ধৃত প্রসেনজিৎ সরকার। নিজস্ব চিত্র।
গত মাসের গোড়ায় বনগাঁর হরিদাসপুর এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয়েছিল এক মোটরভ্যান-চালককে। সেই খুনের জন্য কি না ৮০ হাজার টাকার ‘সুপারি’!
গফ্ফর মণ্ডল নামে ওই মোটভ্যান-চালক খুনে জড়িত অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতারের পরে পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা অপরাধের কথা কবুল করেছে। তারা জানিয়েছে, ওই ভ্যান-চালককে বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কের জন্য খুন করা হয়। ওই মহিলার স্বামী এ জন্য তাদের ৮০ হাজার টাকার ‘সুপারি’ দিয়েছিল।
রবিবার গভীর রাতে রাজারহাট থানার কাঁদা গ্রাম থেকে নিহতের পড়শি ফারুখ মণ্ডল এবং সোমবার সকালে স্থানীয় খলিতপুর গ্রাম থেকে প্রসেনজিৎ সরকার নামে দুই অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে প্রসেনজিৎই মূল অভিযুক্ত। এসডিপিও (বনগাঁ) অনিল রায় জানিয়েছেন, প্রসেনজিৎই গুলি করে গফ্ফরকে খুন করেছিল বলে জেরায় স্বীকার করেছে। তার কাছ থেকে একটি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া পিস্তল থেকেই প্রসেনজিৎ গুলি চালিয়েছিল। মোট চার জন ওই খুনে যুক্ত। বাকি দু’জনের খোঁজ চলছে।
প্রসেনজিৎ পুলিশকে জানিয়েছে, তার মা অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন। সে কারণেই সে খুনের ‘সুপারি’ নিয়েছিল। কিন্তু পেয়েছে মাত্র কুড়ি হাজার টাকা। সে আগ্নেয়াস্ত্র কোথা থেকে এনেছিল, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি সকালে হরিদাসপুরের পঞ্চাননতলা গ্রামে হরিদাসপুর-ভিড়ে সড়কে খুন করা হয় স্থানীয় কমলাপুর গ্রামের বাসিন্দা গফ্ফরকে। এ কথা জানাজানি হতেই গফ্ফরের প্রতিবেশী ফারুখের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন গ্রামবাসী।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই এলাকারই এক ব্যক্তি কর্মসূত্রে সৌদি আরবে থাকেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে গফ্ফরের বিবাহ-বর্হিভূত সম্পর্ক ছিল বলে তিনি সন্দেহ করতেন। সেই সন্দেহ থেকেই তিনি খুনের পরিকল্পনা করেন। দুষ্কৃতী নিয়োগের জন্য ভগ্নিপতির সাহায্য নেন। ওই ভগ্নিপতির সঙ্গে প্রসেনজিতের পরিচয় ছিল। খুনের জন্য রফা হয় ৮০ হাজার টাকায়। প্রসেনজিৎ ফারুখের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ফারুখের নামে নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকবার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের কাছে।
তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, ঘটনার সকালে ফারুখ বনগাঁ থেকে গরু কিনতে যাওয়ার কথা জানায় গফ্ফরকে। কথামতো গফ্ফর তাঁর মোটরভ্যানটি নিয়ে পঞ্চাননতলায় উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানেই দু’জনের মিলিত হওয়ার কথা ছিল।
ফারুখ নিজের মোটরবাইক নিয়ে বনগাঁ ব্লক অফিসের কাছে গিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা প্রসেনজিতের সঙ্গে দেখা করে। নিজের মোটরবাইকটি সে স্থানীয় এক জনের বাড়িতে রেখে দেয়। সেখানে ততক্ষণে চলে আসা গফ্ফরের ভ্যানে প্রসেনজিৎকে তুলে দেয় ফারুক। ফারুখ প্রসেনজিতের বাইক নিয়ে পিছনে পিছনে যেতে থাকে। পঞ্চাননতলা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার আগে প্রসেনজিৎ ভ্যান থেকে নেমে ফারুখকে ভ্যানে তুলে দেয়। প্রসেনিজিৎ বাইক নিয়ে খাবার কেনার কথা বলে চলে যায়। গফ্ফরের ভ্যানে ফারুখ পঞ্চাননতলায় এসে অপেক্ষা করতে থাকে প্রসেনজিতের জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হয় প্রসেনজিৎ। তারপর খুব কাছ থেকে পরিকল্পনামতো প্রসেনজিৎ পরপর দু’টি গুলি করে গফ্ফরকে। তারপর দু’জনে বাইকে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর ফারুখ পালিয়ে রাজারহাটে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy