সাধনা: মায়ের কোলে কাকলি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে পরাজিত হল শারীরিক প্রতিবন্ধকতা।
অদম্য জেদ আর হার-না-মানা মনের জোর সম্বল করে বনগাঁর কলেজ পাড়ার বাসিন্দা কাকলি হোড় এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ২৫৪ নম্বর পেয়ে পাস করেছে।
মেয়েটির উচ্চতা মেরেকেটে সাড়ে তিন ফুট। জন্মের পর থেকে কখনও নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতে পারেনি। হাত-পায়ের হাড় তার কত বার যে ভেঙেছে, তার হিসাব মনে নেই বাবা-মায়েরও। কোমর থেকে পায়ের নীচ পর্যন্ত কোনও সাড় নেই। সব হাড়ই ভাঙা। কিন্তু মনে অদ্ভূত শক্তি। সেই শক্তি দিয়েই সে জাপটে ধরেছে বইকে। জীবনযুদ্ধে তার একমাত্র অবলম্বন লেখাপড়া। এ বার তার লক্ষ্য, বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া।
নিউ বনগাঁ গালর্স হাইস্কুলের ছাত্রী কাকলি। শুক্রবার সকালে মায়ের সঙ্গে হুইল চেয়ারে করে কাকলি গিয়েছিল স্কুলে। পাস করেছে জানতে পেরে মা-মেয়ের চোখ জলে ভরে ওঠে। কাকলি বলে, ‘‘লেখাপড়া করে সরকারি চাকরি করার ইচ্ছে আছে। তবে শিক্ষিকা হতে পারলে মনে করব, জীবনের একটা স্বপ্ন পূরণ হল।’’
কাকলির বাবা কালীকৃষ্ণ সেলসম্যানের কাজ করেন। সামান্য আয়। রঙ চটে যাওয়া, জরাজীর্ণ বাড়ি তাদের। গোটা বাড়িতে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। কাকলির নবম শ্রেণিতে পড়ে। আর্থিক কারণে মেয়েকে গৃহশিক্ষক দিতে পারেননি বাবা। মেয়েকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে বাবা নিয়ে যেতেন পরীক্ষা কেন্দ্রে। মা মালাদেবীও সঙ্গে থাকতেন। কাকলির জন্য আলাদা করে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল কেন্দ্রে। হুইল চেয়ারের মাপে টেবিলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সে জন্য।
নিজের পায়ে হাঁটা তো স্বপ্নের বিষয়, কাকলি ঠিক করে বসতেও পারে না। বিছানায় বসে কিছুক্ষণ লেখাপড়ার পরেই কাকলি উঠে পড়ে মায়ের কোলে। কোলে বসেই পড়াশোনা করে। মা-ই তাকে খাইয়ে দেন, পোশাক পরিয়ে দেন। পরীক্ষার আগে রোজ ৬-৭ ঘণ্টা পড়ত কাকলি।
ডানহাতে লিখতে পারে না কাকলি। ডান হাতের হাড় সব কটা ভেঙেছে একাধিবার। বাঁ হাতেরও হাড় ভেঙেছে। তবে কব্জি থেকে আঙুল পর্যন্ত এখনও ঠিকঠাক আছে। বাঁ হাত দিয়েই এখনও তাই লেখালেখির কাজ করে। মালা বলেন, ‘‘মেয়ের তেরো দিন বয়স থেকে বুঝতে পারি, ওর রোগের কথা। তারপর থেকে বনগাঁ-কলকাতায় বহু ডাক্তার দেখিয়েছি। শুনেছি, এই রোগের নাকি চিকিৎসা নেই। থাকলেও অবশ্য আমাদের পক্ষে সেই খরচ বহন করাটা অসম্ভব।’’
কাকলিকে পড়াশোনার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছেন স্কুলের শিক্ষিকারা। কাকলি বলে, ‘‘যখনই কোনও কিছু বুঝতে অসুবিধা হয়েছে স্কুলের শিক্ষিকারা আলাদা করে আমায় তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy