বিটি রোডের ধারের দৃশ্য। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
রাজপথের ধারে অঘোষিত ভাগাড়। দুর্গন্ধে এমনিতেই পথচলা দায়। সেই সঙ্গে একটু বৃষ্টিতেই জলে-জঞ্জালে নাকানিচোবানি দশা। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের তিন প্রধান রাস্তা বিটি রোড, ঘোষপাড়া রোড এবং কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের চেনা ছবি এখন এটাই। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধারে আদর্শনগরের কাছে ভাগাড়টির জন্য ওই অংশটুকুর চেহারাও ততটাই বেহাল। পথ জোড়া জঞ্জালে চাকা পিছলে বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। আগামী ২৮ অগস্ট উত্তর ২৪ পরগনাকে নির্মল জেলা ঘোষণা করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে এই জঞ্জাল সাফাইয়ে নজর দিতে পুরসভাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
বি টি রোডের বেশ কিছু জায়গায় খোলা রাস্তায় পড়ে থাকা জঞ্জাল মাড়িয়েই যানবাহন চলছে প্রতিদিন। তার মধ্যেই মিশছে রাস্তার ধারে নর্দমা সাফ করে তোলা ময়লাও। জমে থাকা জঞ্জালে বৃষ্টির জল পড়ে এমনিতেই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল যথেষ্ট। পাঁকে-জলে মিশে সেই দুর্গন্ধ আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। ব্যারাকপুর থেকে কলকাতার দিকে এগোতেই খড়দহ ইলেক্ট্রোস্টিল বরাবর রাস্তার ধারে ফেলা আবর্জনা এখন বৃষ্টি আর এলোমেলো হাওয়ায় একেবারে রাস্তার উপরে। ইদানীং একটু ভারী বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জল জমছে। সেই জলে ভাসছে উপচানো আবর্জনা। আরও একটু এগোলে রাজা রোডের মোড়। পানিহাটি পুরসভার জঞ্জালে বছরভর যেন নরককুণ্ড হয়ে থাকে এই মোড়। এ বারের বৃষ্টিতে আর কথাই নেই। সোদপুর চৌমাথা ছাড়ানোর দু’হাত অন্তর একই দৃশ্য।
বি টি রোডের এই যন্ত্রণাদায়ক চেহারার সঙ্গে অবশ্য কিছুটা ফারাক আছে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে বা বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের। সপ্তাহখানেক আগে এই জঞ্জালের দৌলতেই সস্ত্রীক মোটরবাইক-দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন কাঁকিনাড়ার বাসিন্দা তারক দত্ত। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে মুড়াগাছার কাছে আবর্জনার স্তূপ থেকে ময়লা প্লাস্টিক উড়ে এসে তারকবাবুর মুখে জড়িয়ে গিয়েছিল। তাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইক নিয়ে রাস্তার ধারে উল্টে পড়েন তিনি। তারকবাবুর কথায়, ‘‘এক্সপ্রেসওয়েতে হাওয়ার বেগ অনেক বেশি। হালকা বৃষ্টির সঙ্গে এলোমেলো হাওয়া দিলে আবর্জনার স্তূপে থাকা প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস উড়তে থাকে। যারা এগুলো ফেলে, তারা কেন পুড়িয়ে দেওয়া বা নষ্ট করার ব্যবস্থা করে না জানতে চাই। কিন্তু বলবে কে?’’
বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সমস্যাটা আবার অন্য রকম। আদর্শনগরের কাছে ভাগাড়টিতে বর্জ্য ফেলে পাঁচটি পুরসভা। আশপাশে বাড়ি হওয়ার পরে দূষণের প্রতিবাদ, আপত্তি, আন্দোলনও শুরু হয়েছে সম্প্রতি। পানিহাটিতেও একই কারণে পুরসভার নিজস্ব ভাগাড় থাকা সত্ত্বেও সেখানে বর্জ্য ফেলতে বাধা দেন এলাকাবাসীরা। দূষণ ছড়ানোর প্রতিবাদে ‘গ্রিন নাগরিক’ নামে সংগঠন গড়ে তুলে আদর্শনগরের বাসিন্দারা অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় পুরসভা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে। সংগঠনের তরফে নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘পরিকল্পনাহীন ভাবে রাস্তার ধারে ভাগাড় তৈরি হচ্ছে। তার পরে যখন সেখানে বসতি গড়ে উঠছে, প্রয়োজনীয়ও ছাড়পত্রও দিয়ে দিচ্ছে পুরসভা ও সরকারি দফতরগুলো। দূষণের কথা এক বারও ভাবছে না।’’ পুরসভার জঞ্জালবাহী গাড়িগুলিও ঠিকমতো ঢাকা না থাকায় রাস্তায় আবর্জনা পড়তে পড়তে যায়। এক্সপ্রেসওয়ে বা রাজ্য সড়কে মোটরবাইক ও গাড়ির গতি অন্য রাস্তার তুলনায় বেশি থাকায় আবর্জনায় চাকা পিছলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বেশি। ব্যারাকপুরের অন্য প্রান্তে বীজপুর, নোয়াপাড়াতেও রাস্তার ধারে সার দিয়ে জঞ্জালের স্তূপ।
সম্প্রতি সরেজমিন সমস্ত এলাকা ঘুরে দেখে পুরসভাগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে জেলাকে নির্মল জেলা হিসাবে ঘোষণা করছেন, সেখানকার রাস্তায় এ ভাবে জঞ্জাল পড়ে থাকা চলবে না। পুরসভাগুলিকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিটি রোড বা অন্য রাস্তার ধারে ফেলা জঞ্জাল অবিলম্বে সরিয়ে নিতেও বলা হয়েছে। এ ভাবে যত্রতত্র আর জঞ্জাল ফেলা যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy