Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ন’ মাসের টানা চিকিৎসায় মায়ের কোলে এল সন্তান

রূপালির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেন মহীতোষ। তিনি হাসপাতালের চিকিৎসক গোপাল পোদ্দারের সঙ্গে আলোচনা করেন।

 মেয়ে কোলে রূপালি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

মেয়ে কোলে রূপালি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০০:০৩
Share: Save:

ভ্রূণ বাঁচিয়ে অস্ত্রোপচার করে সন্তান প্রসব করানো হল এক তরুণীর। কাজটা খুব সহজ ছিল না বনগাঁ হাসপাতালের চিকিৎসকদের জন্য। প্রথমে লক্ষ্য ছিল, প্রসূতি ও তাঁর গর্ভস্থ ভ্রূণটিকে বাঁচানো। ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসকেরা গত বছর অক্টোবর মাসে অস্ত্রোপচার করেন। বাঁচানো গিয়েছিল ভ্রূণ। ৯ মাস ওই মহিলার চিকিৎসা করেন বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ মহীতোষ মণ্ডল। ৬ মে হাসপাতালে ওই মহিলা একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন। মঙ্গলবার সকালে মা-মেয়ে গিয়েছেন বাড়িতে।

হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘এই হাসপাতালের ক্ষেত্রে এটি একটি বিরল ঘটনা। চিকিৎসকেরা যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার করেছিলেন। মহিলা সুস্থ-স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করায় আমরা খুশি।’’

কেন চিকিৎসকেরা এটিকে বড় সাফল্য বলে মনে করছেন?

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে পেটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হন বছর একত্রিশের রূপালি ঢালি। দু’মাস ধরে ঋতুস্রাবও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। গাইঘাটার কুলঝুটি এলাকার রূপালি ২৩ সেপ্টেম্বর মহিলা শল্য বিভাগে ভর্তি হন। মহীতোষ তাঁর প্রেগন্যান্সি টেস্ট ও আলট্রাসনোগ্রাফি করান। দেখা যায়, ওই মহিলা দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আরও জানা যায়, মহিলার গর্ভে দু’টি ভ্রূণ রয়েছে। একটি জরায়ুর ভিতরে, অন্যটি বাইরে।

বিষয়টি বিরল। আরও নিশ্চিত হতে চিকিৎসক রূপালির পরিবারের সদস্যদের বলেন, ‘ট্রান্স ভ্যাজাইন্যাল সনোগ্রাফি’ পরীক্ষা করতে। হাসপাতালের বাইরে থেকে তাঁরা ওই পরীক্ষা করান। সেই রিপোর্টেও চিকিৎসকেরা একই জিনিস দেখতে পান।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে প্রসূতিকে কলকাতার হাসপাতালে ‘রেফার’ করাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ, জরায়ুর ভিতরে ও বাইরে ভ্রূণ থাকলে অস্ত্রোপচার করা খুবই ঝুঁকির। এমন ক্ষেত্রে ভ্রূণ বাঁচানোটাই যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে এর পরিকাঠামোরও অভাব আছে।

মহীতোষ বলেন, ‘‘জরায়ুর বাইরে থাকা ভ্রূণটি থেকে সন্তান হয় না। ববং সেটি ফেটে গিয়ে জরায়ুর মধ্যে যে ভ্রূণটি থাকে, তার ক্ষতি হতে পারে। এমনকী, মায়ের প্রাণহানিরও আশঙ্কাও থাকে। সে কারণে অস্ত্রোপচার করে জরায়ুর বাইরে থাকা ভ্রূণটিকে বাদ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।’’

রূপালির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেন মহীতোষ। তিনি হাসপাতালের চিকিৎসক গোপাল পোদ্দারের সঙ্গে আলোচনা করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর মহীতোষ অস্ত্রোপচার করেন। তখন দেখেন, রূপালির বাঁ দিকের ডিম্বাশয়ের মধ্যে একটি টিউমার আচে। সেটি আবার উল্টো দিকে ঘুরে গিয়েছে। সেখানে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে তা পচেও গিয়েছে। সেটিও বাদ দিতে হয়। জরায়ুর ভিতরে থাকা ভ্রূণটিও বাচাঁনো যায়।

কিন্তু ফের সমস্যা দেখা দেয়। জন্ডিসে আক্রান্ত হন রূপালি। ভ্রূণ বাঁচানোর জন্য চিকিৎসকদের নতুন লড়াই শুরু হয়। প্রসূতি বিভাগে রেখে সর্বক্ষণ রূপালিকে দেখভাল করা হতে থাকে। আপাতত তিনি সুস্থ। ৬ মে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

রূপালির কথায়, ‘‘চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় মা হতে পারলাম। সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women Pregnancy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE