Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গিতেই মৃত্যু মহিলার, মেনে নিল স্বাস্থ্য দফতর

গাইঘাটার মণ্ডলপাড়ার বেবিরানি বিশ্বাসের (৫৬) মৃত্যু ডেঙ্গিতেই হয়েছে বলে অবশেষে মেনে নিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৬ ০০:৩৭
চলছে ডেঙ্গির মশার খোঁজ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

চলছে ডেঙ্গির মশার খোঁজ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

গাইঘাটার মণ্ডলপাড়ার বেবিরানি বিশ্বাসের (৫৬) মৃত্যু ডেঙ্গিতেই হয়েছে বলে অবশেষে মেনে নিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

পঞ্চায়েত প্রধান, স্থানীয় বিধায়ক আগেই এমনটা দাবি করেছিলেন। কিন্তু জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে তা স্বীকার করা হচ্ছিল না। বুধবার অবশ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য জানিয়েছেন, মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা এক মহিলার মৃত্যু ডেঙ্গিতেই হয়েছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই মহিলার রক্তের রিপোর্ট তাঁদের কাছে এসেছে। তারপরেই তাঁরা মৃত্যুর কারণ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে আরজিআর হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বেবিরানির। বুধবার তাঁর ছেলে স্বজলবাবু জানালেন, বাড়ির গোয়ালে একটি মাটির পাত্র ছিল। তাতেই জল জমেছিল। সেখানেই সম্ভবত মশা হয়েছিল। মায়ের মৃত্যুর পরে ওই পাত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

মৃত্যুর দিন সাতেক আগে বেবিরানিদেবীর জ্বর হয়। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। শুক্রবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে আরজিকরে পাঠানো হয়েছিল। রাতেই মারা যান তিনি। স্বাস্থ্য দফতরের লোকজন ওই বাড়িতে ঘুরে গিয়েছেন। বেবিরানির মৃত্যুর পরে এলাকার মানুষের মধ্যে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মিলন মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই মহিলার মৃত্যুর আগে ডেঙ্গি সম্পর্কে আমরা তেমন কিছু জানতাম না। এখন জ্বর হলেই এলাকার মানুষ প্রথমেই হাসপাতালে যাচ্ছেন বা রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন। রোজই এখানে জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।’’

এ দিকে বুধবার সকাল থেকে স্বাস্থ্য দফতর পুলিশ প্রশাসন পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে মণ্ডলপাড়া এলাকায় ডেঙ্গি প্রতিরোধে এক সঙ্গে আসরে নেমে পড়েছে। সকাল থেকেই ছড়ানো হচ্ছে ব্লিচিং মশা মারার তেল। আনা হয়েছে দু’টি কামানও। পুলিশের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকে প্রচার শুরু হয়েছে। মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট ছড়ানো হচ্ছে।

জ্বর এখানে প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে। স্থানীয় চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় মণ্ডলপাড়া এলাকায় আগামী পাঁচ দিনের জন্য একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প খোলা হয়েছে। গাইঘাটার বিএমওএইচ কৌশিক রায় বলেন, ‘‘যে সব গরিব মানুষ প্যাথলজি সেন্টার থেকে রক্ত পরীক্ষা করালে স্বাস্থ্য দফতরই খরচ বহন করবে। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্য জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হতে হবে।’’ গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ বলেন, ‘‘ব্লিচিং ও তেল ছড়ানো হচ্ছে। পঞ্চায়েত সমিতিক পক্ষ থেকে এলাকার যত বন জঙ্গল আছে, তা কেটে সাফ করতে দশজন শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে।’’

মণ্ডলপাড়ার গেটপাড়ায় বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা গেল, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর অব হেলথ প্রশান্ত বিশ্বাস বাড়ি বাড়ি ঘুরে ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশার উৎস খুঁজছেন। টর্চ মেরে তিনি জঙ্গল বাড়ি উঠোন রাস্তার তল্লাশি চালিয়ে তা দেখতে পেলে নষ্ট করছেন। একটি বাড়িতে দইয়ের পরিত্যক্ত ভাঁড়ে জল জমে ছিল। সেখানে মিলল ডেঙ্গির বাহক মশার লার্ভা। চিকিৎসকেরা জানালেন, কয়েক বছর আগে ওই এলাকায় চিকুনগুনিয়া ছড়িয়েছিল।

এ দিকে, রোজই জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চাপ উপচে পড়ছে চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। মেঝেতে রেখে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এখান থেকে ১৯ জনকে বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ব্লকে ডেঙ্গি ধরা পড়েছে ২১ জনের। সব দেখে শুনে বাসিন্দাদের বক্তব্য, কয়েক দিন যদি প্রশাসনের ওই পদক্ষেপ শুরু হতো, তা হলে হয় তো এত দুর্ভোগের মধ্যে পড়তেই হতো না। তবে মণ্ডলপাড়া নিয়ে প্রশাসনের মাথাব্যথা দেখা গেলে অন্যত্র তেমন কিছু উদ্যোগ চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।

Dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy