উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। কেউটিয়ায় সজল চট্টোপাধ্যায়ের ছবি।
চৈত্রের শেষে কালবৈশাখির তাণ্ডবে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু এলাকায় চাষিরা বিপন্ন। উত্তর ২৪ পরগনার শিবদাসপুর, নারায়ণপুর, জেঠিয়া, সর্বত্র ধানজমি দেখলে মনে হচ্ছে তার উপর দিয়ে রোলার চালানো হয়েছে। সব্জির জমি লন্ডভন্ড। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে পাটেরও। সেই সঙ্গে ঝড়-বৃষ্টিতে বহু চাষির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আরও বিপন্ন হয়ে পড়েছেন এই অঞ্চলের মানুষ।
রবিবার বিকালের ঝড় আর শিলাবৃষ্টি এই মরসুমের সব থেকে ভয়ঙ্কর কালবৈশাখি বলে দাবি করেছেন কৃষি আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। এই তাণ্ডব যে খুব শিগগিরই আবারও হতে পারে তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার ঝড়ে ব্যারাকপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় ধান, পাট, আম ও সব্জির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিঘার পর বিঘা আম বাগানে ডাল ভেঙে গাছ উপড়ে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আম চাষিরা। বহু আমগাছ পাতাশূন্য হয়ে গিয়েছে।
গোটা দক্ষিণবঙ্গে মাছের মীন এর বড় ব্যবসার জায়গা নৈহাটি। শিলাবৃষ্টিতে জলাশয়গুলোয় মরা মাছ ভেসে উঠেছে। তুষার মণ্ডল নামে এক মাছচাষি বলেন, ‘‘সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে একটা ভেড়ি ইজারা নিয়েছিলাম। রবিবার বিকালে শিলাবৃষ্টিতে সব মাছ মরে গিয়েছে।’’
নৈহাটির কেউটিয়ায় বৃদ্ধ চাষি নিতাই সরকার বলেন, ‘‘এতদিন চাষবাস করছি, কখনও এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়িনি। গরিব চাষির মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে যাঁরা চাষ করেছিলেন তাঁদের সোজা হয়ে দাঁড়ানোর আর জোর রইল না।’’ বোরো ধানের শিষ উঠেছিল অধিকাংশ জমিতে। পাকতেও শুরু করেছিল কোথাও কোথাও। রবিবারের ঝড়ের পর সেই ধান শুয়ে পড়েছে। উত্তর ২৪ পরগণায় পাট চাষ বেশি হয়। এই এলাকাগুলোয় অনেক পাট চাষিই আগে থেকে বীজ ছড়িয়েছিলেন। হাত খানেক লম্বা গাছ হয়েছিল বহু জমিতে। সুখদেব বিশ্বাস নামে এক চাষি নিজের জমির সামনে দাঁড়িয়ে হতাশ গলায় বলেন, ‘‘জমানো টাকায় কুলালো না বলে ধার করে জমি তৈরি করলাম। সব শেষ হয়ে গেল।’’
ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘বিডিও এবং অন্য আধিকারিকেরা এলাকায় ঘুরে চাষের ক্ষতির তথ্য নিয়ে কৃষি দফতরকে জানাবেন যাতে চাষিরা অন্তত নতুন করে চাষের জন্য কোনও দিশা পান।’’
আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, প্রতি বছর প্রাক বর্ষায় যে বৃষ্টিপাত হয় তার হার ক্রমশ কমছে, যার জেরেই এই ঘূর্ণি ঝড়। তবে আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের মধ্যে অন্তত ১৫ বার কালবৈশাখি হয় স্বাভাবিক নিয়মে। এর মধ্যে মার্চে তিনবার হলেও, পরের দু’মাসে গড়ে ছ’বার করে হওয়ার কথা। কিন্তু বৃষ্টিপাত কম হলে ঝড়ের মাত্রা বাড়তে পারে। এবার সেই সম্ভাবনা প্রবল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy