E-Paper

মাঝসাগরে কোথায় চর, বুঝতেই পারেন না মৎস্যজীবী

মৎস্যজীবীদের প্রাণহানির পিছনে লাইফ জ্যাকেট পরার অনীহা আরও একটি বড় কারণ বলে দাবি মৎস্য দফতরের। গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার সময় মৎস্যজীবীরা লাইফ জ্যাকেট পরছেন কিনা, তা নিয়ে মৎস্য দফতরের কোনও নজরদারিও নেই।

সমরেশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৩২
মাঝসমুদ্রে চরে ধাক্কা লেগে উল্টে গিয়েছে ট্রলার।

মাঝসমুদ্রে চরে ধাক্কা লেগে উল্টে গিয়েছে ট্রলার। —ফাইল চিত্র।

একের পর এক ট্রলার দুর্ঘটনা। কখনও মাঝসমুদ্রে সংযোগ হারাচ্ছে, কখনও ইঞ্জিন কাজ করছে না। মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে বঙ্গোপসাগরে বার বার দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে বহু ট্রলার। দুর্ঘটনায় ট্রলার ডুবে ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মৎস্যজীবীদের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে এখনও নিখোঁজ।

মৎস্যজীবীদের প্রাণহানির পিছনে লাইফ জ্যাকেট পরার অনীহা আরও একটি বড় কারণ বলে দাবি মৎস্য দফতরের। গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার সময় মৎস্যজীবীরা লাইফ জ্যাকেট পরছেন কিনা, তা নিয়ে মৎস্য দফতরের কোনও নজরদারিও নেই। যাঁরা জ্যাকেট ব্যবহার করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার আছে বলে মনে করছেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। কিন্ত গভীর সমুদ্রে গিয়ে নজরদারির মতো পরিকাঠামোও নেই মৎস্য দফতরের।

মৎস্যজীবীদের একাংশের দাবি, নদীতে ট্রলার চলাচলের পথ নির্দিষ্ট করুক প্রশাসন। তা হলেই চর বাঁচিয়ে চলা সম্ভব হবে। দুর্ঘটনাও কমবে। সংযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি ট্রলারগুলির স্বাস্থ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত শুক্রবারের দুর্ঘটনার পরে ফের ট্রলারের পরিকাঠামোগত ত্রুটির বিষয়টি সামনে এসেছে। মৎস্যজীবীদের কয়েক জন বলেন, ‘‘প্রাণ হাতে নিয়ে সমুদ্রে যাই আমরা। অন্য যানবাহনের মতো ট্রলারের স্বাস্থ্যপরীক্ষার তেমন কোনও ব্যবস্থাই নেই। প্রশাসনও উদাসীন। ওয়্যারলেস রেডিয়ো সেটগুলি অনেক সময়ে কাজ করে না। ফলে বিপদ-সঙ্কেত পাঠানোরও উপায় থাকে না। অসংখ্য ত্রুটি থাকলেও গুরুত্ব দেয় না কেউ।’’

উপকূল রক্ষীবাহিনী সূত্রের খবর, অনেক সময়ে নিষেধ অমান্য করে কিছু ট্রলার বাংলাদেশের জল সীমানায় গিয়ে মাছ ধরে। বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনী দেখতে পেয়ে তাড়া করলে দ্রুত পালানোর সময়েও দুর্ঘটনা ঘটে। অন্য ভারতীয় ট্রলার এই পরিস্থিতিতে উদ্ধার করতে যাওয়ারও সাহস দেখায় না। এ ছাড়া, মাঝসমুদ্রে আবহাওয়া খারাপ হলে দ্রুত সমুদ্র-লাগোয়া খাঁড়ি, জম্বুদ্বীপ, কেঁদোদ্বীপ, লুথিয়ান দ্বীপ-সহ আশেপাশের দ্বীপ এলাকার বা সাগরের দিকে আসার সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে। সমুদ্র এবং নদীর মোহনায় চর পড়ে যাওয়ায় নাব্যতা কমেছে।

ট্রলারগুলির মাঝিরা জানান, সে ক্ষেত্রে জলোচ্ছ্বাস হলে বড় ঢেউয়ের নীচের গভীরতা মাপা যন্ত্র (ফিস ফাইন্ডার) কাজ করে না। এর ফলে চরে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে। গত কয়েক বছরে সব ক’টি ট্রলার দুর্ঘটনা ঘটেছে বন্দর থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটারের মধ্যে। মৎস্যজীবী ও ট্রলার মালিকদের বড় অংশের দাবি, সরকারি উদ্যোগে সমুদ্রের চরগুলি চিহ্নিত করে ট্রলারগুলিকে সমুদ্রে যাওয়া-আসার জন্য নির্দিষ্ট চ্যানেল করে দেওয়া হোক। তা হলে ঝুঁকি কমবে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক তথা কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘আগে আবহাওয়ার সতর্কবার্তা না থাকার কারণে আরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটত। তবে এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ফলে অনেক সুবিধা হয়েছে মৎস্যজীবীদের। ইদানীং দুর্ঘটনা বাড়ার মূল কারণ হল, সমুদ্রে চর পড়ে যাওয়া। নাব্যতা কম থাকায় বেশি ঢেউয়ের মধ্যে পড়ছে ট্রলারগুলি। ভাটার সময়ে জল আরও কম থাকায় বিপদ বাড়ছে।’’

প্রশ্ন উঠছে অদক্ষ মাঝিদের নিয়েও। মৎস্যজীবী সংগঠনের অনেকেরই অভিযোগ, কিছু দিন নদীতে নৌকো চালানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে মাঝসমুদ্রে পাড়ি দিচ্ছেন এমন মাঝির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর ফলে অজ্ঞতা থেকে দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেকে আবার ট্রলারে সহকারী মাঝি হয়ে এক বছর গভীর সমুদ্রে যাচ্ছেন। আর তার পরের বছর হয় তো তিনিই মূল মাঝি অন্য কোনও ট্রলারে। অনভিজ্ঞতার কারণে বিপদ মোকাবিলা করা তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে।

বিপদ যেখানে

সমুদ্রে নানা জায়গায় চর পড়েছে, তা চিহ্নিত করা হয়নি।

যন্ত্রের সমস্যা থেকেই গিয়েছে।

সমুদ্রে লাইফ জ্যাকেট পরছেন কিনা মৎস্যজীবীরা, তা দেখার কেউ নেই।

অনেক সময়ে অদক্ষ হাতে ট্রলারের দায়িত্ব।

নিষেধ না মেনে বাংলাদেশের জলসীমানায় ঢুকে পড়লেঝুঁকি বাড়ে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Fishermen drowning fishing trawler

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy