Advertisement
০৭ অক্টোবর ২০২৪
fashion show

fashion show: নিজেদের তৈরি পোশাকে সেজে ফ্যাশন শো-এ

এদিন এলাকার কয়েক জন দরিদ্র লড়াকু মহিলাকে আমন্ত্রণ করে তাঁদের জীবনযুদ্ধের কথা তাঁদের মুখ থেকেই শোনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

আত্মবিশ্বাসী: মঞ্চে মেয়েরা।

আত্মবিশ্বাসী: মঞ্চে মেয়েরা। ছবি: নবেন্দু ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২১ ০৮:১২
Share: Save:

প্রথমবার মঞ্চে উঠবেন। সংকোচ ছিল, দ্বিধা ছিল। কিন্তু সে সব কিছু ছাপিয়ে গেল রূপালি, সন্ধ্যাদের আত্মবিশ্বাস।

হিঙ্গলগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরা নিজেদের হাতে তৈরি পোশাক পরে ফ্যাশন শো-এ হাঁটলেন। চতুর্থীর বিকেলে হিঙ্গলগঞ্জের ‘মম সুন্দরবন’ নামে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের ফ্যাশন শো-এর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘বোধন’। মণ্ডপে মণ্ডপে যখন দেবী-আরাধনার তোড়জোড় চলছে, সুন্দরবনের প্রান্তিক মেয়েদের ক্ষমতায়নের বার্তা ছড়িয়ে পড়ল সে সময়ে।

কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউটশনের সাংস্কৃতিক মঞ্চে অনুষ্ঠিত ফ্যাশন শো-এ যোগ দিলেন সন্ধ্যা মণ্ডল, রূপালি গিরি, তৃণা মণ্ডল-সহ ১৩ জন। রূপালি কনকনগরের বাসিন্দা। হিঙ্গলগঞ্জ কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেছেন। কিছুদিন হল কনকনগরেই বিয়ে হয়েছে। রূপালি জানান, স্কুল জীবন থেকেই টিভিতে ফ্যাশন শো দেখতেন। গ্ল্যামার জগতের চাকচিক্য চোখ টানত গ্রামের কিশোরীর। কিন্তু নিম্নবিত্ত পরিবারে সে ইচ্ছে কখনও পূরণ হতে পারে, তা মাথাতেও আসেনি।

বছরখানেক আগে ‘মম সুন্দরবন’-এর পথচলা শুরু হয় কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরীর উদ্যোগে। তাতে যুক্ত হন রূপালি। প্রথমে ব্যাগ তৈরির কাজ শেখা দিয়ে শুরু। পরে পোশায় তৈরি শিখতে শুরু করে এখানকার মেয়েরা। এখানার মেয়েদের তৈরি পোশাক তারা নিজেরাই পরে যদি ফ্যাশন শো করে, তবে কেমন হয়— প্রস্তাব দেন পুলক। রূপালি বলেন, ‘‘প্রথমে শুনে বিশ্বাসই করতে পারিনি। তবে দেখলাম, সব হয়েও গেল। স্কুল জীবনের ইচ্ছে পূরণ হল।’’

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তরফে সৌমিতা কয়াল বলেন, ‘‘আমাদের কাজে উৎসাহ পেয়ে এদিন ফ্যাশন শো চলাকালীন হিঙ্গলগঞ্জের বিভিন্ন প্রান্তের ১৪ জন মেয়ে আমাদের গোষ্ঠীতে যুক্ত হতে চেয়েছে। এ ভাবে আমাদের উৎপাদন বাড়লে কিছুদিনের মধ্যে অনলাইন শপিং অ্যাপের মাধ্যমে আমরা বিক্রি শুরু করব। আমাদের পোশাক আমরাই আরও ফ্যাশন শো-এর মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে তুলে ধরব।’’ আত্মবিশ্বাসের সুর সৌমিতার গলায়।

এদিন এলাকার কয়েক জন দরিদ্র লড়াকু মহিলাকে আমন্ত্রণ করে তাঁদের জীবনযুদ্ধের কথা তাঁদের মুখ থেকেই শোনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা মেরুনা মুর্মু, সঙ্গীত শিল্পী রত্না বসু, সিডনির একটি কলেজের শিক্ষিকা অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেকে। তাঁদের বিচারে ফ্যাশন শো-এ প্রথম হয়েছেন সন্ধ্যা মণ্ডল।

অধ্যাপিকা বলেন, ‘‘এই মেয়েদের মধ্যে কাজের প্রতি নিষ্ঠা আছে, দ্রুত বিভিন্ন কাজ রপ্ত করে নিতে পারছে। এদের পাশে আমি সব সময়ে আছি।’’ রত্না জানান, এই মেয়েরা যাতে আরও আধুনিক পোশাক তৈরি করা শিখতে পারে, সে জন্য ফ্যাশন ডিজাইনারদের এনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ দ্রুত করা হবে।’’ পুলকের কথায়, ‘‘গ্রামের মেয়েদের নিয়ে যে কর্মযোগ্য চলছে, তার একটা উদ্দেশ্য যেমন মেয়েদের স্বনির্ভর হতে উৎসাহ দেওয়া, তেমনই নারীপাচার রোধ করা, বাল্যবিবাহ বন্ধ করা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fashion show
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE