ছট পুজোর অর্ঘ্য নিবেদন। — ফাইল চিত্র।
অতিমারিতে গত দু’বছর বিধিনিষেধ থাকলেও এ বার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ছটপুজোয় তেমন কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। সরকারি ভাবে আয়োজনেও ত্রুটি ছিল না। তবু পুরনো জাঁকজমক থেকে দূরেই রইল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল। এখানে বিশ্বকর্মা ও ছটপুজো বহু বছর ধরেই চার দিনব্যাপী উৎসব। ছটে বরাহনগর থেকে বীজপুর পর্যন্ত শতাধিক ঘাটে শেষ রাত থেকে কাতারে কাতারে ভিড় জমত, ঠেকুয়া বিলি হত। কিন্তু এ বার ছটপুজো হলেও উধাও সেই জাঁকজমক আর সেই ভিড়।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল ধুঁকে ধুঁকে চললেও বাপ-ঠাকুর্দার আমলে বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা শ্রমিকেরা এখানেই মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। কিন্তু অতিমারিতে তাঁদের অনেকেই কাজ হারিয়েছেন, অনেকে পেশা বদলেছেন। টালির চালের ভাড়া বাড়ি থেকে কারখানার জমিতে একফালি ঘরে আশ্রয় নেওয়া এই অবাঙালি পরিবারগুলির বাঙালির জীবনযাপনে মিশে যেতে সময় লাগেনি। কিন্তু কাজ হারিয়ে তাঁদের অনেকেই গত আড়াই বছরে কে কোথায় ছিটকে গিয়েছেন, জানেন না পড়শিরা। গত কয়েক মাসে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে একের পর এক চটকল বন্ধ হওয়ায়, আগুনে গুদামের কাঁচা পাট পুড়ে উৎপাদন থমকে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে গিয়েছেন সেখানে শ্রমিকের কাজ করতে আসা অনেকেই। শুধু টিটাগড়–খড়দহ এলাকাতেই পাঁচটির মধ্যে দু’টি বড় চটকল (কেনিসন ও খড়দহ) বন্ধ বহু দিন। কেলভিন, লুমটেক্স ও ভিক্টোরিয়া কোনও রকমে টিকে আছে। একই অবস্থা ভাটপাড়া, জগদ্দল, নৈহাটি, কামারহাটিতেও।
টিটাগড়ের প্রাক্তন পুর প্রধান এবং বর্তমানে এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘শিল্পাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থাটাই বদলে দিয়েছে করোনা। গত দু’বছর করোনার কারণে সে ভাবে ছটপুজো হয়নি বলে পরিস্থিতিটা বোঝা যায়নি। ধুমধাম করে পুজো করতে গেলেও তো টাকা লাগে। দেনায় জর্জরিত বহু পরিবার, দু’বেলা খাওয়ার সংস্থানই হচ্ছে না, জাঁকজমক করে পুজো করবে কী করে! বাজারে তোলাবাজি বেড়েছে, ফলে ছটের আগে যে পরিমাণ সামগ্রী বিক্রি করতেন দোকানিরা, এ বার সেটাও ভয়ে করতে পারেননি।’’
শনি ও রবিবার ব্যারাকপুরের ঘাটগুলিতে গিয়ে দেখা গেল, ভিড় থাকলেও পুজোর সামগ্রী গঙ্গায় ফেলা হচ্ছে না। ঘাটের পাশে আবর্জনা জড়ো করার ব্যবস্থা করেছে পুরসভা, রয়েছে পুলিশি নজরদারিও। ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক সৌরভ বারিক বলেন, ‘‘ছটপুজো নির্বিঘ্নে কেটেছে। ধুমধাম করে কোথাও পুজো হয়নি, তার একটা বড় কারণ আর্থ-সামাজিক অবস্থা। তা ছাড়া দুর্গাপুজোর আগে থেকেই প্লাস্টিক রোধে প্রশাসন সক্রিয় ছিল। মূলত প্লাস্টিকে ভরেই পুজোর সামগ্রী জলে ফেলা হয়। এ বার সেটা হতে দেওয়া হয়নি।’’ শনিবার সন্ধ্যায় অবশ্য ফাটানো হয়েছে বাজি। তবে ডিজে বন্ধে পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া এলাকা পরিদর্শন করেছেন দিনভর। তিনি বলেন, ‘‘এ বার ছটে কোথাও অভিযোগ হয়নি। মানুষ সচেতন হয়েছেন। তবে ভিড় কম ছিল। মানুষের আর্থিক সঙ্গতি কমে যাওয়া অন্যতম কারণ হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy