Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Kali Puja

বন্ধ শাটারের ভিতরে চলছে বাজির বিকিকিনি

বাধা দোকান বা কারখানাগুলিতে গিয়ে খোঁজ করলেই মিলছে চরকা, ফুলঝুড়ি, রংমশাল, তুবড়ি। এমনকী অমিল নয় শব্দবাজিও।

অর্ধেক শাটার নামিয়েই চলছে বাজি বিক্রি। চম্পাহাটির হারালে। ইনসেটে, লুকিয়ে বিকোচ্ছে আতশবাজি। বনগাঁয়। 
ছবি: সমীরণ দাস ও নির্মাল্য প্রামাণিক

অর্ধেক শাটার নামিয়েই চলছে বাজি বিক্রি। চম্পাহাটির হারালে। ইনসেটে, লুকিয়ে বিকোচ্ছে আতশবাজি। বনগাঁয়। ছবি: সমীরণ দাস ও নির্মাল্য প্রামাণিক

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২০ ০৬:১৬
Share: Save:

বেশির ভাগ দোকানের ঝাঁপ পুরোপুরি ফেলা। বাইরে থেকে দেখলে বন্ধ বলেই মনে হবে। তবে কাছে গেলেই পিছন থেকে বেরিয়ে আসছেন বিক্রেতা। ক্রেতাকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন ভিতরে। তারপর চলছে বিকিকিনি। অনেকেই আবার অর্ধেক শাটার তুলে দোকান চালু রেখেছেন। বাজি পোড়ানো নিয়ে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও, বাজি বিক্রি যে বন্ধ হয়নি তা বোঝা গেল রবিবার চম্পাহাটির হারালের বাজি বাজারে গিয়ে।

অন্যান্য বছর কালীপুজোর আগে শেষ রবিবারে কার্যত মেলার চেহারা নেয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম বড় এই বাজি বাজার। হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন বাজি কিনতে। কিন্তু এ বার হাইকোর্টের রায়ের পরে বাজি বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। ফলে সেই চেনা ভিড় আর নেই। কালীপুজো উপলক্ষে হারালে প্রচুর অস্থায়ী বাজির দোকান বসে এই সময়। এ বার তার কিছুই বসেনি। তবে বাজি কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে না ক্রেতাদের। বাধা দোকান বা কারখানাগুলিতে গিয়ে খোঁজ করলেই মিলছে চরকা, ফুলঝুড়ি, রংমশাল, তুবড়ি। এমনকী অমিল নয় শব্দবাজিও।

এক বাজি বিক্রেতার কথায়, “আমাদের কথাটা কেউ ভাবছে না। হাইকোর্টের রায়ের অনেক আগেই দোকান ভর্তি বাজি তুলে রেখেছি। সেগুলোর কী হবে! অন্যান্যবার যা ক্রেতা আসে, এ বার তার এক শতাংশও নেই। পুলিশও দোকান বন্ধ রাখতে বলেছে। দু-একজন এসে খোঁজ করলে, বাধ্য হয়ে ভিতরে নিয়ে গিয়ে দিয়ে দিচ্ছি।”

বাজি নিয়ে পুলিশি তৎপরতা অবশ্য শুরু হয়েছে রায় আসার আগে থেকেই। দিন কয়েক আগেই বারুইপুর পুলিশ জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত হয়। শনিবার রাতে ভাঙড়ের চন্দনেশ্বর বাজার থেকে প্রায় ১০ হাজার প্যাকেট রং মশাল, আতশবাজি, চকলেট বোমা-সহ বিভিন্ন ধরনের বাজি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। চন্দনেশ্বর বাজারে স্থানীয় কয়েকজন যুবক বাজিগুলি বিক্রি করছিলেন। পুলিশ দেখে বাজি ফেলে পালায় তারা। অনেক বাজারেই চোরাগোপ্তা বাজি বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ। তবে অন্যান্য বারের মতো প্রকাশ্যে তেমন বাজি বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে না।

বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে বাজি প্রস্তুতকারক এবং বাজি বিক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজি বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। বাজি বিক্রি বন্ধ করতে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি অভিযান চালানো হচ্ছে। গাড়ি চেকিং করা হচ্ছে। কোথাও যাতে বাজি বিক্রি ও ফাটানো না হয় তার জন্য সাদা পোশাকের পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছে। ধরপাকড়ও চলছে। মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।”

উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া-সহ আশেপাশের কয়েকটি এলাকায় প্রচুর বাজি বিক্রি হয়। দুর্গা পুজোর কয়েকদিন আগে থেকে ভাই ফোঁটা পর্যন্ত ব্যবসা চলে। তবে আদালতের রায়ের পর এ বার সমস্যায় পড়েছেন বিক্রেতারা। লক্ষ লক্ষ টাকার বাজি তুলেও আদালতের নির্দেশে তা কার্যত গুদামে বন্দি করে রাখতে হচ্ছে। অনেকেই এখন ফানুস, মোমবাতি, হরেকরকম প্রদীপ ,বেলুন, স্যানিটাইজ়ার, মাস্ক বিক্রি করা শুরু করেছেন। তবে শহরের দোকানগুলিতে প্রকাশ্যে বাজি বিক্রি না হলেও, চোরাগোপ্তা কোথাও কোথাও বাজি বিক্রি চলছে বলে জানান ক্রেতারা। গত কয়েকদিন ধরেই শব্দ বাজির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। অশোকনগর, হাবড়া ও গোবরডাঙা থানায় শব্দবাজি-সহ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তবে আদালতের নির্দেশের পর নতুন করে পুলিশকে অভিযানে নামতে দেখা যায়নি। বসিরহাটের নতুন এবং পুরাতন বাজারেও প্রচুর বাজি বিক্রি হয়। তবে আদালতের রায়ের পর বাজি বিক্রি বন্ধ। বিক্রেতারা জানান, অনেকেই ধার করে বাজি মজুত করেছিলেন। বিক্রি বন্ধ হওয়ায় সমস্যায় পড়লেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kali Puja Crackers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE