E-Paper

বধূর অপমৃত্যুতে শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রেফতারের দাবি ঘিরে বিক্ষোভ

এ দিন সন্ধ্যায় অশ্বিনীপল্লিতে সুনীতার শ্বশুরবাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তাঁর পরিজন ও প্রতিবেশীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৫
পণের দাবিতে সুনীতাকে (ইনসেটে) খুনের অভিযোগ তুলে দোষীদের গ্রেফতারি ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ। শুক্রবার, বারাসতে।

পণের দাবিতে সুনীতাকে (ইনসেটে) খুনের অভিযোগ তুলে দোষীদের গ্রেফতারি ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ। শুক্রবার, বারাসতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

এক বধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেফতারের দাবিতে ভাঙচুর চালানো হল মৃতার শ্বশুরবাড়িতে। শুক্রবার বিকেলের পরে বারাসতের অশ্বিনীপল্লিতে এই ঘটনা ঘটে। গত বুধবার রাতে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছিল সুনীতা সরকার (২৩) নামে ওই তরুণীর। অভিযোগ, দাবি মতো পণ না দেওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনই তাঁকে খুন করেছেন। যার ভিত্তিতে সুনীতার স্বামী সৌম্য দত্তকে বৃহস্পতিবারই গ্রেফতার করেছিল বারাসত থানার পুলিশ। কিন্তু সুনীতার পরিবারের অভিযোগ, তাঁর শ্বশুর পুলিশে কর্মরত। তাই প্রভাব খাটিয়ে তিনি গ্রেফতারি এড়াচ্ছেন। পুলিশের পাল্টা দাবি, ঘটনার তদন্ত চলছে। মৃতার স্বামীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ দিন মৃতার শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রেফতারের দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিলে যোগ দেন অনেকে। সন্ধ্যায় বারাসত থানার কাছে রাস্তা অবরোধ করা হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সন্ধ্যায় অশ্বিনীপল্লিতে সুনীতার শ্বশুরবাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তাঁর পরিজন ও প্রতিবেশীরা। ওই বাড়িতে ইট ছোড়া হয় এবং ভাঙচুর চালানো হয় বলেও অভিযোগ। বারাসত থানার সামনেও একই দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে অবশ্য পুলিশের আশ্বাসে বিক্ষোভ উঠে যায়।

প্রসঙ্গত, বিয়ের চার মাসের মাথায়, গত বুধবার রাতে মৃত্যু হয় সুনীতার। তাঁর বাবা বারাসত থানায় অভিযোগ দায়ের করে দাবি করেন, মেয়েকে পণের জন্য খুন হতে হয়েছে। এর পরেই সুনীতার স্বামী সৌম্যকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে ছ’দিনের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। মৃতার পরিজনেরা জানিয়েছেন, কলকাতা পুলিশের এএসআই পদে কর্মরত তাঁর শ্বশুর। তাই বারাসত থানা তাঁকে গ্রেফতার করেনি বলে অভিযোগ তাঁদের। এ দিন সন্ধ্যায় প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেন মৃতার পরিজনেরা। তাতে বহু মানুষ শামিল হন। ‘বিচার চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। প্রথমে অশ্বিনীপল্লিতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। সুনীতার শ্বশুরবাড়ির সামনে দফায় দফায় বিক্ষোভ চলে। বাড়ি বন্ধ থাকায় সেখানে অল্পবিস্তর ভাঙচুরও চালানো হয়।

বিয়ের আগে বারাসতের আমতলায় থাকতেন সুনীতা। তাঁর মা মধুছন্দা সরকারের অভিযোগ, পরিকল্পনা করেই তাঁদের মেয়েকে খুন করা হয়েছে। পণের টাকার জন্য মেয়ের উপরে সাংঘাতিক শারীরিক অত্যাচার চালানো হয়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এর বিচার চাই। দোষীদের কঠোর শাস্তি হোক। যে ভাবে সুনীতার প্রাণ কেড়ে নেওয়া হল, ওদের ফাঁসি হওয়া উচিত। পুলিশে চাকরি করায় ওদের রেয়াত করা হবে, তা কোনও ভাবেই আমরা মানব না। আইন যেন সকলের জন্য সমান হয়।’’

পরিবারের অভিযোগ, বুধবার রাতে সুনীতার মা-বাবাকে তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে জানানো হয়, মেয়ের দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেই খবর পেয়ে তরুণীর বাবা-মা ও পরিজনেরা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখেন, খাটের উপরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছেন সুনীতা। চোখেমুখে আতঙ্কের স্পষ্ট ছাপ। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল বলেও দাবি পরিবারের। ওই অবস্থায় সুনীতাকে উদ্ধার করে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

বিক্ষোভকারীরা জানান, শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিলেন সুনীতা। তাঁর এই পরিণতি তাঁরা মানতেপারছেন না। বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। যাঁদের সঙ্গেই এই ঘটনার যোগ পাওয়া যাবে, তাঁদের প্রত্যেককেই গ্রেফতার করা হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Barasat

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy