মাঠের একাংশের জঙ্গল সাফাইয়ের সময়ে সম্প্রতি উদ্ধার হয়েছে মানুষের মাথার খুলি। সেই রহস্যভেদ এখনও হয়নি। এর মধ্যেই ‘পানিহাটির ফুসফুস’ বলে পরিচিত অমরাবতী মাঠ বিক্রির জল্পনায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এর নেপথ্যে শাসকদলের মদত আছে কিনা, সেই প্রশ্নও উঠছে। প্রায় ৮৫ বিঘার মাঠটি রক্ষা করতে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ও মানবাধিকার সংগঠন কর্তৃপক্ষ।
পানিহাটি পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ওই মাঠের মালিক ‘সোসাইটি ফর দ্য প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ইন ইন্ডিয়া’ (এসপিসিআই)। মাঠের একাংশে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ‘এসপিসিআই’ পরিচালিত একটি ছেলেদের হোম ছিল। সেটি বন্ধ হওয়ার পরে মাঠটি কার্যত পরিত্যক্ত। মাঠের একাংশে পুরসভার অস্থায়ী ভাগাড়, কিছু অংশে ঝোপজঙ্গল। রাস্তা সংলগ্ন মাঠের জমিতে কিছু দোকান রয়েছে। স্থানীয়েরা জানান, প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ শীর্ষস্তরের নেতারা সেখানে সভা করেছেন।
আবাসন প্রকল্পের জন্য ওই মাঠ বিক্রির জল্পনা ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিবাদে নেমেছে বিরোধী দলগুলি। এপিডিআর-এর পানিহাটি শাখার সম্পাদক শুভঙ্কর চক্রবর্তী (তুফান) বলেন, ‘‘দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে পানিহাটিবাসীর ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চর্চার প্রাণকেন্দ্র এই মাঠ। সরকারি নথি অনুযায়ী সেখানে অনেকটা অংশ জলাশয় ওজলাভূমিও রয়েছে। সম্প্রতি বিক্রির জল্পনার সত্যতা জানতে ও তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে মুখ্যমন্ত্রী ও প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি।’’ দীর্ঘ দিন পরিত্যক্ত মাঠটি ১৯৮৪ সালে জনস্বার্থে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন বাম পরিচালিত পুরসভা। স্পোর্টস কমপ্লেক্স-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বলা হলেও বাস্তবে কিছুই হয়নি। তবে পুর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় এসপিসিআই।
২০০১ সালে বিচারপতি দিলীপকুমার শেঠ মাঠটিকে খাস জমিতে পরিণত করার বিজ্ঞপ্তি খারিজ করেন। অলাভজনক, জলকল্যাণমূলক সংস্থা এসপিসিআই ওই মাঠকে বাণিজ্যিক বা লাভজনক কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। করা হলে সরকার পুনরায় ওই সংস্থাকে নোটিস পাঠাতে পারবে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়। সেটি বিক্রির প্রসঙ্গে পুরপ্রধান মলয় রায় বলেন, ‘‘মালিকপক্ষ উন্নয়ন করতে চেয়েছেন। আমরা তাতে শর্ত দিয়েছি।’’ এসপিসিআই-এর সম্পাদক শৌভিক চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, স্থানীয় স্বার্থে হাসপাতাল, নার্সিং কলেজ, শিশুদের খেলার জায়গা, পার্ক, সাঁতার কেন্দ্র, মহিলাদের দক্ষতা বৃদ্ধির কেন্দ্র, কর্মরতা মহিলাদের হস্টেল, বৃদ্ধাশ্রম, দোকানগুলির স্থায়ী ব্যবস্থা, কমিউনিটি হল, পুনরায় ছেলেদের হোম তৈরি করে পুরসভাকে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘জনকল্যাণমূলক কাজগুলি করতে অর্থের প্রয়োজন। তাই কিছুটা অংশ আবাসন প্রকল্পকে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে।’’ পুরপ্রধান ও বিধায়ক নির্মল ঘোষকে চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে জানিয়েছে এসপিসিআই। কিন্তু জমি বিক্রি কি বাণিজ্যিক কাজ নয়? শৌভিকের দাবি, ‘‘আদালত ও সরকারের অনুমতিক্রমেই করা হবে।’’ কিন্তু স্থানীয়দের প্রশ্ন, বাম আমলের মাঠ বিক্রির ‘চক্রান্ত’ ফের কী ভাবে মাথা চাড়া দিল।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)