বাসবী চক্রবর্তী।
কেউ ঘর-সংসার, কেউ বা নিজের নাচ-গানের স্কুল সামলাতেন। এত দিন রাজনীতির জগতটাই ওঁদের কাছে ছিল একেবারই অজানা। কেউ স্বামী বা দলের লোকজনের কথায়, কেউ আবার প্রতিবেশীদের উৎসাহে জীবনে প্রথম ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছেন। রবিবার শপথও নিয়েছেন জয়নগর-মজিলপুর পুরসভার এই সব কাউন্সিলরেরা। সামনের পাঁচ বছরে কী কাজ করবেন, তা নিয়ে এখনই ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছেন সকলে।
এই পুরসভায় নতুন মুখের সংখ্যা এ বার পাঁচ জন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী, ৮ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের ২ জন প্রার্থী। ৬ নম্বরে তৃণমূলের এক জন নতুন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। ১৪ নম্বরে এসইউসি-র এক জন নতুন প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। প্রত্যেকেই ভোটের প্রচারে বেরিয়ে জেনেছেন, ওয়ার্ডের সমস্যাগুলি ঠিক কেমন। নতুন কাউন্সিলরদের কাছে উন্নয়নের কাজে অনেক বেশি আশা করে আছেন নাগরিকেরাও।
জয়নগর-মজিলপুর পুরসভায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডটি গতবার তৃণমূলের দখলে ছিল। এ বারেও ওই আসনটি ধরে রাখতে জয়নগরের টাউন তৃণমূলের সভাপতি প্রবীর চক্রবর্তীর স্ত্রী সুজাতাকে প্রার্থী করেছিল দল। তাঁকে মাত্র ৪৯ ভোটে হারিয়ে জীবনের প্রথম নিবার্চনে দাঁড়িয়ে জয় পেয়েছেন নির্দল প্রার্থী বাসবী চক্রবর্তী। পরিবারের লোকজন কংগ্রেসকে সমর্থন করলেও তিনি কখনও রাজনীতির ময়দানে পা দেননি। বছর চুয়ান্ন বয়সের বাসবীদেবী রবীন্দ্রভারতী থেকে সঙ্গীতে অনার্স এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতে এমএ পাশ করে নিজের বাড়িতেই নাচ-গানের স্কুল চালান। সঙ্গীতশিল্পী হেমন্ত মুখ্যোপাধায়ের সম্পর্কে আত্মীয়া তিনি। সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গণনাট্যের সঙ্গে তিনি অল্প বয়স থেকেই যুক্ত থেকেছেন বলে জানালেন। ভোটে দাঁড়ানোর কোনও ইচ্ছেই তাঁর ছিল না বলে জানালেন। প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন বার বার বলায় মনে হয়েছে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হলে একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার। তাই শেষমেশ রাজি হয়ে যান।
রাজনীতি নিয়ে এদ্দিন মাথা না ঘামালেও এ বার উপ পুরপ্রধান পদের দাবিদার তিনিই।
বাসবীদেবীর কথায়, ‘‘আমার নিজের স্কুল চালাতেই হিমসিম খাচ্ছি। আবার পদে বসলে কী ভাবে সামলাব জানি না। তবে আমার সিদ্ধান্তের উপরে সব নির্ভর করছে না। যাঁরা আমাকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছিলেন, তাঁদের একটা মতামত রয়েছে। তার উপরে গুরুত্ব দিতে হবে।’’ বাসবী জানালেন, আমি কাউন্সিলর হিসাবে শপথ নেওয়ার আগেই একটি নলকূপ সারানো ও নিকাশি নালা সংস্কার করেছি।
৬ নম্বরে দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতায় থাকা এসইউসি প্রার্থী সুদর্শন হালদারকে ১২ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম তৃণমূলের টিকিটে জিতেছেন ইলিয়াস পৈলান।
বছর পঁয়ষট্টির উচ্চমাধ্যমিক পাশ ইলিয়াস ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। ভোটে জিতে তাঁর প্রধান লক্ষ্য, হাসানপুর থেকে জয়নগর-মজিলপুর স্টেশন ও তিলি পাড়া বাজার পর্যন্ত একটা রাস্তা তৈরি করা। সেচের জন্য খাল কাটার দিকেও তিনি নজর দেবেন বলে জানালেন।
৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিগত পুরসভায় এসইউসির উপ পুরপ্রধান প্রবীর বৈদ্যকে ১৪৩ ভোটে হারিয়ে এ বারে জীবনে প্রথম কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছেন দেবাশিস পাল। বছর চল্লিশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতক দেবাশিসবাবু জানালেন, ভোটের প্রচারে বেরিয়ে এলাকায় পানীয় জলের সমস্যার কথা জেনেছেন। সেই সমস্যা মেটানোর দিকে নজর দেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি।
১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের প্রার্থী কল্পনা দাস মণ্ডলকে ৮৩ ভোটে হারিয়ে জীবনে প্রথম কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছেন মিঠু দাসপুরকাইত। বছর চৌত্রিশের এমএ পাস ওই মহিলার এই প্রথম রাজনীতিতে হাতে খড়ি। এলাকায় ছোটখাট কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন শপথ নেওয়ার আগেই। জানালেন, মানুষ যখন আমাকে ভালবেসে জিতিয়েছেন, আমিও সাধ্য মতো তাঁদের আপদে-বিপদে পাশে থাকতে চাই।’’
১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের প্রার্থী বিশ্বনাথ হালদারকে ১২২ ভোটে হারিয়ে প্রথম বারের জন্য জয়ী হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী পাঁচুগোপাল মিস্ত্রি। তিনি জানালেন, এলাকার নিকাশি সংস্কার ও পানীয় জলের সরবরাহের দিকে গুরুত্ব দেবেন। কিছু পুকুর সংস্কারের কথাও ভাবছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy