E-Paper

‘শেষ ট্রেনে এড়িয়ে চলি লেডিজ় কামরা’

নিশিপথের দখল নিতে স্বাধীনতা দিবসে আগের রাতে রাস্তায় নেমেছিলেন মেয়েরা। যাঁদের কাজের জগৎ থেকে ফিরতে হয় রাত করে, তাঁরা কতটা নিরাপদ বোধ করেন, সে প্রশ্ন জোরদার হয়ে উঠেছে এই আন্দোলনের পরে। খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৪ ১০:০৩
শেষ ট্রেনে মহিলা কামরায় হাতেগোনা যাত্রী।

শেষ ট্রেনে মহিলা কামরায় হাতেগোনা যাত্রী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক ।

রাত ১টা ২৩ মিনিট, রাতের শেষ বনগাঁ লোকাল শিয়ালদহ থেকে এসে পৌঁছল মছলন্দপুর স্টেশনে। শুনশান স্টেশন চত্বর। দোকানপাট কার্যত সবই বন্ধ। প্ল্যাটফর্মে কোনও পুলিশ কর্মীকে দেখা গেল না। হাতেগোনা কয়েক জন নামলেন ট্রেন থেকে। বারো কোচের ট্রেনের পিছনের দিকের লেডিজ় কামরায় উঁকি মারা গেল। জনা চারেক মহিলা যাত্রী বসে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চিত্র সাংবাদিক নির্মাল্য প্রামাণিককে নিয়ে কামরায় উঠতেই এক বৃদ্ধা রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘‘তোমরা ছেলেরা লেডিজ় কামরায় উঠলে কেন?’’ পরিচয় দিয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করা গেল। তবে কামরায় কোনও পুলিশ কর্মী চোখে পড়ল না। আরতি বিশ্বাস দাস নামে ওই বৃদ্ধা বললেন, ‘‘শিয়ালদহ থেকে রাত ১১টা ৫০ মিনিটের শেষ বনগাঁ লোকালে প্রায়ই বাড়ি ফিরি। বারাসতের পর থেকে কামরায় কোনও পুলিশ দেখতে পাই না।’’ কামরায় এক তরুণী ছিলেন। গোবরডাঙা স্টেশনে নামলেন। জানা গেল, এক পুরুষ আত্মীয় প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকবেন। তরুণীর কথায়, ‘‘রাতে ট্রেন থেকে নেমে একা বাড়ি ফিরি, এটা বাড়ির কেউ চান না। কেউ সঙ্গে থাকলে আমিও নিশ্চিন্তে থাকি।’’

সাধারণ কামরায় কয়েক জন মহিলা ছিলেন। তাঁরা জানালেন, রাতে শেষ ট্রেন বা তার আগের ট্রেনে ফেরেন। আগে লেডিজ় কামরায় উঠতেন। এক বার নেশা করে কয়েক জন যুবক কামরায় উঠে পড়েছিল। তারপর থেকে সাধারণ কামরায় ওঠেন। লেডিজ় কামরায় শেষ ট্রেনে মেয়েরা খুবই কম থাকেন বলে জানালেন তাঁরা।

ট্রেনের পিছনের দিকের লেডিজ় কামরায় পুলিশ কর্মীরা না থাকলেও ট্রেনের সামনের দিকের লেডিজ কামরায় দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার এবং এক জন পুলিশ কর্মীর দেখা মিলল। বনগাঁ স্টেশনে দেখা গেল, সিভিক ভলান্টিয়ার এবং পুলিশ কর্মীরা একটি কামরা থেকে নামছেন। যদিও সেই কামরায় কোনও যাত্রী ছিলেন না।

রাত ১টা ৫০ মিনিটে ট্রেন বনগাঁ স্টেশনে ঢোকার পরে এক যুবক ঘুম ভেঙে উঠে জানতে চাইলেন, এটা কোন স্টেশন? বোঝা গেল, গোবরডাঙা স্টেশনে নামার কথা থাকলেও নেশার ঘোরে বনগাঁয় চলে এসেছেন। ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছিলেন না। ফিরতি ট্রেন ধরবেন দেবেন বলে ফের ঘুমিয়ে পড়লেন।

প্ল্যাটফর্ম চত্বর ছিল শুনশান। পুলিশ কর্মীদের আনাগোনা দেখা গেল। স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাইকে যশোর রোড ধরে রাখালদাস সেতু পর্যন্ত আসার পথে কোনও পুলিশের গাড়ির দেখা মিলল না। শহরের দোকানপাট তখন সব বন্ধ। রাখালদাস সেতুর কাছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকের গ্লাসে মদ ঢেলে নেশা করতে দেখা গেল একদল যুবকদের। বাটারমোড়ে দেখা গেল, চার মহিলা ভ্যানে করে স্টেশনে যাচ্ছেন। জানা গেল, তাঁরা কেউ গৃহসহায়িকার কাজ করেন, কেউ মিষ্টি বিক্রি করেন কলকাতায়। রাত ৩টে নাগাদ প্রথম ট্রেন ধরবেন। বললেন, ‘‘রাতে বেরোতে ভয় তো লাগেই। তবে পেটের টানে যেতে হয়। আর জি করের ঘটনার পর থেকে আমরা দল বেঁধে যাতায়াত করব বলে ঠিক করেছি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, বনগাঁ শহরে রাতে দু’টি গাড়ি টহল দেয়। এ ছাড়া হাসপাতাল, সোনাপট্টি এলাকা সহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়।

বনগাঁ থেকে শিয়ালদহগামী শেষ ট্রেন রাত ১০টা ৪০ মিনিটে। সে সময়ে আরপিএফ কর্মীদের স্টেশন চত্বরে ঘেরাঘুরি করতে দেখা যায় বলে জানালেন অনেকে। বনগাঁ জিআরপি সূত্রে জানানো হয়েছে, রাতের শেষ ট্রেন এবং ভোররাতে প্রথম ট্রেনের কামরায় রোজই পুলিশ মোতায়েন থাকে। বিশেষ করে মহিলা কামরায় তো থাকেই।

গোবরডাঙা স্টেশনে এক মহিলাকে ট্রেনে তুলে দিতে এসেছিলেন তাঁর স্বামী। মহিলা একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। রাতে ডিউটিতে যাচ্ছিলেন। স্বামী বললেন, ‘‘আর জি কর-কাণ্ডের পরে স্ত্রীকে বাড়ি থেকে আর একা ছাড়তে সাহস হয় না। তাই পৌঁছে দিয়ে গেলাম। ট্রেনে উঠে সহকর্মীদের পেয়ে পাবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangaon Local

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy