কল সেন্টারের আড়ালে শুধু ঋণের প্রতিশ্রুতি নয়, চলত জীবনবিমার টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথাও— এমনই তথ্য সামনে এসেছে তদন্তকারীদের। মধ্যমগ্রামে কল সেন্টারের আড়ালে একটি চক্র মানুষকে প্রতারণা করছিল বলে অভিযোগ ওঠে। বনগাঁর এক বাসিন্দা দিলীপ বণিক সম্প্রতি ২৮ হাজার টাকা প্রতারণার শিকার হওয়ার পরে বিষয়টি নজরে আসে। ঘটনার তদন্তে নেমে বনগাঁ সাইবার থানার পুলিশ এক চক্রের হদিস পায়। এরপরই মঙ্গলবার পুলিশ সেই চক্রের পান্ডা অভিজিৎ সাহা ও তার সহযোগী মৌমিতা দাসকে গ্রেফতার করে। তদন্তকারীদের দাবি, অভিজিৎ-সহ ওই চক্রের আরও চারজন মাথা আছে। মোট কর্মীর সংখ্যা ১২ জন। পুলিশ বাকিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। ধৃতদের বুধবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ৮ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন কৌশলে আর্থিক প্রতারণা করত চক্রটি। এ যেন ঠিক ‘জামতারা’ (দ্বিতীয় সিজ়ন) ওয়েব সিরিজ়ের সানি ও গুড়িয়ার গল্প। তারাও যে ভাবে নতুন নতুন কৌশলে তাদের ‘ক্লায়েন্টদের’ ফাঁসিয়ে আর্থিক প্রতারণা করত, অনেকটা সেই ঢঙে কাজ করত মধ্যমগ্রামের এই দলটি। গুড়িয়া ও তার স্বামী সানি রীতিমতো প্রশিক্ষণ শিবির খুলে নাবালকদের দিয়ে নম্বরের সিরিজ় অনুযায়ী ফোন করিয়ে প্রতারণা করত। তাদের ছিল নিপুণ নেটওয়ার্ক। এই ভাবেই চলত মধ্যমগ্রামের প্রতারণার কারবারও।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, কেউ হয়তো জীবনবিমার কয়েক কিস্তি টাকা দেওয়ার পর আর টাকা দিতে অপারগ। তাঁর হয়তো ৫০ হাজার টাকা বাকি পড়ে গিয়েছে। চক্রের সদস্যরা তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিত, ৫০ হাজারের বদলে ২০ হাজার টাকা দিলেই ফের পলিসি চালু হয়ে যাবে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানিয়েছে, চক্রটি একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করত। দায়িত্ব ভাগ করে কেউ জোগাড় করত টেলিফোন নম্বর, কেউ আবার সংগ্রহ করত নতুন নতুন সিম কার্ড। কারও দায়িত্ব ছিল মানুষকে ফোন করা, কেউ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য বের করত।
তদন্তে জানা গিয়েছে, এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জ়িরো ব্যাল্যান্স। তাঁকে বলা হত, কিছু টাকার বিনিময়ে তাঁর অ্যাকাউন্টে আর্থিক লেনদেন করা হবে। তারপর সেই অ্যাকাউন্টের লেনদেনের বিষয়ে তাঁরা কিছু জানতে পারতেন না। চক্রের সদস্যরা প্রতারিত মানুষদের সেই সব অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে বলত। সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ জানিয়েছে, চক্রের সদস্যরা প্রতারিত মানুষদের পাঠানো টাকা বাগুইআটি, নিউটাউন, কেষ্টপুর এলাকার এটিএম থেকে তুলে নিতে। প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা প্রতারণার হদিস এখনও পর্যন্ত পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)