙ্গি। হাজার হাজার মানুষ ভুগছেন। ইতিমধ্যে বাদুড়িয়ায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। অথচ সে কথা স্বাস্থ্য দফতর স্বীকারই করছে না। উল্টে ডেঙ্গি চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’ তাঁর অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতর নিজেদের অকর্মণ্যতা ঢাকতে চাইছে।
জ্বরের প্রকোপ ছড়িয়েছে স্বরূপনগরের সীমান্তবর্তী একাধিক গ্রামেও। শুক্রবার গোবিন্দপুর অঞ্চলের পূর্বপোলতা গ্রামে চিকিৎসা শিবিরের আয়োজন করা হয়। শাঁড়াপুল গ্রামীণ হাসপাতালে বেড ভরে যাওয়ায় রোগীদের অনেককে মেঝেয় শুইয়ে রাখা হচ্ছে। অসুস্থদের বড় অংশের দাবি, হাসপাতালে ডেঙ্গির পরীক্ষা না হওয়ায় বাইরে থেকে হাজার-বারোশো টাকা খরচ করে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষে হাসপাতাল চত্বর-সহ এলাকায় ঝোপঝাড় সাফ করতে দেখা যায়।
ইতিমধ্যে চারঘাট, বড় বাঁকড়া এবং সীমান্তবর্তী কৈজুড়ি গ্রামে ৩টি-সহ মোট পাঁচটি চিকিৎসা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিডিও বিপ্লব বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘জ্বরের মোকাবিলায় ব্লিচিং, তেল ছড়ানো হচ্ছে।’’
বসিরহাট ১ ও ২ ব্লকেও জ্বর ছড়িয়েছে। চাঁপাপুকুর পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাপক হারে ডেঙ্গি-আক্রান্তের খবর মিলেছে। দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও গ্রামের মানুষের দাবি।
এ দিকে, জ্বরে ভুগে দেগঙ্গাতেও ফের দু’জনের প্রাণ গিয়েছে। বৃহস্পতিবার বেড়াচাঁপার বাসিন্দা নাজিমা বিবি (২৬) মারা যান নার্সিংহোমে। শুক্রবার সকালে বাড়িতেই মৃত্যু হয় হাদিপুরের শানপুকুর গ্রামের মামনি বিবির (২০)। তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দেগঙ্গায় ইতিমধ্যেই জ্বরে মৃত্যু হয়েছে সরকারি ভাবে ২৭ জনের। তার মধ্যে এক কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গিতে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা সর্দারপাড়ার বাসিন্দা নাজিমা বিবির। নাজিমা ও তাঁর স্বামীকে সোমবার বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন। এক আত্মীয় সাবিদ আলি জানান, বুধবার নাজিমার অবস্থার অবনতি হলে আরজিকর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পথে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে প়ড়ায় মাঝপথে একটি নাসিংহোমে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার সেখানেই মারা যান নাজিমা।
শুক্রবার সকালে জ্বরে আক্রান্ত মামনির মৃত্যু ঘিরে তুলকালাম বাধে দেগঙ্গার হাদিপুর ঝিকরা ১ পঞ্চায়েতের শানপুকুর গ্রামে। সময় মতো তাঁর চিকিৎসা করানো হয়নি, এই অভিযোগ তুলে ভাঙচুর চালানো হয় শ্বশুরবাড়িতে। মারধর করা হয় শাশুড়ি মর্জিনা বিবিকে। পুলিশ গিয়ে মামনির স্বামী বাপ্পা মণ্ডল ও শাশুড়িকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
মামনির বাবা আনসার আলি বলেন, ‘‘মেয়ের জ্বর হয়েছে বলে শুনেছিলাম। সে জন্য মৃত্যু হবে ভাবতে পারছি না। সঠিক চিকিৎসা করানো গেল না মেয়েটার। পেটের বাচ্চাটাও মারা গিয়েছে।’’
হাবরার ফুলতলার বাসিন্দা রমা গোলদারও (২৫) জ্বর নিয়ে ভর্তি ছিলেন আরজিকর হাসপাতালে। শুক্রবার মারা গিয়েছেন তিনিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy