সাপের কামড় খেয়ে ওঝা-গুনিনের কাছে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ ঝাড়ফুঁক, তুকতাক চলে। পরে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। নাম, সিরাজুল গাজি (৪৬)। বৃহস্পতিবার সকালে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে আনার পরে মারা যান তিনি। সাপের কামড়ের পরে হাসপাতালে না এনে এখনও কুসংস্কারবশত ওঝা-গুনিনের কাছে ভরসা করেন কিছু মানুষ। চিকিৎসক মহল ঘটনার নিন্দা করেছেন।আরও বেশি করে এ নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রচারের দরকার বলে মনে করছেন তাঁরা।
গোসাবার আরামপুরের বাসিন্দা সিরাজুল গাজি কর্মসূত্রে সোদপুরে থাকেন। সেখানেই গত সোমবার ঘাস পরিষ্কার করতে গিয়ে চন্দ্রবোড়া সাপের কামড় খান। পরিবারের দাবি, সাপে কামড়ানোর পরে কলকাতার সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সিরাজুলকে। সেখানে কোনও মতে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে গোসাবায় নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যেরা। স্থানীয় এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার দিনভর চলে ঝাড়ফুঁক, তুকতাক। মাথায়, পায়ে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গা কেটে ঝাড়ফুঁক করা হয়। নানা ধরনের গাছ-গাছড়া বেঁধে দেওয়া হয় শরীরে। কিন্তু ক্রমশ নিস্তেজ হতে থাকেন সিরাজুল। অবস্থা বেগতিক দেখে বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে বাসন্তী ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে দ্রুত ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ দেহ ময়না তদন্তে পাঠিয়েছে।
মৃতের বৌদি মমতাজ বিবি বলেন, “সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাড়ির লোকেরা বলল, ওঝার কাছে নিয়ে গেলেই সুস্থ হয়ে উঠবে। গোসাবায়ওঝার কাছে নিয়ে যাই। প্রথমে ভাল ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।” চিকিৎসকদের দাবি, ওঝা-গুনিনের কাছে গিয়ে সময় নষ্ট না করলে হয় তো প্রাণে বাঁচানোযেত সিরাজুলকে।
ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সাপে কাটার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য, এত প্রচার, এত সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণকরেও মানুষকে কুসংস্কারমুক্ত করা যাচ্ছে না।!” ক্যানিংয়ের একটিবিজ্ঞান সংস্থার সদস্য দেবাশিস দত্ত বলেন, “বার বার গ্রামে-গঞ্জেগিয়ে আমরা মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করছি। তবুও ঘটনা ঘটছে। প্রশাসনের উচিত, এই ধরনের ওঝা-গুনিনদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ করা।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)