Advertisement
১৬ জুন ২০২৪

চৌধুরী পরিবারের পুজোয় ঘুরে বেড়ায় জনশ্রুতি

মহাষ্টমীর সকালে নির্দিষ্ট সময়ে মৎস্যভোগ রান্না হয়নি। তাই প্রতিমার সামনে গোটা মাছ রেখে কান্নাকাটি করেছিলেন জমিদার গিন্নি। শোনা যায়, বিসর্জনের রাতে প্রতিমার উপরে মাছ উঠে পড়েছিল। বাদুড়িয়ার চৌধুরী জমিদার বাড়িতে কান পাতলে এরকম অনেক ঘটনাই শোনা যায়।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৩৩
Share: Save:

মহাষ্টমীর সকালে নির্দিষ্ট সময়ে মৎস্যভোগ রান্না হয়নি। তাই প্রতিমার সামনে গোটা মাছ রেখে কান্নাকাটি করেছিলেন জমিদার গিন্নি। শোনা যায়, বিসর্জনের রাতে প্রতিমার উপরে মাছ উঠে পড়েছিল। বাদুড়িয়ার চৌধুরী জমিদার বাড়িতে কান পাতলে এরকম অনেক ঘটনাই শোনা যায়।

চৌধুরী পরিবারের সদস্যেরা জানান, কলকাতার বেহালার জমিদার সাবর্ণ চৌধুরীর পরিবারের বংশধর রাধাবল্লব চৌধুরী বাদুড়িয়া এলাকার ৬১৩ নম্বর তালুকটির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। পরে ওই তালুক ‘রুদ্রপুর’ নামে পরিচিত হয়।

সেই চৌধুরী পরিবারে দুর্গাপুজো শুরু হয় ১২৬০ বঙ্গাব্দে। চৌধুরী পরিবারের সদস্যেরা জানান, রাধাবল্লববাবু এক রাতে স্বপ্নে দেখেন ইছামতী নদী দিয়ে নৌকা করে বর্তমান বাংলাদেশের যশোরে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাঝ নদীতে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। দেবী কাঠাখালির ঘাটে নামানোর জন্য নির্দেশ দেন মাঝিকে। সেখানেই পুজোর নির্দেশ দেন। তার পরেই রুদ্রপুর গ্রামে দুর্গাপুজো শুরুর সিদ্ধান্ত।

জমিদার পরিবারের পুজোকে ঘিরে অনেক গল্প হাওয়ায় ভাসে। পরিবারের সদস্যদের দাবি, অনেক বছর আগে মহাষ্টমীর সন্ধিপুজোয় ভিড়ের চাপে জ্ঞান হারায় এক বালক। গ্রামবাসীরা ভেবেছিলেন, তার মৃত্যু হয়েছে। তখন পুরোহিতের পরামর্শে ওই বালককে প্রতিমার সামনে শুইয়ে দেওয়া হয়।

পুজোর শেষে দেবীর ঘটের জল ছিটিয়ে দিতেই সেই বালকের জ্ঞান ফিরে আসে। চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপ্রতিমা এলাকায় ‘উল্টো দুর্গা’ নামেই পরিচিত। কারণ, এখানে দুর্গার ডান দিকে রয়েছেন সরস্বতী-কার্তিক এবং বাঁ দিকে লক্ষ্মী-গণেশ। লোকশ্রুতি রয়েছে, বহু বছর আগে পটুয়াদের ভুলে এই স্থান বদল হয়েছিল। পরে সেটিই নিয়ম হয়ে গিয়েছে। প্রতি বছর ঠাকুরদালানে প্রতিমা তৈরি হলেও কাঠামো বদলায়নি। বাড়ির পুরানো বেল গাছের নীচে দেবীর বোধন হয়।

চৌধুরী পরিবারের সদস্যেরা জানান, আগে এই পুজোয় ছাগ বলি হলেও এখন সেটি বন্ধ। তবে কুমড়ো, আখ, কলা প্রভৃতি ফল দিয়ে ‘প্রতীকী বলি’ হয়। পুজোর দিনগুলিতে গ্রামবাসীদের মধ্যে কম্বল, চাদর বিলি করা হয়। পরিবারের সদস্যা সুমিতা রায় জানান, অষ্টমীতে দেবীকে চিংড়ির পোলাও ভোগ দেওয়া হয়।

চৌধুরী পরিবারের অনেক সদস্য এখন কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। তবে পুজোই তাদের শিকড়। পুজোর চার দিন পরিবারের সদস্যেরা বাড়ি ফিরে আসেন।

জমিদার বাড়ির পুজোর বৈভব কমলেও ঐতিহ্যে এবং আন্তরিকতায় কোনও ভাটা পড়েনি। আগে বিজয়ার দিনে বাজি ফাটিয়ে জমিদার বাড়ির পুকুরে জোড়া নৌকায় সাত পাক ঘুরিয়ে দেবীর বিসর্জন হতো।

বর্তমানে ২৪ জন গ্রামবাসী প্রতিমাকে কাঁধে করে নারায়ণপুর, আঁধারমানিক এবং রুদ্রপুর গ্রামে ঘোরেন। তারপর প্রতিমাকে নিয়ে আসা হয় রুদ্রপুর বাজারে। তার পর জমিদার বাড়ির পুকুরে প্রতিমার ভাসান হয়। পুজোর দিনগুলিতে বটেই, ভাসান দেখতেও গ্রামবাসীরা ভিড় করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE