ঠাকুরবাড়িতে মারপিটের ঘটনায় ১৩ জনের নামে অভিযোগ তুলেছেন মমতাবালা ঠাকুরেরা। দাবি করা হচ্ছে, এই ১৩ জনই শান্তনু ঠাকুরের অনুগামী। ওই অভিযুক্তদের মধ্যে এক জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম বরুণ বিশ্বাস। বাগদা থানা এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছে গাইঘাটা থানার পুলিশ। তবে বাকি অভিযুক্তদেরও গ্রেফতারির দাবি তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির অন্যতম মুখ মমতাবালা।
মমতাবালা বলেন, “প্রশাসন প্রচণ্ড ভাল কাজ করেছে। যে ঘটনা ঘটেছে, তা ন্যক্কারজনক। যে ১৩ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, আমরা চাই সেই ১৩ জনই যেন গ্রেফতার হন।” অভিযুক্তেরা সকলেই বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনুর অনুগামী বলেই দাবি তৃণমূল সাংসদের। মমতাবালার কথায়, “শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বেই এগুলি হল। তাঁর বাড়িতে হয়েছে যখন সেই তো এদের ডেকে নিয়ে এসেছেন। না হলে তাঁরা আসবেন কেন!” তৃণমূল সাংসদ আরও বলেন, “ঠাকুরবাড়িতে আগেও বহু গোলমাল হয়েছে, কিন্তু এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি।”
অভিযুক্তদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে যাতে পদক্ষেপ করা হয়, সেই দাবি তোলেন মমতাবালা। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জানান, তাঁরা ইতিমধ্যে ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজ দেখতে শুরু করেছেন। কারা মারধর করেছেন, তা ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সেইমতো আগামী দিনে আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হতে পারে — সেই সম্ভাবনার কথাও জানান মমতাবালা।
অশান্তির সূত্রপাত ঠাকুরবাড়ির সদস্য শান্তনুর এক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। দিন দুয়েক আগে বাগদার এক সভায় বক্তৃতার সময় শান্তনু সিএএ এবং এসআইআর নিয়ে সওয়াল করেন। তবে বক্তৃতার মাঝেই তিনি বলেন, ‘‘এসআইআর আমাদের কোনও সমস্যা নয়। কেন্দ্রীয় সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য আমাদের যদি এসআইআরের সমস্যা পোহাতে হয়, তা পোহাব।’’ তার পরে আরও এক ধাপ এগিয়ে শান্তনু বলেছিলেন, ‘‘৫০ লক্ষ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি মুসলমান, পাকিস্তানি মুসলমানকে বাদ দিতে যদি আমার সম্প্রদায়ের এক লক্ষ মানুষকে ভোটদান থেকে বিরত থাকতে হয় তাতে কোনটা লাভ?’’
আরও পড়ুন:
রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি, পাকিস্তানি মুসলমানদের নাম বাদ দিতে গিয়ে যদি এক লক্ষ মতুয়াকে ভোটদান থেকে বিরত থাকতে হয়, সেটা ‘লাভজনক’ মনে করেছিলেন শান্তনু। এটা নিয়ে মতুয়াদের মধ্যেই ধন্দ, ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। শুধু তা-ই নয়, শান্তনুর মন্তব্যে বিতর্ক দেখা দেয়। শান্তনুর মন্তব্যকে হাতিয়ার করে আসরে নামে তৃণমূল। ঠাকুরবাড়ির আর এক সদস্য মমতাবালা বুধবার শান্তনুর বাড়ি ঘেরাও অভিযানের ডাক দেন।
পূর্বপরিকল্পিত কর্মসূচিমতোই বুধবার মিছিল করে মমতাবালার অনুগামীরা ঠাকুরনগরে শান্তনুর বাড়ির সামনে যান। মিছিল শান্তনুর বাড়ির কাছে পৌঁছোলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ, মিছিলের উপর চড়াও হন শান্তনুর অনুগামীরা। কেড়ে নেওয়া হয় ব্যানার। মারধরের অভিযোগও তুলেছেন মমতাবালার অনুগামী মতুয়ারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অনুগামীদের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, শান্তনুর বাড়িতে এসে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছেন কয়েক জন। শান্তনুর অভিযোগ, তাঁর কথার ভুল ব্যাখ্যা করছেন মমতাবালা।