Advertisement
E-Paper

বিরোধীদের হাতে শুধু পেনসিলই

বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, ‘‘ভোটের দিন বিজেপি আমাদের কর্মীদের পিটিয়ে খুন করেছে। তারপরেও এই ফলাফল। বিরোধীদের সঙ্গে এ বার রাস্তায় রাস্তায়, পাড়ায় পাড়ায় লড়াই হবে। ওদের পাঁকে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।’’

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৮ ০২:৪৬
মাতোয়ারা: হাবড়ায় তৃণমূলের উচ্ছ্বাস। ছবি: সুজিত দুয়ারি

মাতোয়ারা: হাবড়ায় তৃণমূলের উচ্ছ্বাস। ছবি: সুজিত দুয়ারি

তিন তিনটি খুন, আতঙ্ক, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ— সব মিলিয়ে এ বার নজরে ছিল হাবড়া। ফল প্রকাশের পরে দেখা গিয়েছে, হাবড়া ১ ব্লকে কার্যত ধুয়ে মুছে গিয়েছে বিরোধীরা।

তৃণমূলের খাসতালুক হিসাবে পরিচিতি থাকলেও হাবড়া এলাকায় বিরোধীদের আধিপত্যও কম ছিল না। এই ফলাফল তাই তৃণমূল শিবিরের কাছে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। বিজেপির দিকে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছে তারা। তৃণমূলের দাবি, এ বার ভোটে হাবড়ায় একজন প্রার্থী-সহ তিনজনকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। বিজেপি ওই খুনের ঘটনায় পিছনে আছে।

বিজেপি খুনের কথা স্বীকার করেনি। জেলা সহ সভাপতি তথা হাবড়ার বাসিন্দা বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘ভোটের দিন তৃণমূল বহিরাগতদের এনে বুথে বুতে ছাপ্পা দিচ্ছিল। এলাকার মানুষের রোষেই ওদের মৃত্যু হয়েছে। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’

বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, ‘‘ভোটের দিন বিজেপি আমাদের কর্মীদের পিটিয়ে খুন করেছে। তারপরেও এই ফলাফল। বিরোধীদের সঙ্গে এ বার রাস্তায় রাস্তায়, পাড়ায় পাড়ায় লড়াই হবে। ওদের পাঁকে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।’’

বিরোধীরা অবশ্য এই ফলাফলকে মানুষের রায়ের প্রকাশ বলে মনে করছেন না। তাঁদের দাবি, ঠিকঠাক ভোট হলে ফল অন্য রকম হত।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবড়া ১ ব্লকের ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়লাভ করেছে তৃণমূল। হাবড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির ২১টি আসনের সব ক’টি পেয়েছে তারা। জেলা পরিষদের তিনটি আসনেও জিতেছেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন সংখ্যা ১৬৩। একটি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। বাকিগুলির মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ১৫৩টি আসন। নির্দল ২টি এবং বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৭টি আসন। বামেরা কোনও আসন পায়নি। তৃণমূলের দাবি, জয়ী দুই নির্দল প্রার্থীও তাদের সমর্থিত। বেড়গুম ১, মছলন্দপুর ১, মছলন্দপুর ২, পৃথিবা— এই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে বিরোধীরা একটি করে আসন পেয়েছে। কুমড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৯টি আসনেই শাসক দল জয়ী হয়েছে।

অথচ, ২০১৩ সালের ভোটে সিপিএমের হাতে ছিল ২টি পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত সমিতিতেও ৪টি আসনে জয়ী হয়েছিল তারা।

কিন্তু এ বার কেন এমন ফল?

বিরোধীদের দাবি, ভোট ও গণনার দিন সন্ত্রাসের জেরেই এই ফল। মনোনয়ন জমা দিতে পারলেও ভোটের দিন সকাল থেকে বুথে বুথে শাসক দলের বহিরাগতেরা চড়াও হয়ে অবাধে ছাপ্পা দিয়েছে। এমনকী, বৃহস্পতিবার ভোট গণনার সময়ে গণনা কেন্দ্রের মধ্যেই শাসক দলের লোকজন হামলা চালিয়ে বিরোধী এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়েছে বলে অভিযোগ।

সিপিএম নেত্রী তথা এ বারের জেলা পরিষদ প্রার্থী স্বপ্না ঘোষ বলেন, ‘‘গণনা কেন্দ্রে ওই হামলার মধ্যে রুখে দাঁড়ানোর মতো শক্তি আমাদের ছিল না। এই ফলাফলে মানুষের রায়ের প্রতিফলন নয়।’’

বৃহস্পতিবার গণনার সময়ে মারধরের অভিযোগে পথ অবরোধ করে বিজেপি। দলের নেতা বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘গণনা কেন্দ্রে মারধর করে আমাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার প্রতিবাদে আমরা রাজ্যপাল ও হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছি।’’

তবে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শুধু শাসকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকা যায় না। তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো সাংগঠনিক শক্তি এখানে বিরোধীদের তৈরি হয়নি। হাবড়া ১ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি তথা এ বারের পঞ্চায়েত সমিতির জয়ী প্রার্থী অজিত সাহা বলেন, ‘‘প্রথমে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ভোটের গণনা চলছিল। সেখানে বিরোধীরা এতটাই পিছিয়ে ছিল যে তারা নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে ফিরে যায়। গণনা কেন্দ্রে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। বহিরাগতদের ঢোকা তো দূরের কথা, আশেপাশে ঘেঁষতে পর্যন্ত দেয়নি পুলিশ।’’

West Bengal Panchayat Elections 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy