Advertisement
২৫ মার্চ ২০২৩

বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা-নেত্রীরাও ভোটের ময়দানে

দলের দুই গোষ্ঠীর কোন্দল সামাল দিতে না পেরে দুই বিবদমান গোষ্ঠীর নেতা-নেত্রীকে গত বার টিকিটও দেওয়া হয়নি। তাঁদের মাথার উপরে যাঁরা ছাতা হয়ে থেকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মদত দিতেন বলে শোনা যেত দলের অন্দরে, সেই দুই নেতাই প্রয়াত। এই পরিস্থিতিতে অশোকনগরে বিবদমান দুই নেতা-নেত্রীকে টিকিট দিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইল সিপিএম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
অশোকনগর শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০০:২১
Share: Save:

দলের দুই গোষ্ঠীর কোন্দল সামাল দিতে না পেরে দুই বিবদমান গোষ্ঠীর নেতা-নেত্রীকে গত বার টিকিটও দেওয়া হয়নি। তাঁদের মাথার উপরে যাঁরা ছাতা হয়ে থেকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মদত দিতেন বলে শোনা যেত দলের অন্দরে, সেই দুই নেতাই প্রয়াত। এই পরিস্থিতিতে অশোকনগরে বিবদমান দুই নেতা-নেত্রীকে টিকিট দিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইল সিপিএম।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা এখনও প্রকাশ করেনি বামেরা। তবে কিছু ক্ষেত্রে তালিকা পাওয়া গিয়েছে দলীয় সূত্রেই। অশোকনগরের ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টির ক্ষেত্রেই (১৯ ও ২২ নম্বর বাদে) প্রার্থীদের নাম জানিয়েছে সিপিএম। দেখা যাচ্ছে, প্রাক্তন বিধায়ক তথা কাউন্সিলর সত্যসেবী কর ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক শর্মিষ্ঠা দত্তকে টিকিট দিচ্ছে সিপিএম। শর্মিষ্ঠাদেবী দাঁড়াবেন ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। সেখানেই তাঁর বাড়ি। অন্য দিকে, সত্যসেবীবাবুর বাড়ি ১২ নম্বর ওয়ার্ডে হলেও তিনি টিকিট পেয়েছেন ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে।

অশোকনগর এলাকায় এই দুই নেতা-নেত্রীর গোষ্ঠীর মধ্যে আড়াআড়ি বিভাজন সর্বজনবিদিত। নতুন বাসরুট চালু, বইমেলা এমন আরও নানা ঘটনায় দু’জনের দ্বৈরথ সামনে এসেছে। সত্যসেবীবাবু ও তাঁর দাদা বাবুল কর বরাবরই ছিলেন বাম আমলের দাপুটে মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ।

অন্য দিকে, শর্মিষ্ঠাদেবী দমদমের প্রাক্তন সাংসদ অমিতাভ নন্দীর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন। সুভাষবাবু ও অমিতাভবাবু দুই নেতাই প্রয়াত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে অশোকনগরে সিপিএমের ঘরোয়া কোন্দল বেশ কিছু দিন ধরে এমনিতেই প্রশমিত হয়ে এসেছিল। দলের জেলা সম্পাদক গৌতম দেবের কাছের লোক হয়ে ওঠায় সত্যসেবীবাবুদের প্রভাবও বেড়েছে। তুলনায় শর্মিষ্ঠাদেবীরা কিছুটা কোণঠাসাও হয়ে পড়েন।

Advertisement

ঘরোয়া কোন্দল সামলাতে না পেরে ২০১০ সালের পুরভোটে সত্যসেবীবাবু বা শর্মিষ্ঠাদেবী কাউকেই টিকিট দেয়নি দল। এ বার অবশ্য দু’জনকেই টিকিট দেওয়া হচ্ছে। সিপিএমের কার্যনির্বাহী জেলা সম্পাদক নেপালদেব ভট্টাচার্য বলেন, “ওই দু’জনেই অত্যন্ত অভিজ্ঞ রাজনৈতিক কর্মী। পুরসভার কাজকর্মের ক্ষেত্রেও তাঁদের অভিজ্ঞতা আছে। তাঁদের সেই দিকগুলিকেই কাজে লাগাতে চায় দল।” এই এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও কেটে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। সত্যসেবীবাবু বলেন, “এ বার সমস্ত বাম কর্মীরা একজোট হয়েছি। আশা করছি, ভালই ফল হবে।” একই বক্তব্য, শর্মিষ্ঠাদেবীরও।

এই পুরসভার ক্ষেত্রেও একাধিক নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে বামেদের প্রার্থিতালিকায়। মহিলা প্রার্থীর সংখ্যাও বেশি। এমনকী, কোনও রকম ভাবে সংরক্ষিত নয়, এমন ওয়ার্ডেও মহিলা প্রার্থী দাঁড় করানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সুকৃতী বিশ্বাস, ২ নম্বর ওয়ার্ডের নবনীতা কুণ্ডু, ৮ নম্বরে নমিতা দত্তরা। সিপিএমের মিটিং-মিছিলে দেখা যায় না, এমন অনেককেও প্রার্থী করা হয়েছে। সেই তালিকায় আছেন ২৩ নম্বরের মিঠু দাস, ৮ নম্বরে স্মৃতিকণা দাস, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সুনীতা দত্ত চক্রবর্তী প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, গত বার অশোকনগরে ২২টি ওয়ার্ড ছিল। যার মধ্যে ২০টিতেই জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। সিপিএম পেয়েছিল দু’টি আসন।

এ বার অশোকনগরে ওয়ার্ড বেড়ে হয়েছে ২৩টি। যার মধ্যে সিপিআই লড়ছে ৬টিতে। একটি ছাড়া হয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লককে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে আবার প্রার্থীই দিচ্ছে না বামেরা। সিপিএম সূত্রে জানানো হয়েছে, এখানে স্থানীয় ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের পক্ষে নির্দল প্রার্থী হিসাবে এক জনকে চাওয়া হচ্ছে। তাঁকে দলীয় ভাবে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বামেরা।

উল্লেখযোগ্য ভাবে, গোবরডাঙা পুরসভার ক্ষেত্রে পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের বাপি ভট্টাচার্যকে এ বার টিকিট দিচ্ছে না দল। তাঁর ওয়ার্ডটি (৮ নম্বর) সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে। নেপালদেববাবু জানান, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বাপিবাবুকে প্রার্থী করতে পারলেন না তাঁরা। তবে এর মধ্যে অন্য কোনও কারণ খুঁজতে যাওয়া ঠিক হবে না। প্রচারে বামেদের হয়েই গা ঘামাবেন বাপিবাবু। যদিও গত বার সিপিএম অন্য যে আরও ৫টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছিল, সেই ৪, ৭, ৮, ৯, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাম কাউন্সিলরদের এ বার টিকিট দেওয়া হয়েছে।

৫ নম্বর ওয়ার্ডে গোবরডাঙা গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সম্পাদক শুভ্রা ঘোষকে প্রার্থী করা হয়েছে। বাকিগুলিতে লড়ছে সিপিএম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.