কাকদ্বীপ পান বাজারে চলছে পান পাতা গোছানোর কাজ। নিজস্ব চিত্র
পানগাছের গোড়ায় নোনাজল লাগলে তা প্রায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই শুষে নেয় পান পাতা। চাষিদের পান বরজ বাঁচানোর আশা ছাড়তে হয় আগামী তিন বছরের জন্য।
এ বারের ভরা কোটাল এবং নিম্নচাপে ঠিক তাই হয়েছে কাকদ্বীপ মহকুমার অসংখ্য পান চাষিদের ক্ষেত্রে। চোখের সামনে ক্ষতি দেখেও নিরুপায় তাঁরা। পান ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতির পরিমাণ নেহাত কম নয়।
ডায়মন্ড হারবার-সহ কৃষি অধিকর্তা তথা কৃষি বিজ্ঞানী অভিনন্দন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত ফসলের জন্যই বিভিন্ন এলাকা সমীক্ষা করেছি। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব এখনও চলছে। ফসলের ক্ষতি কতটা হয়েছে, সেই রিপোর্ট আমরা তৈরি করছি।’’
সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘চাষে কাকদ্বীপে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে সাগর বিধানসভা এলাকায়। ক্ষতিপূরণের জন্য প্রায় ১২০০ দরখাস্ত ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে। এর মধ্যে পানচাষিও রয়েছেন অনেক। কৃষি দফতরের মাধ্যমে সেই তথ্য রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হচ্ছে।’’ তবে সরকারি তরফে এখনও ক্ষতিপূরণের কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
কালীপুজোর আগের নিম্নচাপের বৃষ্টিতে নোনাজল ঢুকেছে। শক্তপোক্ত নদীবাঁধ ছাপিয়েই এ বার জল ঢুকেছে বিভিন্ন এলাকায়। ক্ষতি হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতেও। ধসপাড়ার পানচাষি কিঙ্কর ভুঁইঞার পান বরজে নদী ছাপিয়ে হাঁটুজল ঢুকেছিল। দু’টি বরজে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮০ হাজার টাকার মতো। তাঁর কথায়, ‘‘মিঠেপাতার পুরো বরজটাই গিয়েছে। চাষের ক্ষতি তো হলই। আগামী তিন বছর আর পান চাষ হবে না ওই জমিতে।’’
সাগরের রামকরচর এলাকার আরও এক চাষি রঘুশ্যাম দাস এ বছরই একটি নতুন পানের বরজ করেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টির জল জমে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বরজ। রঘুশ্যামবাবুর কথায়, ‘‘নতুন বরজ একটু নিচু জমিতেই হয়। প্রথমবারেই জলে গেল প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো। ক্ষতিপূরণ আদৌ সরকার দেবে কিনা জানি না।’’
পশ্চিমবঙ্গ পান চাষি সমিতির কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ১৫ শতাংশ নতুন বরজ নষ্ট হয়েছে। অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে কয়েক বছর পান চাষ করলে তা ধীরে ধীরে উঁচু হয়। সাগরের মুড়িগঙ্গা, রামকরচর, সুমতিনগর, বঙ্কিমনগর, নামখানার নারায়ণপুর, পাতিবুনিয়ার কিছু অংশে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে পান চাষে। পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুরেও বেশ কিছু পান চাষি মার খেয়েছেন নোনা জলে।
মার খেয়েছেন কাকদ্বীপ পান বাজারের অন্তত ২০০ পাইকারও। বৃষ্টির তিন চার দিন ধরে চলায় পানের বোঁটা পচার সমস্যা এ বার মারাত্মক হয়েছিল। কাকদ্বীপ বিবেকানন্দ পান বাজারের কর্তা অদ্বৈত মণ্ডল জানান, প্রবল বর্ষা টানা হচ্ছে দেখে তড়িঘড়ি পান তুলে তা বাজারে এনেছেন কৃষক। কিন্তু তা অতিরিক্ত ভিজে থাকায় বেশ কিছু পাইকার তা কিনে আর পরে খুচরো বাজারে বিক্রি করতে পারেননি।
কাকদ্বীপ পান বাজার থেকে পান রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় যেতে ৩-৫ দিন সময় লাগে। অতিবৃষ্টির ভেজা পান কিনে তা দূরান্তে পৌঁছতে বোঁটা বেশিরভাগ জায়গায় পচে গিয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy