Advertisement
E-Paper

সালিশি সভায় ডেকে নিয়ে মহিলার পায়ে শিকল বেঁধে মারধর! এ বার অভিযোগ কলকাতার নাকের ডগায়

যে মাতব্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর প্রাসাদোপম বাড়িতে দেখা মিলল শিকলের। রয়েছে শিকল বাঁধার খুঁটিও। কেন? প্রশ্ন করতেই জবাব এল, গরু-ঘোড়া বাঁধার জন্য।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪ ১৫:২৩
Allegation of assault and beating a lady in Sonarpur of South 24 Parganas

অভিযোগকারী মহিলার দাবি, তাঁর পায়ে শিকল বেঁধে ফেলে রেখা হয়েছিল। —নিজস্ব চিত্র।

সন্দেশখালির শাহজাহান থেকে শুরু করে চোপড়ার জেসিবি, একের পর এক বিতর্কে শিউরে উঠেছিল গোটা রাজ্য। এ বার একেবারে কলকাতার নাকের ডগায় সালিশি সভা বসিয়ে মহিলার উপর অত্যাচারের অভিযোগ। সোনারপুরে পারিবারিক বিবাদকে কেন্দ্র করে এক মহিলাকে সালিশিতে ডেকে অত্যাচার চালানো হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগকারী মহিলার দাবি, তাঁর পায়ে শিকল বেঁধে ফেলে রেখা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, মারধর ও গালিগালাজও করা হয়েছিল বলে অভিযোগ মহিলার।

জামালউদ্দিন সর্দার নামে গ্রামেরই এক মাতব্বরের বিরুদ্ধে সালিশি বসানোর অভিযোগ তুলছেন মহিলা। এই ব্যক্তি আবার তৃণমূল করেন বলে দাবি অভিযোগকারীর। মহিলার অভিযোগ, পারিবারিক বিবাদ মেটানোর জন্য তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল জামালের বাড়িতে। তিনি বলেন, “জামালের বাড়িতে ঢুকতেই সঙ্গে সঙ্গে গেট বন্ধ করে দেয়। তার পর আমার পা শিকল দিয়ে বেঁধে দেয়।” পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থাতেই সালিশি সভায় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মহিলাকে। কিন্তু মহিলার উত্তর শোনার আগেই তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে দাবি অভিযোগকারীর।

আতঙ্কের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে মহিলা জানান, তিনি এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তাঁর দু’বার দাঁত লেগে গিয়েছিল। তাঁর কথায়, “লাঠি-বাঁশ দিয়ে মারধর করেছে। চড় মেরেছে। মাথায় ঘুষি মেরেছে। স্বামী থামানোর চেষ্টা করলে তাঁকেও মারধর করা হয়েছে।”

শুধু এই একটি ঘটনা নয়, সোনারপুরের জামালউদ্দিন সর্দারের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে গ্রামবাসীদের। আজ ওই আক্রান্ত মহিলার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল। তখন এলাকার বাকি গ্রামবাসীরাও বিজেপি নেত্রীর কাছে নিজেদের অভিযোগ জানান। এলাকার অনেকের জমি জামাল জবরদখল করে নিয়েছেন বলে অগ্নিমিত্রার কাছে নালিশ জানান গ্রামবাসীরা।

অগ্নিমিত্রা বলেন, “সন্দেশখালি সারা পশ্চিমবঙ্গেই ছড়িয়ে আছে। সোনারপুরের এই এলাকার শেখ শাহজাহানের নাম জামাল সর্দার। তিনি সে ভাবে কিছুই করেন না, কিন্তু অট্টালিকা বানিয়ে ফেলেছেন। তাঁর বাড়িতে সালিশি সভা বসে।”

বিজেপি নেত্রী জানান এলাকার মহিলারা তাঁকে বলছেন, “সেই বাড়িতে জায়গায় জায়গায় শিকল বাঁধা রয়েছে।” রাজ্যের শাসক শিবিরকে একহাত নিয়ে অগ্নিমিত্রা বলেন, “তালিবানি অত্যাচার এখন তৃণমূলী অত্যাচারে রূপান্তরিত হয়েছে। জামাল সর্দারের উপর আশীর্বাদ রয়েছে তৃণমূল নেতাদের।”

তবে সোনারপুরের ওই মাতব্বরের সঙ্গে তৃণমূলের যোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন এলাকার শাসক বিধায়ক লাভলি মৈত্র। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, জামাল সর্দার তৃণমূলের কেউ নন। তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।

সোনারপুরের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিএসপি ফয়জ়ল বিন আহমেদ জানিয়েছেন, পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখছে।

যদিও জামালউদ্দিন এই জাতীয় অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, এ জাতীয় অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। জামালের যুক্তি, “যিনি অভিযোগ করছেন, তিনি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত। এ নিয়েই পরিবারের সঙ্গে ওই মহিলার বিবাদ। সেটা মেটাতেই এখানে ডেকেছিলাম। ওঁর নিজের ছেলে এখানে উপস্থিত ছিল। তাঁর পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে জিজ্ঞেস করলেই উত্তর পাওয়া যাবে। তাঁকে মারধরের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আমি তাঁর পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছিলাম, সেটার কোনও প্রমাণ দেখাক, তা হলে মেনে নেব।”

তবে সংবাদমাধ্যম যখন জামালউদ্দিনের প্রাসাদোপম বাড়িতে পৌঁছয়, তখন সেই বাড়িতে মোটা শিকল পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। সেই শিকল বাঁধার জন্য মেঝেতে হুকও পোঁতা ছিল। কেন সেই শিকল, তা নিয়ে প্রশ্ন শুনতেই জামালের জবাব, “বাড়িতে গরু আছে, ঘোড়া আছে। সেই জন্যই শিকল রাখা।”

Women Assault Sonarpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy