আরাধনা: কূলেশ্বরীর কালী প্রতিমা।—নিজস্ব চিত্র
এক সময়ে কূলেশ্বরী কালী প্রতিমার পুজোর আগে কামান দাগতেন টাকি পূর্বের রায়চৌধুরী জমিদারের পরিবার। বলি দেওয়া হত একশোর উপর পাঁঠা ও মহিষ। বর্তমানে মহিষ বলি বন্ধ হয়ে গেলেও পাঁঠা বলির প্রচলন আছে।
হাসনাবাদের টাকিতে ৪০০ বছরের বেশি পুরনো কূলেশ্বরী কালীবাড়ির পুজো দেখতে আজও ভিড় করেন মানুষ। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী এখানে বেশ জাগ্রত। পুজোর দিনে কলকাতা-বসিরহাট, টাকি, হাসনাবাদ তো আছেই সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও ভক্তরা আসেন।
কথিত আছে, বহু বছর আগে ইছামতীতে জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন এক জেলে। তাঁর জালে উঠে আসে সুন্দর এক নকশা করা ঘট।
কথাটা টাকির জমিদার বড় রায়চৌধুরীর কানে পৌঁছয়। সেই রাতে স্বপ্ন দেখেন জমিদার গিন্নি। চালা ঘর তৈরি করে ঘটটি প্রতিষ্ঠা করার আদেশ দেন দেবী। সেখানেই খড়-বিচালি, গোলপাতা দিয়ে মাটির দেওয়ালের মন্দির করে কালীপুজোর অয়োজন করা হয়। নদীর কূল থেকে ঘটটি পাওয়া যাওয়ায় মন্দিরের নাম হয়েছিল কূলেশ্বরী কালী বাড়ি।
তবে মন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনেকের অনেক মত রয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় প্রবীণদের দাবি, কূলেশ্বরী কালী মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল রাজা প্রতাপাদিত্যের আমলে। এখানে কার্তিকী অমাবস্যার দিন কালী পুজোয় প্রচুর মানুষ আসেন। ওই মন্দিরের পুরোহিত সুভাষ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা এখানে প্রায় বারো পুরুষ ধরে পুজো করছি।’’
তিনি জানান, কথিত আছে কূলেশ্বরী কালীর আদি মন্দির হাসনাবাদের রজিপুরের কালীতলায় ছিল। অগ্রহায়ণ মাসে এলাকার মেয়ে-বৌরা নানারকম কামনা করে উপবাস পালন করেন। এই ব্রত পালনকে ‘কূলের ঠাকুর বাড়ি পালনি’ বলা হয়। এ ছাড়াও নিত্য পুজো ও অন্ন ভোগ দেওয়া হয়। তা ছাড়াও বছরের বিশেষ বিশেষ তিথি উপলক্ষে পুজো হয় ওই মন্দিরে।
১৮৬৯ সাল নাগাদ টাকির বেশির ভাগ জায়গা ছিল বন-জঙ্গলে ভরা। রাজা প্রতাপাদিত্যের বংশধর কৃষ্ণদাস রায়চৌধুরী টাকিতে বসতি স্থাপন করেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে টাকি কূলেশ্বরী কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠা হয়। এখানে মায়ের ভোগে পোলাও, খিচুড়ি, সবজি, মাছ ও পাঁঠার ঝোল রান্না করা হয়। পুজোর দিনগুলিতে দেবী মূর্তিকে প্রচুর অলঙ্কার দিয়ে সাজানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy