Advertisement
০৫ মে ২০২৪
gosaba

কর্মিসভার মঞ্চে ভাষণে দলের একাংশকে তোপ বিধায়ক সুব্রতের

লাহিড়ীপুরের ট্রিপলিঘেরি বাজারে এক কর্মিসভায় গিয়ে দলের সেই সব ব্লক ও অঞ্চল নেতাদের বিরুদ্ধে কার্যত নতুন করে তোপ দেগেছেন সুব্রত। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই গোসাবার রাজনীতি যথেষ্ট সরগরম। 

বিতর্ক: এই সভা থেকেই দলের একাংশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন বিধায়ক। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা
নিজস্ব সংবাদদাতা
গোসাবা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৫২
Share: Save:

গত বিধানসভা ভোট বা উপনির্বাচনে গোসাবার আমতলি, ছোট মোল্লাখালি, লাহিড়ীপুর, সাতজেলিয়া, গোসাবা, শম্ভুনগর-সহ বহু পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূল ভাল ফল করতে পারেনি বলে মনে করেন দলের একটি অংশ। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বিধায়ক হওয়ার পর ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে এই সব অঞ্চলে দলের সংগঠনে কিছু অদলবদল করেছিলেন বিধায়ক সুব্রত মণ্ডল। আর তা নিয়েই গোসাবা ব্লক নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে সুব্রতের সম্পর্কের ফাটল ধরে। বর্তমানে বিধায়কের বিরোধী গোষ্ঠী যথেষ্ট মাথাচাড়া দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে শুরু করে নানা অশান্তি লেগেই রয়েছে। দু’পক্ষ কিছুদিন আগে আলাদা করে বিজয়া সম্মিলনী পালন করে ব্লক তৃণমূলের ব্যানারে।

মঙ্গলবার লাহিড়ীপুরের ট্রিপলিঘেরি বাজারে এক কর্মিসভায় গিয়ে দলের সেই সব ব্লক ও অঞ্চল নেতাদের বিরুদ্ধে কার্যত নতুন করে তোপ দেগেছেন সুব্রত। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই গোসাবার রাজনীতি যথেষ্ট সরগরম।

দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গোসাবায় তৃণমূলের অন্দরে রেষারেষির এক পক্ষে আছেন বিধায়ক সুব্রত। অন্য দিকের নেতৃত্ব দেন জেলা পরিষদের সদস্য অনিমেষ মণ্ডল। মঙ্গলবার সুব্রত নাম না করে অনিমেষের উদ্দেশ্যে নানা কটূক্তি করেন। আমতলি, ছোট মোল্লাখালি, লাহিড়ীপুর-সহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি অঞ্চলের নেতৃত্বকেও ‘দুর্বৃত্ত’ আখ্যা দেন। এঁরা এলাকার মানুষকে শোষণ করছেন, পঞ্চায়েতের টাকা, জবকার্ডের টাকা লুট করছেন বলেও অভিযোগ করেন। এঁদের কেউ যেন পঞ্চায়েত ভোটের টিকিট না পান, সেই দাবি করেন বিধায়ক।

কর্মিসভায় সুব্রত বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে এঁরা টিকিট বিলি করবেন বলে লোভ দেখাচ্ছেন। এঁরা টিকিটের দায়িত্ব পেলে মানুষকে অত্যাচার করবেন। মারধর করে জবকার্ড নিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেবেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে নেবেন। সাধারণ মানুষ সারা জীবন এঁদের দাসত্ব করবেন।” মাঝে মধ্যে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজনকে তুই-তোকারিও করেন সুব্রত।

অনিমেষ পরে বলেন, ‘‘উনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, সেটা একজন বিধায়কের ভাষা হওয়া উচিত নয়। ওঁর শিক্ষার অভাব আছে বলেই মনে হয়।” অনিমেষ আরও বলেন, “উনি দলকে ঠিকাদারমুক্ত করবেন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির দল বানাবেন— ভাল কথা। কিন্তু উনি বর্তমানে যাঁদের নিয়ে চলছেন, তাঁরা কেউ ঠিকাদার নন তো?’’ সুব্রত পরে বলেন, “আমি ঠিকাদারি করি সেটা প্রমাণ করে দেখাক। মুখে অনেক কিছু বলা যায়। আর এলাকার মানুষের স্বার্থেই রাস্তা তৈরির জন্য প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কিছু ভাঙা-চোরা হয়েছে। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য করিনি।”

শুক্রবার আবার রাধানগর এলাকায় একটি কর্মিসভা থেকে বিধায়ককে পাল্টা তোপ দাগে বিরোধী গোষ্ঠী। অনিমেষ ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন কৈলাস বিশ্বাস, সুবিদ আলি ঢালির মতো ব্লক তৃণমূলের নেতারা। তাঁদের দাবি, বালিতে রিসর্ট তৈরি থেকে একাধিক সরকারি কাজে নিজেই মালপত্র দিয়েছেন বিধায়ক। রাস্তা তৈরির নামে ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষের ঘর বাড়ি ভেঙে তাঁদের পথে বসাচ্ছেন। বিধায়কের মদতে গোসাবার ঐতিহ্য রবীন্দ্র শিশুউদ্যান নষ্ট করা, হ্যামিলটন বাংলোর পাঁচিল ভাঙার অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা।

তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। জয়নগর সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সর্দার বলেন, ‘‘বিধায়ক নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন যে সাধারণ মানুষের উপরে অত্যাচার করেছে তৃণমূল। ভোট লুট করেছে। মানুষের জবকার্ড ছিনিয়ে নিয়ে তাঁদের প্রাপ্য টাকা লুট করেছে। আজ ভাগ বাটোয়ারা কম পাচ্ছেন, তাই এ সব বলছেন।”

গোসাবার আরএসপি নেতা আদিত্য জোতদারও বিজেপির সুরে বলেন, “আসলে ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বিবাদ বেধেছে। তাই একে অন্যের বিরুদ্ধে কুৎসা করতে নেমে ময়দানে পড়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gosaba Subrata Mondal TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE