E-Paper

পর্যটকদের সঙ্গে সুন্দরবনে ঢুকছে প্লাস্টিক, উদ্বেগ

এখন সারা বছরই সুন্দরবনে পর্যটকেরা আসেন। চৈত্র-বৈশাখ মাসে প্রচণ্ড গরমে আনাগোনা কিছুটা কম হলেও জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে ইলিশ উৎসব।

প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৫ ১০:১৪
মাতলা নদীর চরে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক-সহ নানা ধরনের বর্জ্য।

মাতলা নদীর চরে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক-সহ নানা ধরনের বর্জ্য। নিজস্ব চিত্র ।

প্লাস্টিক জমছে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে। সারা বছর ধরে এখানে পর্যটকদের আনাগোনা লেগে রয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে প্লাস্টিকের দাপটও। যদিও ট্যুর অপারেটররা জানিয়েছেন, ভ্রমণের সময়ে যাতে নদীতে কোনও পর্যটক প্লাস্টিক-বর্জ্য না ফেলেন, সেই বার্তা তাঁরা সব সময়ে দেন। নদীবক্ষে ভ্রমণের সময়ে প্লাস্টিকের জলের বোতল, চিপস-সহ অন্যান্য প্লাস্টিক ফেলার জন্য লঞ্চ বা ভুটভুটিতে ডাস্টবিন থাকে। কিন্তু নদীবক্ষে ভ্রমণ ছাড়াও যখন সুন্দরবনের বিভিন্ন পর্যটনস্থলে পর্যটকেরা ভ্রমণ করেন, তখন তাঁদের ব্যবহারের প্লাস্টিক-সহ অন্যান্য সামগ্রী যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, এলাকার মানুষের ব্যবহার্য প্লাস্টিকের কারণেও দূষণ ছড়াচ্ছে বলে দাবি পরিবেশবিদদের।

এখন সারা বছরই সুন্দরবনে পর্যটকেরা আসেন। চৈত্র-বৈশাখ মাসে প্রচণ্ড গরমে আনাগোনা কিছুটা কম হলেও জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে ইলিশ উৎসব। এই সময় থেকে পর্যটনে জোয়ার আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ আসছেন। সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট, অন্যান্য প্লাস্টিকের সামগ্রী ঢুকছে এলাকায়। পর্যটকেরা এই প্লাস্টিক সরাসরি নদীতে না ফেললেও স্থানীয় বাজার বা জনপদ এলাকাগুলি সে সব জমা হচ্ছে।

লোকালয় বা বাজার এলাকাগুলিতে থাকা ডাস্টবিন সকলে ব্যবহার করেন না বলে অভিযোগ। গোসাবা বাজার, পাখিরালয়, গদখালি, ঝড়খালির মতো পর্যটন কেন্দ্রের পাশাপাশি সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার ক্যানিংয়েও দূষণ বাড়ছে প্লাস্টিকের কারণে। ক্যানিংয়ে তো আবার সারা বাজারের নোংরা, হাসপাতালের বর্জ্য, প্লাস্টিক, সিরিঞ্জ-সহ নানা সামগ্রী সরাসরি ফেলা হচ্ছে মাতলা নদীর চরে। সেখান থেকে এক দিকে যেমন দূষণ ছড়াচ্ছে, তেমনই প্লাস্টিক, ময়লা সরাসরি নদীর জলে মিশছে। এ নিয়ে প্রশাসনের নজরদারি নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।

পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘সুন্দরবন আর সুন্দর নেই, কলুষিত হয়ে গিয়েছে। দিনের পর দিন দূষণের বন হয়ে উঠছে এটি। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনই এর জন্য দায়ী। পর্যটনের অত্যাচারের কারণে দূষণ বাড়ছে সুন্দরবনে। ঘটা করে পরিবেশ দিবস উদযাপন করে লাভ নেই, যদি না এই দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে সঠিক নজরদারি করা হয়। এই উদ্যোগ প্রশাসনকেই নিতে হবে, তবেই কমবে দূষণ।’’

গোসাবার বিডিও বিশ্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘গোসাবার প্রায় প্রতিটি পঞ্চায়েতেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। পঞ্চায়েতের উদ্যোগেই এলাকার প্লাস্টিক-সহ অন্যান্য বর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সংগৃহীত প্লাস্টিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে রাস্তা তৈরির কাজেও ব্যবহার করা হবে, সেই উদ্যোগ করা হচ্ছে। এর ফলে এলাকায় প্লাস্টিকের দূষণ কমবে, সংগৃহীত প্লাস্টিক রাস্তা তৈরি কাজে ব্যবহৃত হলে পঞ্চায়েতগুলিও আর্থিক ভাবে লাভবান হবে।”

ক্যানিংয়ের বিডিও নরোত্তম বিশ্বাস জানান, ক্যানিং বাজার সংলগ্ন এলাকাতেই একটি প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্ট তৈরি হয়েছে। কিছু মেশিনপত্র প্রয়োজন। তার অনুমতিও পাওয়া গিয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই টেন্ডার সম্পন্ন হলে দ্রুত সেটি চালু হয়ে যাবে। ফলে এখন এলাকায় প্লাস্টিকের জন্য যে দূষণ ছড়াচ্ছে, সেই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে তাঁর দাবি।

মাতলা নদীর চরে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক-সহ নানা ধরনের বর্জ্য। নিজস্ব চিত্র

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sundarbans

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy